শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনায় চলছে ‘দোষারোপের খেলা’

সংগ্রাম ডেস্ক : রাম নবমীর র‌্যালি থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় এ পর্যন্ত ৫ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম ক্যাচ নিউজ। পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হওয়ার পর পারস্পরিক দোষারোপের খেলায় মেতেছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিহারের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের একজন মন্ত্রীপুত্রের সংশ্লিষ্টতার আলামত মিলেছে। কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল বিজেপি ও রাজ্য সরকারের দায়িত্বে থাকা জনতা দলকে (সমন্বিত) দায়ী করছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তেজনায় তৃণমূল কংগ্রেস আর বিজেপি পরস্পরকে দোষারোপ করছে ঘটনার জন্য। দোষারোপের খেলায় রয়েছে কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি আর সিপিএম-ও।
হিন্দু দেবতা রামের জন্ম বার্ষিকী উদযাপনের রাম নবমীর র‌্যালি থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দাঙ্গার কবলে পড়ে বিহারের ভাগলপুর, ঔরঙ্গাবাদ, মুঙ্গের, নালন্দা, শেখপুরা এবং জামুই এর আঁচ এসে লাগে পশ্চিমবঙ্গের রানীগঞ্জ ও আসানসোলে। দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত ৫ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ অহির এ ঘটনায় বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দুষছেন। তিনি দাবি করেছেন, ওই দুই রাজ্যের সরকারের দায়িত্ব ছিল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। পশ্চিমবঙ্গ সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দায়ী করেছেন বিজেপি-তৃণমূল উভয় দলকেই। তিনি দাবি করেছেন, ওই দুই দল ভোটারদের কাছে টানতে ‘প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা’র লড়াইয়ে নেমেছে।
বহুজন সমাজ পার্টির নেতা মায়াবতী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দ্বৈতনীতির অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, বিজেপি তাদের নিজেদের দলের দ্বারা শাসিত রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে একরকম আর অন্য রাজনৈতিক দলের শাসিত রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে আরেক রকম অবস্থান নেয়।
পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, রাম নবমী উপলক্ষে ১৭ মার্চ ভাগলপুর শহরে ‘ভারতীয় নববর্ষ জাগরণ সমিতি নামে এক সংগঠনের এক মিছিল থেকে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। রাম নবমী পালনের নামে ওই মিছিলের অনুমতি নেওয়া হলেও মুসলিম অধ্যূষিত স্থানগুলোতে ওই মিছিল থেকে সাম্প্রদায়িক উসকানি ছড়ানো হচ্ছিলো। মোটরবাইক মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবের ছেলে অরিজিৎ শাশ্বত। ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিহারের এক টিভি চ্যানেলের প্রবীণ সাংবাদিক কুন্দন সিং বলেছেন, ‘‘মন্ত্রীর ছেলের উসকানিমূলক ভাষণের পর থেকেই হিংসা শুরু হয়েছিল”
বিহারের ঘটনায় সেখানে ক্ষমতাসীন জনতা দলকেই (সমন্বিত)দায়ী করছে বিরোধীরা লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও কংগ্রেসের অভিযোগ  রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের ব্যর্থতার কারণেই সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না মুখ্যমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের পক্ষে তেজস্বী যাদব সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী চৌবের ছেলে অরিজিৎ শাশ্বত চৌবেকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন
কংগ্রেস বলছে, বর্তমান সরকারের ছায়াতলে বিহারে বিজেপির আধিপত্য বাড়ছে। তারা বলছে, মুখ্যমন্ত্রী তাদের কাছে যেন অসহায়। আর মায়াবতীর অভিযোগ, ‘‘রামনবমী পালনে মিছিল ঘিরে যারা হিংসা ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়ায় পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে টার্গেট করা হচ্ছে অথচ বিহারে একই ধরনের ঘটনায় সরকার এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর থেকে জানা গেছে, শাশ্বতের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া অস্ত্রসহ মিছিল ও সভা করার অভিযোগে মামলা হয়েছে বৃহস্পতিবার সমস্তিপুরে দীনেশ ঝা ও মোহন পাটবা-সহ মোট ১০ জন বিজেপি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ