শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করার পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানের বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান। তিনি বলেন, “বারিধারার জে ব্লকের বাসা থেকে আসামী ওয়াহিদুল হককে গুলশান থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।আজ বুধবার তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।”
ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, প্রসিকিউশনের আবেদনে বিচারপতি আমির হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইবুনাল সকালে ওই আসামীর বিরুদ্ধে  গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওয়াহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য। ১৯৭৪ সালের  ডিসেম্বরে দেশে ফিরে দুই বছর পর তিনি পুলিশে যোগ দেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্ব পান এবং এরপর গত শতকের শেষ দিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হন।
তুরিন বলেন, “পাকিস্তান আর্মির সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হত্যা, গণহত্যা চালিয়েছিলেন আসামী মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক। মানবতাবিরোধী আর কোন কোন অপরাধের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল, সেটি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
পাকিস্তান আর্মির সাবেক সদস্য হিসেবে তাকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, “দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তালিকাভুক্ত করা হয়। সে অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু হয়। তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী। তদন্ত কাজকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ফলে তদন্তের স্বার্থেই তাকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন ছিল।”
১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাঁচ থেকে ছয়শ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালের ওপর মেশিনগানের গুলী চালিয়ে হত্যা ছাড়াও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সঙ্গে আসামী ওয়াহিদুল হকের জড়িত থাকার তথ্য এসেছে তদন্তে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, “আসামীর বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। বারিধারার যে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটিই তার বর্তমান ঠিকানা।”
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে কমিশন পান। পরে তাকে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে বদলি করা হয়।১৯৭০ সালের মার্চে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনা নিবাসে স্থানান্তরিত হলে ওয়াহিদুল হকও সেখানে চলে আসেন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ওই রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট ছিলেন তিনি। ওই বছরই তিনি বদলি হয়ে আবার পাকিস্তানে (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফেরেন ওয়াহিদুল হক। ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর তাকে বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ওয়াহিদুল। পরের বছর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পাকিস্তান আমলের এই সেনা সদস্য। এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ওয়াহিদুল হককে পরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই দায়িত্ব শেষে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ