শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ঢাকায় পানির সঙ্কট নেই কিছু সমস্যা আছে!

শুষ্ক মওসুম ও আসন্ন রমজানে রাজধানীতে পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ বিষয়ে ওয়াসা ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচারক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীতে পানির সঙ্কট নেই, তবে কোনো কোনো এলাকায় পানির সমস্যা আছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, যে সব এলাকায় পানির সংকট বলে প্রচার করা হচ্ছে আসলে সেটি নয়। সে সব এলাকাতে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা ওয়াসা ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে আসন্ন শুষ্ক মওসুমে পানি সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য, পানির দাবিতে প্রতিদিনই রাজধানীর অনেক এলাকায় বিক্ষোভ হচ্ছে। রাতভর অপেক্ষা করেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগে প্রকাশ।
সাংবাদিক সম্মেলনে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান, ওয়াসার উপদেষ্টা এ কে এম সাহিদ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে জানানো হয় রাজধানীর সবগুলো জোনে গ্রাহক সমস্যা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি রোধে কল সেন্টার ওয়াসা লিংক ১৬১৬২ চালু আছে। অভিযোগ শোনার পরপরই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয় বলে তিনি জানান।
ওয়াসা এমডি বলেন, কিছু কিছু এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এটা ২ থেকে ৫ শতাংশ, এর জন্য বলা যাবে না পানির সঙ্কট আছে। ঢাকা শহরে পানির খুব সমস্যা নেই। কিছু পকেট সমস্যা (কয়েকটি পয়েন্টে) রয়েছে। আর সেই পকেট সমস্যা মোকাবেলা করার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি মানুষ বসবাস করছে। প্রতিদিনি আমাদের পানির চাহিদা ২৪০ থেকে ২৪৫ কোটি লিটার। আমরা এর অতিরিক্ত পানি উৎপাদন করছি। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জেনারেটর সমস্যা, পানির লেয়ার নীচে নেমে যাওয়ার কারণে মাঝে মাঝে পানি সরবরাহে সমস্যা হয়। এটা পানি সংকট বলা যাবে না। তিনি জানান, সাভারের ভাকুর্তা ওয়েকফিল্ড থেকে আগামী দুই মাসের মধ্যে পানি আসা শুরু করলে মিরপুরের দিকের পানি সমস্যা থাকবে না। দক্ষিণ কোরয়িার অর্থায়নে বাস্তবায়িত এই প্রকল্প থেকে দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, পদ্মা জশলদিয়া পানি শোধানাগার থেকে আগামী ডিসেম্বর থেকে পানি আসা শুরু করবে। এটি চালু হলে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে। এতে করে ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে পানি সংগ্রহ কিছুটা কমে যাবে। চীন সরকার এই প্রকল্পে সহায়তা করছে।
এদিকে মেঘনা নদী থেকে পানি আনার যে প্রকল্প রয়েছে তা বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে। তার কারণ হিসেবে তাকসিম এ খান বলেন, বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলো বলছে, মেঘনার পানিতে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। আমরা সেগুলো ঠিক করার কাজ করছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি নগরীতে সরবরাহ করা যাবে।
ওয়াসার এমডি জানান, ২০২১ কে সামনে রেখে ওয়াসা ৭০ ভাগ পানি ভূ-পরিস্থ থেকে আর ৩০ ভাগ মাটির নীচ থেকে সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছে। যদিও বর্তমানে ৭০ শতাংশের বেশী পানি ৮১০টি গভীর নলকুপের মাধ্যমে মাটরি নীচ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি জানান, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প, ফেজ-৩ প্রকল্প বাস্তবায়ন হল এখান থেকেও দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি নগরীতে সরবরাহ করা যাবে। তিনি জানান, ২০ শতাংশ পানি নদী থেকে আসছে। বাকি পানি এখনো ভূগর্ভ থেকে তোলা হয়। নদী থেকে পানি ৭০ শতাংশ আনা গেলে পানি নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। এই কাজ দ্রুত করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে।
এদিকে আসন্ন রমজান ও শুষ্ক মওসুমে নগরীতে পানি সমস্যা থাকবে না এমন দাবি করে তাকসিম এ খান বলেন, রমজান মাসে পানি সমস্যা থাকে না। এ মাসে ওয়াসার পক্ষ থেকে বাড়তি তদারকির কথা জানান তিনি। ওয়াসার এমডি বলেন, ইফতার ও সেহরীর সময় জনসমাগম স্থানে ট্রলি ও ভ্যান গাড়িতে কওে বিশেষ ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ করা হবে। রাজধানীর মসজিদগুলোতে পাপনি সরবরাহ নিশ্চিৎ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে। মডস জোনে পানির পাম্প মনিটরিংয়ে ১১টি ভিজিলেন্স টিম বিদ্যমান থাকবে।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিয়েও সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলেন ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, মূলত তিনটি কারণই পানিবদ্ধতার জন্য যথেস্ট। সেগুলো হচ্ছে, প্রথমত: বৃষ্টি পানি ধরে রাখার জন্য ১২ শতাংশ জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু রাজধানীতে যেসব পুকুর, ডোবা, খাল বিল ছিল সেগুলো এখন আর নেই। সবই দখলে চলে গেছে। পানি ধওে রাখার জন্য বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশ জায়গা রয়েছে। দ্বিতীয়ত: ঢাকা শহরে এখন মাটি পাওয়া দুষ্কও হয়ে পড়েছে। কোথাও খালি জায়গা নেই। পুরো রাজধানীটাই ইট আর কনক্রিটে ঢাকা। বৃষ্টির পানি যে প্রকুতিগতভাবে মাটির নীচে যাবে তা সম্ভব নয়। ফলে পানি সরতে পারেনা। এবং শহরের যে নিন্মাঞ্চলগুলো ছিল সেগুলো এখন আর নেই। প্রভাবশালীরা সেগুলো ভরাট করে অবৈধ বসতি গড়ে তুলেছে। ফলে বৃষ্টির পাসি সরতে না পেওে লোকালয়ে ডুড়ে পড়ে। এতে পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। তিনি জানান, অল্প বৃষ্টি হলে সমস্যা নেই। কিন্তু যখন একটানা ৫০ মিলি মিটার বৃষ্টি হবে তখন কারোরই কিছু করার থাকেনা। তিনি আগামী বর্ষা মওসুমেও রাজধানীতে পানিবদ্ধতা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াসার এমডি বলেন, এক সময় রাজধানীতে ৬৫টি খাল ছিল। এখন মাত্র ২৬টি খাল বিদ্যমান। অন্য খালগুলো কোথাও গেলো, তা দেখার কেউই নেই। তিনি বলেন, খাল দখলমুক্ত করার পর আবারো দখল হচ্ছে এটি ঠিক। কিন্তু কারা দখলে রাখছে সেটি দেখার বিষয়। আমাদের সেখানে কিছুই করার থাকেনা। তবে আমরা আমাদেও ক্ষমতার মধ্যে যা দরকা তাই করছি। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে ২৬টি খালের পাড় বাঁধাই করার দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়। প্রথমে ৮টি, এরপর ৫টি মোট ১৩টি খালের পাড় বাঁধানো হয়। খালের পাড় বাঁধানোর কাজ শেষ না করলে উচ্ছেদ করে কোন লাভ হবে না। আর খাল দখল যারা করছেন তারা অনেক উপর মহলের লোক।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যভস্থা যে কোন একটি সংস্থার উপরই ন্যায্য থাকা উচিত। একাধিক সংস্থা জড়িত থাকায় ঠিক মতো তদারিক হয়না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শান্তি পানির বোতল ব্যবসার উদ্দেশ্যে করা হয়নি। এটি মূলত কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং অন্যদের সাথে দামের প্রার্থক্য বুঝানোর জন্য বের করা হচ্ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ