শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

পাঁচ মেয়র প্রার্থীর ইশতেহারে যা থাকছে

খুলনা অফিস : খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন পাঁচ মেয়র প্রার্থী। নিজের দিকে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। সিটির উন্নয়নে প্রার্থীদের বিভিন্ন  প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার ঘোষণা করবেন তারা। এজন্য ইশতেহার তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাঁচ মেয়র প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের ইশতেহারে থাকছে ৩১ দফা। এর আগে তালুকদার আব্দুল খালেক ২০১৩ সালের নির্বাচনে ৩১ দফা ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৮ দফার ইশতেহার দিয়েছিলেন। নতুন ইশতেহারে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হলেও আগের ইশতেহারের সঙ্গে মিল থাকছে। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ইশতেহারে ‘গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি’র স্লোগানসহ ১৯ দফা রাখা হচ্ছে। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঘোষিত ১৯ দফার সঙ্গে মিলি রেখে মহানগরীর সমস্যা-সংকট ও সমাধানের পথ খুঁজবেন তিনি। জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মাদকের ভয়াবহতা ইসলামী অনুশাসনের মাধ্যমেই দূরীকরণের চিন্তা-চেতনা নিয়ে ৮ দফার ইশতেহার দিতে পারেন। এর আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে জাতীয় পাটি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু ১৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ২৫ দফা ইশতেহার ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এ সপ্তাহেই তিনি ইশতেহার ঘোষণা করবেন। সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু নির্বাচনি ইশতেহারে খুলনার বন্ধ মিল-কলকারখানা চালু করাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।
তালুকদার আব্দুল খালেক
সিটির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আগের তুলনায় দ্বিগুণ বরাদ্দ আদায়ের প্রত্যাশায় থাকা আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের ইশতেহারে জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন, মশক নিধন, খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা এবং রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ ৩১ দফা অঙ্গীকার থাকছে, যা প্রায় চূড়ান্ত। ইশতেহারে আরও থাকছে- নাগরিক পরার্মশ সভা, সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্তকরণ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, আইটি ভিলেজ স্থাপন, টাউন সার্ভিস চালু, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, বস্তিবাসীর নিরাপদ পানি প্রাপ্তিতে ওয়াসাকে সহায়তা, কবরস্থান ও শ্মশানঘাটের উন্নয়ন, মাদকমুক্ত নগরী, ট্যাক্স-কর না বাড়িয়ে নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টি, বিনামূল্যে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি, পার্ক-উদ্যান নির্মাণ, সংস্কার ও বনায়ন সৃষ্টি, মেয়র পদক প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত, মেয়র কাপ ফুটবল-ক্রিকেট, ভাষা শহীদ স্মৃতি মিনার নির্মাণ, বধ্যভূমির স্মৃতি সংরক্ষণ, নারী উন্নয়ন, সুইমিং পুল নির্মাণ, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রদান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, নগরীকে দৃষ্টিনন্দন করা, খালিশপুর ও রূপসা শিল্পাঞ্চলের উন্নয়ন, মহানগরীর সম্প্রসারণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘ইশতেহার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতেই নাগরিকের কাছে ইশতেহার তুলে ধরার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইশতেহারে নগরবাসীর উন্নয়ন ও মানুষের প্রাণের দাবিগুলোই স্থান পাচ্ছে।’
নজরুল ইসলাম মঞ্জু
বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ‘গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি’ স্লোগান নিয়ে ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ইশতেহারে থাকবে- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সবুজে ঘেরা মনোরম মহানগরী হিসেবে খুলনাকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা, সিটি করপোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণ, নাগরিক শাসন প্রতিষ্ঠা, অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরামর্শ পরিষদ গঠন, গুণীজনের সম্মাননা প্রদান, শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সহায়ক পরিকল্পনা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্যসেবা, সড়ক উন্নয়ন ও বর্জ্য পানি নিষ্কাশন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক সেবার ক্ষেত্র বৃদ্ধি, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি না করে সেবার মান বাড়ানোর পরিকল্পনা। ইশতেহারে আরও থাকছে-মহানগরীকে শান্তি ও স্বস্তির আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, সড়ক বাতির উন্নয়ন, সড়ক পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধনের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ, কর্পোরেশনের আয়ের উৎস সৃষ্টি, মাদকমুক্ত নগরী, ক্রীড়া, বিনোদন, শরীর চর্চা ও সাঁতার শেখার জন্য আধুনিক সুইমিং পুল নির্মাণ, নাগরিক মর্যাদা ও সম্মান সংরক্ষণসহ সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত একটি আদর্শ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, ইজিবাইকসহ নগরীতে হালকা যানবাহনের সৃষ্ট সমস্যা সমাধান ও লাইসেন্স প্রদান, নাগরিকদের ইচ্ছায় সিটি করপোরেশন পরিচালনা করা, সিটি করপোরেশনের কাজে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সুপেয় খাবার পানির সংকট নিরসনে ওয়াসাকে দিক নির্দেশনা দেয়া, সুশিক্ষা নিশ্চিত করা, সাহিত্য, গণমাধ্যম ক্রীড়াসহ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা ও কৃতিত্বের জন্য যোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান, হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে শিল্প ও কলকারখানা স্থাপনে সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা, হতদরিদ্র-ছিন্নমূল-ভবঘুরে ও ভিখারীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ, নিম্নআয়ের মানুষ ও বস্তিবাসীর উন্নয়ন এবং তাদের চিকিৎসাসহ জীবন-ধারণের সহায়তা পরিকল্পনায় যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কাজ গতিশীল করা; মসজিদ, মন্দির, গির্জা, কবরস্থান ও শ্মশানঘাটের উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে ধর্মীয় শিক্ষার কার্যক্রম সম্প্রসারণ।
এ ব্যাপারে মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ইশতেহারে চমক থাকবে। প্রতীক পেয়ে প্রথম দিনই ইশতেহার ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবেন।
আকাশচুম্বি বা কাল্পনিক কোনও স্বপ্নের অবাস্তব ইশতেহার দিতে চাই না, নগরবাসীর কাঙ্খিত সব কিছুর সারমর্ম হবে আমাদের ইশতেহারটি। বিএনপি কেন সিটি নির্বাচনে অংশ নিলো সে ব্যাখ্যাও ইশতেহারে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হবে।
এস এম শফিকুর রহমান
জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর ইশতেহারে নগরবাসীর কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত ও তা সমাধানের পরিকল্পনা থাকছে। এ ইশতেহারে মাদকমুক্ত নগর গড়ার প্রত্যয় থাকছে। এ জন্য তিনি ইসলামী অনুশাসন সৃষ্টির পক্ষে অবস্থান নিতে আগ্রহী।
এ ব্যাপারে এস এম শফিকুর রহমান বলেন, ‘নগরীর অন্যতম সমস্যা যানজট। ব্যস্ততম সড়কগুলো প্রশস্ত করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে খুলনাকে গড়ে তোলা, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, খালিশপুর ও রূপসা শিল্পাঞ্চলকে ইপিজেড ঘোষণায় কাজ করার পরিকল্পনা থাকছে ইশতেহারে।
মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর ২৫ দফা ইশতেহারে থাকছে নগরবাসীর ট্যাক্স বৃদ্ধি না করে স্থায়ী মার্কেট ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও কেসিসি’র আয়ের উৎস বৃদ্ধি, নাগরিক সমস্যা সমাধানের কার্যকর পরিকল্পনা, দুর্নীতির মূল উৎপাটন, যানজট নিরসনে সড়কগুলো প্রশস্তকরণ, নগর উন্নয়ন কমিটি গঠন, মিল কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা ও শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে পদক্ষেপ, ভেজালমুক্ত খাদ্য পরিবেশন ও ইনসাফপূর্ণ বাজার নিয়ন্ত্রণে কেসিসি’র কার্যকর মনিটরিং সেল গঠন, বাসা ভাড়া সহনশীল করার লক্ষ্যে বাড়ির মালিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০ শতাংশ কমানো, মশক নিধন, পরিচ্ছন্ন নগরী গড়া, নারীর মর্যাদা রক্ষার্থে ও যুবক সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা ও ইভটিজিং মুক্তকরণে অভিযান, সংখ্যালঘুদের ন্যায্য অধিকার প্রদানে বিশেষ সহযোগিতা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতিত হলে তাৎক্ষণিক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক বলেন, ‘মহানগরবাসীর সংকট-সমস্যা সমাধানে খাদেম হতে চাই। নগরপিতা বা মেয়র নয়। নগরবাসীর সেবক হতে চাই।’
মিজানুর রহমান বাবু
সিপিবি-বাসদ ও বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু নির্বাচনি ইশতিহারে খুলনার বন্ধ মিল কলকারখানা চালু করাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে মাস্টারপ্লান করার পরিকল্পনা থাকছে। ইশতিহারে রূপসা শিল্পাঞ্চলের বিএমসি, দাদা ম্যাচ, খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিল চালু ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, মশক নিধন, হকার পুনর্বাসন, সড়ক বাতি আধুনিকায়ন, ময়লা আবর্জনা দ্রুত অপসারণ, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি না করার প্রতিশ্রুতি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ