তাজমহলে তিন ঘণ্টার বেশি অবস্থান নয়
৩০ মার্চ, বিবিসির : ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ তাজমহল দর্শনে এবার নতুন নিয়ম চালু করেছে ভারতের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই। ১ এপ্রিল থেকে তাজমহলে কোনো পর্যটক বা দর্শনার্থী ৩ ঘণ্টার বেশি থাকতে পারবেন না। বৃহস্পতিবার এএসআইয়ের জারি করা নির্দেশিকায় এমনটি বলা হয়েছে। মানবদূষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য এই নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এএসআই। আগে তাজমহল দর্শনের জন্য কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট ছিল না। পর্যটকেরা সারা দিন তাজমহল দর্শন করতে পারতেন। এবার সেই সময়ের ওপর রাশ টেনেছে কর্তৃপক্ষ।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তিন ঘণ্টার বেশি কেউ অবস্থান করলে তাঁকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। এ জন্য দর্শনার্থীদের সময়সীমা দেখার জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে অতিরিক্ত কর্মী।
প্রতিদিন তাজমহল খোলা হবে সূর্যোদয়ের ৩০ মিনিট আগে। বন্ধ হবে সূর্যাস্তের ৩০ মিনিট আগে। শুক্রবার বন্ধ থাকে তাজমহল। ওই দিন শুধু নামাজ পড়ার জন্য নামাজিদের জন্য খোলা হয় তাজমহলের ফটক। ১৫ বছরের কমবয়সী দেশি ও বিদেশি কোনো পর্যটকের টিকিট লাগে না। তাজমহল দর্শনের জন্য ভারতীয়দের ৪০ রুপির টিকিট কাটতে হবে। আর বিদেশিদের ১০০০ রুপির। তবে সার্ক দেশের পর্যটকদের জন্য এই টিকিটের হার ৫৩০ রুপি। তাজমহলের তিনটি ফটকের কাউন্টারে টিকিট মিলবে সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা আগে থেকে সূর্যাস্তের ৪৫ মিনিট আগ পর্যন্ত। বিদেশি ও সার্ক দেশের পর্যটকদের প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র নিয়ে প্রবেশ করতে হবে তাজমহলে। আগ্রার তাজমহলে হিন্দুদের ‘রামলীলা’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত, ভারতজুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে! ভারতে মুঘল আমলে নির্মিত আইকনিক স্থাপত্য তাজমহলের প্রাঙ্গণে সে রাজ্যের সরকার ‘রামলীলা’ অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে। তাজমহলকে ঘিরে প্রতি বছর যে ‘তাজ মহোৎসব’ আয়োজন করা হয়ে থাকে, উত্তরপ্রদেশ সরকারের পর্যটন বিভাগ স্থির করেছে এবারে তার উদ্বোধন হবে হিন্দুদের ভগবান রামের জীবনগাথা-নির্ভর নৃত্যগীতের মধ্যে দিয়ে। ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিরোধী দলগুলো এর সমালোচনায় সরব হয়েছে, অনেক ঐতিহাসিকও বলছেন এটা তাজমহলের ঐতিহ্যকে জোর করে অস্বীকার করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। প্রতি বছর শীতের শেষ দিকে আগ্রা মেতে ওঠে তাজ মহোৎসবকে ঘিরে - যেটা মূলত ভারতের সবচেয়ে বড় পর্যটক আকর্ষণকে কেন্দ্র করে এক সাংস্কৃতিক উৎসব, আর পাশাপাশি মুঘল সংস্কৃতির উদযাপনও বটে। কিন্তু সেই রেওয়াজ ভেঙে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবার রামলীলা আর রাম-বন্দনাকেই তাজ মহোৎসবের মূল থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আর রাজ্যপাল তথা সাবেক বিজেপি নেতা রাম নায়েক দুজনেই থাকছেন সেই মহোৎসবের উদ্বোধনে।
বিজেপি এমপি সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর বক্তব্য, ‘রামলীলার মাধ্যমে তাজমহলকে মোটেই অবমাননা করা হচ্ছে না। তাজমহলের বিশাল প্রাঙ্গণে উৎসব আয়োজন সহজ বলেই ওই জায়গাটাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’ ‘আর আমরা বিশ্বাস করি ভারতে হিন্দু ও মুসলিমদের ডিএনএ একই, আমরা একই পরিবারের - কাজেই এখানে মেরুকরণের প্রশ্নও আসে না।’ তবে ঐতিহাসিক পুষ্পেশ পন্থ আবার বলছেন, তাজমহল ভারতীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ - আর এক-আধটা রামলীলা সেই ছবিটা মোটেও পাল্টাতে পারবে না। প্রফেসর পন্থের কথায়, ‘শুধু স্কুলের পাঠ্যপুস্তকেই নয় - ভারতে যে বাচ্চাটি কখনও স্কুলে যায়নি সেও জানে তাজমহলের ঐতিহ্যটা কী। ফলে প্রতিবার যখন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হয়, আমার মনে হয় না তাতে প্রতিক্রিয়া দেখানোর দরকার আছে বলে। আমি বিশ্বাস করি না রাজনীতিকরা এভাবে ইতিহাসের ন্যারেটিভ বদলাতে পারবেন।’