শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মে দিবসের বার্তা

আজ পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। দিবসটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে থাকে। সেই ১৮৮৬ সালের পহেলা মে শিকাগোর রাস্তায় সংঘটিত ঘটনা এবং তার জের ধরে পরবর্তী ঘটনাবলি থেকে এই দিবসটির উৎপত্তি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আট ঘণ্টার শ্রমদিবস, মজুরি বৃদ্ধি, কাজের উন্নত পরিবেশ ইত্যাদি দাবিতে ১ মে একটি শ্রমিক সংগঠন শিল্প ধর্মঘটের ডাক দেয়। শাসক ও প্রশাসকরা বর্বর পন্থায় সে ধর্মঘট দমন করে। ৩ মে ধর্মঘটী শ্রমিকরা এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করলে পুলিশ সেখানে গুলীবর্ষণ করে। এতে প্রাণ হারায় ৬ শ্রমিক। এর প্রতিবাদে পরদিন শ্রমিকরা হে মার্কেটে সমাবেশে মিলিত হলে কারখানার মালিকরা সেখানে বোমা হামলা চালায়। এতে নিহত হয় ৪ শ্রমিক। ধর্মঘটে নেতৃত্ব প্রদানের দায়ে অগাস্ট স্পাইস নামে এক শ্রমিক নেতাকে দেয়া হয় ফাঁসির আদেশ। এরপর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কংগ্রেসে শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মত্যাগের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে পহেলা মে ‘শ্রমিক দিবস’ হিসেবে ঘোষিত হয়। তখন থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি।
১৮৮৬ সালের পহেলা মের ঘটনার পর তো কত যুগ পেরিয়ে গেল। কিন্তু এই পৃথিবীতে শ্রমিকদের অধিকার কতটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আমরা যদি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখবো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানাভাবে নানামাত্রায় শ্রমিকরা এখনো শোষিত বঞ্চিত। ন্যূনতম অধিকার প্রতিষ্ঠায় শ্রমিকদের এখনো লড়াই-সংগ্রামে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তবে সংগ্রামের অব্যাহত ধারায় শ্রমিকরা এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা আইএলও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকারসমূহ স্বীকৃতি লাভ করে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) শিল্পে শান্তি ও প্রগতির লক্ষ্যে কতকগুলো নিয়মকানুন প্রণয়ন করে এবং সব দেশের শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহ্বান জানায়। এভাবে আইএলও শ্রমিক ও মালিকদের আধিকার সংরক্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও আইএলও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালায় স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয়, পৃথিবীর কম দেশেই আইএলও প্রণীত নীতিমালা বাস্তবায়িত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কথাও উল্লেখ করা যায়।
বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পের দিকে নজর দিলে উপলব্ধি করা যায়, এখানে শ্রমিকরা কীভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। বঞ্চনার কারণে প্রায়ই গার্মেন্টস শিল্পে ধর্মঘট, জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুরের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। তবে সব গার্মেন্টস শিল্পের চিত্র এক রকম নয়। এখানে বঞ্চনার চিত্র যেমন আছে, তেমনি আছে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার চিত্রও। আর শ্রমিকদের বঞ্চনার জন্য কোন কোন মালিক যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী একশ্রেণীর শ্রমিক নেতাও। আবার দেশের গার্মেন্টস শিল্পের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদেশী ষড়যন্ত্রও। এইসব নানা কারণে দেশের গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক ও মালিকের স্বার্থ বিঘিœত হচ্ছে। শিল্পে শ্রমিক-মালিকের ন্যায্য স্বার্থ প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার ব্যাপারে নানা তত্ত্বের দায়ও কম নয়। পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে এক সময় বিদ্রোহ করা হলো। ব্যক্তি মালিকানাকে অস্বীকার করা হলো। বলা হলো, শ্রমিক শ্রেণী তথা সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার কথা। এর ফল কিন্তু ভাল হলো না। ব্যক্তির মালিকানা অস্বীকার করায় উৎপাদন হ্রাস পেল। আর সর্বহারার একনায়কত্বের নামে প্রতিষ্ঠিত হলো পলিটব্যুরোর একনায়কত্ব। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পরপরই স্বয়ং পলিটব্যুরোর এক সদস্য বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেছিলেন, নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের বদলে আমরা কর্তৃত্বের ছড়ি ঘুরিয়েছি, তাই ফলাফলটা এমন হলো। এইসব ব্যর্থ নানা তত্ত্ব বা মতবাদের বিকল্প হিসেবে ইসলামের নৈতিকতা সমৃদ্ধ ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক মতবাদ গ্রহণ করলে শিল্পে শ্রমিক-মালিক সবার স্বার্থ রক্ষিত হতে পারে। ইসলামে একদিকে ব্যক্তি মালিকানাকে যেমন স্বীকার করা হয়েছে তেমনি শোষণ ও বঞ্চনার পথ বন্ধ করে শিল্পে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে এক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের সম্ভাবনা সৃষ্টি করা হয়েছে। শিল্প-কারখানা-কৃষি সবখানে ইসলামের নীতিমালার আলোকে নৈতিকতা ও ইনসাফের চেতনা রক্ষিত হলে পহেলা মের লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। বিষয়টি উপলব্ধি করলেই সবার মঙ্গল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ