শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

যেখানে মেসি এগিয়ে রোনালদোর চেয়ে

লিওনেল মেসি তার ক্লাব ক্যারিয়ারে আরো একটি শিরোপা জয় করলেন। তবে একটি দিকে ঠিকই টপকে গেলেন প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদো। মেসি জিতেছেন ২৩টি ট্রফি আর রোনালদো ১৫টি। রোনালদো রিয়ালে আসার পর মোট ১৫টি শিরোপা জিতেছেন, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ টি শিরোপা জিতেছেন মেসি। তবে তর্কটা চলছে, চলবে। এমনকি তাঁরা দুজন অবসর নেওয়ার পরও থামবে না। কে সেরা? লিওনেল মেসি না ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদো? এ প্রশ্নের নিখুঁত কোনো জবাব নেই। তবে পরিসংখ্যান থেকে একটা ধারণা মিলতে পারে। স্পেনে মেসি-রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হওয়ার পর শিরোপা সাফল্য, এই পরিসংখ্যানে রোনালদো পিছিয়ে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে পা রাখেন ২০০৯ সালে। এই নয় বছরে ৩৬টি শিরোপা জয়ের সুযোগ পেয়েছেন পর্তুগীজ তারকা। কিন্তু জিততে পেরেছেন ১৫টি শিরোপা (এবারের লা লিগা জিততে পারছেন না তা ধরে নিয়ে)। এই একই সময়ে মেসি বার্সার হয়ে জিতেছেন ২৩টি শিরোপা। অর্থাৎ স্পেনে মেসির সঙ্গে শিরোপা দৌড়ে রোনালদো পিছিয়ে ৮ ট্রফি ব্যবধানে। তবে এই মৌসুমেই শিরোপার সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন দুই চিরপ্রতিদ্বন্ধী। বার্সার তো লা লিগা জেতা প্রায় নিশ্চিত। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে রিয়াল। এই নয় মৌসুমে শিরোপাসংখ্যা ‘১৬’ বানাতে টুর্নামেন্টটির সেমিফাইনাল বাধা উতরে ফাইনাল জিততে হবে রিয়ালকে। এই নয় মৌসুমে লা লিগা শিরোপা জয়েও মেসির তুলনায় রোনালদো প্রমাণ ব্যবধানে পিছিয়ে। রিয়ালের হয়ে এ পর্যন্ত দুই মৌসুমে (১১-১২, ১৬-১৭) লা লিগা জিতেছেন রোনালদো। মেসি এই একই সময়ে লা লিগা জিতেছেন পাঁচবার। একটু ভুল হলো, ষষ্ঠ শিরোপাটা তো এবার দৃশ্যত জিতেই আছেন! তবে ইউরোপ সেরার মঞ্চে (চ্যাম্পিয়নস লিগ) এই নয় মৌসুমে মেসি তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে পিছিয়ে। বার্সার হয়ে দুইবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন মেসি। রোনালদো জিতেছেন তিনবার। ২০০৯ সাল থেকে কোপা ডেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে আবার মেসি এগিয়ে। এ দুটি আসর পাঁচবার করে জিতেছেন বার্সা ফরোয়ার্ড। রোনালদো জিতেছেন দুইবার করে। এ ছাড়া দুজনেই তিনবার করে জিতেছেন ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ও ইউরোপিয়ান সুপার কাপ। টানা চতুর্থ আর রেকর্ড ৩০টি শিরোপা এখন বার্সেলোনার। স্প্যানিশ কোপা ডেল রে’র শিরোপা ‘ঘরোয়া’ বানিয়ে ফেলেছে বার্সেলোনা। এই আসরটিকে এখন কাতালানদের পৈত্রিক সম্পত্তি বললেও হয়তো বাড়িয়ে বলা হবে না। টানা চতুর্থসহ রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩০তম শিরোপা জিতে সে স্বাক্ষরই রেখেছে দলটি। ১১৬তম আসরের ফাইনালে সেভিয়াকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার দল। ১৯৮০ সালের পর কোপা ডেল রে ফাইনালে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় এটি। সেবার রিয়াল মাদ্রিদ শিরোপা জিতেছিল ৬-১ গোলের ব্যবধানে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপালিটানোতে প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির একটি ও লুইস সুয়ারেজের দুই গোলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও ফিলিপ কুটিনহোর আরও দুই গোলে সেভিয়ার বড় হার নিশ্চিত হয়। ২০১৪ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ সর্বশেষ কোপা ডেল রে’র শিরোপা জয় করে। এরপর হওয়া চারটি আসরেই ট্রফি নিজেদের শোকেসে ভরেছে কাতালান জায়ান্টরা। অবাক করা বিষয় হলো, কোপাতে ট্রফি জয়ে বার্সার আশেপাশেই নেই কোন দল। বার্সার ৩০তম শিরোপার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩বার ট্্রফি জিতেছে অ্যাথলেটিক বিলবাও। বিলবাও সর্বশেষ ট্রফি জিতেছে সেই ১৯৮৪ সালে। আর বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল ট্রফি জিতেছে মাত্র ১৯বার। পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে কোপা ডেল রে’তে অপ্রতিরোধ্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোন। গত পাঁচ বছরে প্রতিটি ফাইনালেই খেলে বার্সেলোন। ম্যাচ শেষে মেসি-সুয়ারেজরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরা কিংবা হাই ফাইভ দিয়ে শিরোপা উদযাপন করলেও সবার মনেই ডিপোর্টিভো লা করুনার বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে চিন্তা। কারণ ম্যাচটি জিততে পারলে লা লিগার শিরোপাও নিশ্চিত হবে বার্সার। সেই সঙ্গে ঘরোয়া মৌসুমে ডাবল শিরোপাও ঘরে আসবে। এবারের লীগ শিরোপাটি হতে পারে বার্সেলোনার জন্য একটু অন্যরকম। প্রথম দল হিসেবে লা লিগায় অপরাজিত থেকে শিরোপা নিশ্চিতের হাতছানি এখন মেসিদের সামনে। আর এটা করতে পারলেই কেবল এএস রোমার কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে বিদায়ের হতাশা কিছুটা হলেও কাটবে। ম্যাচ শুরুর ১৪ মিনিটেই সিলিসেনের লম্বা পাস থেকে কুটিনহো সেভিয়ার রক্ষণভাগে নিজেকে ফাঁকা পেয়ে শেষ মুহূর্তে সুয়ারেজের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। পাস থেকে বার্সাকে এগিয়ে দেন সুয়ারেজ। এরপর অবশ্য কিছুক্ষণের জন্য সেভিয়াই ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করে। জেসাস নাভাসের ক্রস থেকে সেভিয়ার তিনজন খেলোয়াড়ের কেউই বল ধরতে পারেননি। ফ্র্যাংকো ভাসকুয়েজের হেড গোলের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। এরপর ম্যাচের ৩১ মিনিটে ইনিয়েস্তার শট বারে লাগার পরপরই ফিরতি বলে জর্ডি আলবার ব্যাক হিলে মেসি দলের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। বিতর্কিত অফসাইডের কারণে মেসির দ্বিতীয় গোলটি বাতিল হয়ে যায়। যদিও ৪১ মিনিটে উরুগুয়ের তারকা সুয়ারেজ আর কোন ভুল করেননি। তবে এই ফাইনালে নিজেকে আলাদা করেছেন ইনিয়েস্তা। স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার ছোট্ট একটি গ্রামের আঙুর চাষি পরিবারের ছেলে থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার হয়ে ওঠা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ক্যারিয়ারের বিদায়ঘণ্টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষের সরকারি ভাষ্য, আগামী সপ্তাহে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন মাঝমাঠের এই জাদুকর। তবে নির্মম সত্যিটা হচ্ছে, ১২ বছর বয়স থেকে যে ক্লাবের সঙ্গে তাঁর জুড়ে যাওয়া, সেই সুতাটা কাটা পড়ছে খুব তাড়াতাড়ি। কোপা দেল রে’র ফাইনালটাই ছিল কাতালানদের হয়ে ইনিয়েস্তার শেষ ফাইনাল, যে ম্যাচে সতীর্থরা তাঁকে উপহার দিয়েছেন মূল দলে এক যুগের পেশাদারি ক্লাব ক্যারিয়ারের ৩১তম শিরোপা। সেভিয়ার বিপক্ষে ৫-০ গোলের জয়ে ইনিয়েস্তা নিজেও করেছেন ম্যাচের চতুর্থ গোলটি। প্রথমার্ধে একবার তাঁর ভলি লেগেছিল পোস্টে। ৮৮ মিনিটে যখন কোচ তাঁকে তুলে নিলেন, তখন গোটা স্টেডিয়ামের দর্শকরা দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন সম্মান। অধিনায়ক হিসেবে যখন ট্রফিটা নিতে এলেন তখনো হর্ষধ্বনি। বার্সেলোনার নান্দনিক ও সুন্দর ফুটবলের অন্যতম কুশীলব ইনিয়েস্তা। কিশোর বয়সে, গ্রামে সেভেন-এ-সাইড ফুটবল খেলার সময় বার্সার স্কাউটের চোখে পড়ে যায় ‘ডন ব্যালন’ এর নৈপুণ্য। বাবা-মাকে রাজি করিয়ে নিয়ে আসেন লা মাসিয়ায়, বার্সার আঁতুড়ঘরে। সেখান থেকে আর বাড়ি ফেরা হয়নি ইনিয়েস্তার। বার্সেলোনা ‘বি’ দল হয়ে মূল দলে জায়গা করে নেওয়ার পর চোট ছাড়া তাঁকে বাদ দেওয়ার সুযোগ খুব একটা হয়নি। বার্সেলোনার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড ইনিয়েস্তার। ৩১টি শিরোপা এরই মধ্যে জেতা হয়ে গেছে, লিগ শেষ হতে হতে সংখ্যাটা বেড়ে ৩২টি হয়ে যাবে। আর হয়তো মেসির সাথে মাঠে নামা হবেনা এই প্লেমকারের।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ