মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শব্দদূষণে বাড়ছে অসুস্থতার মাত্রা

দূষণ কখনো মানুষের কাম্য হতে পারে না। আর মানুষতো শব্দদূষণ কিংবা পরিবেশ দূষণের মধ্যে বসবাস করার জন্য সমাজবদ্ধ হয়নি। কিন্তু আমাদের সমাজ যেন এখন মানুষের আকাঙ্খার বিপরীতে চলতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আকাঙ্খার বিপরীতে কারা চলছে, কেন চলছে? এই উল্টো যাত্রায় অজ্ঞতা, স্বার্থপরতা, দম্ভ কিংবা ক্ষমতার দাপট কতটা দায়ী? এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা হতে পারে। তবে প্রশ্ন জাগেÑ দেশে সরকার আছে, প্রশাসন আছে; তারপরও নাগরিকরা নানা দূষণে পীড়িত হবে কেন? এখানে আরও বলার মতো বিষয় হলো, অন্য গ্রহ থেকে কোন এলিয়ন এসে কিন্তু মানুষকে পীড়িত করছে না; মানুষকে পীড়িত করছে অপরাধপ্রবণ কিছু মানুষই। এ কারণেই বারবার উঠে আসছে যথাযথ আইন এবং তার সঙ্গত প্রয়োগের কথা।

‘শব্দদূষণে অসুস্থ শহর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। ৭ এপ্রিলে মুদ্রিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় দিয়ে যাতায়াত করছে শত শত যানবাহন। কার আগে কে যাবে এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে চালকরা বাজিয়ে চলেছেন বিকট শব্দে হর্ন। রাস্তার দুই পাশে হাসপাতালের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে ‘সামনে হাসপাতাল, হর্ন বাজাবেন না’। কিন্তু এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই চালকদের। শুধু শাহবাগ নয়, পুরো রাজধানীর চিত্রই এটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শব্দদূষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। শব্দদূষণের মাত্রা স্থানভেদে কেমন হবে সে ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে সংস্থাটির। তাদের হিসাব অনুযায়ী কোন এলাকায় ৬০ ডেসিবল মাত্রার বেশি শব্দ হলে তা দূষণের আওতায় পড়বে। অফিসকক্ষ ও শ্রেণীকক্ষে শব্দের মাত্রা ৩০-৪০ ডেসিবল, হাসপাতাল এলাকায় ২০-৩৫ ডেসিবল, রেস্তোরাঁয় ৪০-৬০ ডেসিবল শব্দমাত্রা সহনীয়। ৬০ ডেসিবলের বেশি শব্দে মানুষের শ্রবণশক্তি সাময়িক নষ্ট হতে পারে। ১০০ ডেসিবল শব্দে মানুষ চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষ আক্রান্ত হয় বিভিন্ন ধরনের ব্যধিতে। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করলে ব্যস্ত জায়গায় শব্দ মাত্রা সর্বোচ্চ ৬০-৭০ ডেসিবল থাকতে হবে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময় গবেষণা করে দেখেছিÑ ঢাকার ফার্মগেট, শাহবাগ, মিরপুর, পল্টন, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, গাবতলী, মহাখালীর মতো ব্যস্ত এলাকায় শব্দের মাত্রা সবসময় ৯০-১০০ এর বেশি থাকে। আর এ শব্দদূষণের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি কমে যাচ্ছে। এছাড়া আক্রান্ত হচ্ছে পেটের আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ নানা রোগে। যারা বেশি সময় ধরে অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকেন তাদের আচরণ হয় সাংঘর্ষিক এবং মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে উপলব্ধি করা যায়, শব্দ দূষণ মানুষের জন্য কতটা মারাত্মক। এ কারণেই হয়তো পত্রিকায় শিরোনাম করা হয়েছে ‘শব্দদূষণে অসুস্থ শহর’। মানুষতো অসুস্থ হতে রাজধানীতে আসেনি। মানুষ রাজধানীতে এসেছে কাজ করতে এবং তারা ট্যাক্সও প্রদান করছে। তাই শব্দদূষণসহ বিভিন্ন দূষণ থেকে নাগরিকদের রক্ষা করা প্রশাসন ও সরকারের দায়িত্ব। তারা এ দায়িত্ব কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ