শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শিক্ষকের ভূমিকা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

“শিশু হলো উদ্যানের চারাগাছ। শিক্ষক হলেন তার মালী। শিক্ষকের কাজ হলো সযত্নে চারাগাছটিকে বড় করে তোলা। শিশুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৎ ও সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা শিক্ষকের কর্তব্য”। (ফ্রেডরিক ফ্রয়েবেল)
চিনের প্রাচীন নেতা কনফুসিয়াস বলেছেন-“শিক্ষক হবেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উৎস। তিনি হবেন একজন আদর্শ শাসক”।
শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। শিক্ষক হলো তার সুনিপুণ কারিগর। শিক্ষা ছাড়া আলোকিত মানুষ সৃষ্টি কোনভাবেই সম্ভব নয়। একজন শিক্ষকের কিছু কাজ ও দায়বদ্ধতা আছে। এ কাজ ও দায়বদ্ধতা সহকর্মীদের কাছে, সমাজের কাছে, দেশ ও জাতির কাছে, আগামী প্রজম্মের কাছে। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। শিক্ষক শুধু সফল নয়, একজন ভালো মানুষ হতে শেখান। মানবিক বিপর্যয় বা বৈশ্বিক, অর্থনৈতিক সংকটে আক্রান্ত হয়েও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিনির্মাণে শিক্ষকরা অবিরাম ভূমিকা রেখে চলেছেন। শিক্ষক হচ্ছেন সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও।
শিক্ষকের গুরুত্ব
মানুষকে আলোকিত করেন : শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষা প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে এগিয়ে নেয়ায় অনুপ্রেরণাদানকারী ব্যক্তি। জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের অংশগ্রহণ মানুষকে আলোকিত হতে সাহায্য করে। কোনো বিষয় চর্চা বা অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষক ধারণা ও জ্ঞান অর্জন করে এবং ঐ জ্ঞানের জ্যোতির দ্বারা নিজে আলোকিত হতে ও সমাজকে জ্যোর্তিময় করতে সহায়তা করে। শিক্ষকের ইতিবাচক ভূমিকার কারণেই শিক্ষার্থীর মন-মনন, মানসিক উৎকর্ষ সাধন হয়, আচার আচরণ, মন ও আত্মার ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন ঘটে, মেজাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রভাব ফেলে।
সুন্দর সমাজ তৈরি করেন : শিক্ষক সভ্যতার অভিভাবক, সমাজের অভিভাবক। কার্যত শিক্ষক বলতে একজন আলোকিত, জ্ঞানী-গুণী ও বুদ্ধিদীপ্ত পন্ডিত ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি সভ্যতার বিবর্তনের অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিক্ষা দিতে-নিতে নিবেদিতপ্রাণ সেবক, ব্যবসায়ী নন। তিনি তাঁর আচার-আচরণ, মন ও মননে নিজেই বটবৃক্ষের প্রতীক। তাঁর সাফল্যের ভিত্তি হল পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, নির্মল চারিত্রিক গুণাবলি, জ্ঞান সঞ্চারণে আন্তরিক সদিচ্ছা ও প্রচেষ্টা। তাই শিক্ষক বলতে এমন এক অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ববান জ্ঞানী, গুণী ও পন্ডিত ব্যক্তিকে বোঝায়; যিনি শিক্ষার্থীকে শিখন প্রক্রিয়ায়, জ্ঞান অন্বেষণ ও আহরণে, মেধা বিকাশ ও উন্নয়নে, শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠনে, নৈতিক ও মানসিক গুণাবলি অর্জনে এবং সমাজ বিবর্তনে অনুঘটক ও সুশীল সমাজ তৈরির সহায়তা দানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চূড়ান্ত কল্যাণের পথে পরিচালিত করেন : আদর্শ শিক্ষক মানুষকে চূড়ান্ত কল্যাণের পথে পরিচালিত করেন। সুষ্ঠু ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে এসব শিক্ষককে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। শিক্ষককে কাছ থেকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে আলোকিত অঙ্গনে প্রবেশ করে। শিক্ষকই একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানবৃক্ষকে তৈরি ও সমৃদ্ধ করে। এ কারণে একজন শিক্ষকের উচিত ছাত্রদেরকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সে অনুপাতে কাজ করা।
সুশিক্ষিত ও উন্নত জাতি গঠন করেন : মানুষ গড়ার কারিগর একজন শিক্ষকই পারেন একটি সুশিক্ষিত ও উন্নত জাতি গঠন করতে। শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব, আদর্শ ও মানবিক মূল্যবোধ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে একজন শিক্ষার্থীর উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। পিতা-মাতা সন্তান জন্ম দিলেও শিক্ষকই তাকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। একজন শিক্ষকই পারেন শিশুর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে জাতির উন্নয়নে নিযুক্ত করতে। তার চিন্তা-চেতনা ও মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন একজন শিক্ষক। সন্তানের কাছে তার পিতা-মাতা যেমন আদর্শ ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তেমনি একজন শিক্ষকও তার ব্যক্তিত্ব, আদর্শ ও কর্মের গুণে শিক্ষার্থীর কাছে আদর্শ ও অনুকরণীয় হয়ে ওঠেন।
মানুষের প্রতিভার বিকাশ ঘটান : শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মানুষের প্রতিভার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন শিক্ষক। আর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করেন বলেই শিক্ষকেরা সবার কাছে সম্মানীত। 
মহৎ পেশা, বৃহৎ সেবা : শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে অন্য সকল পেশার জননী বলা হয়। সেটি শিক্ষার যেকোনো স্তরেই হোক না কেন। হতে পারে সেটি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কিংবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। দল-মত, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে একজন শিক্ষক সমাজের সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিখন প্রক্রিয়া উন্নয়ন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ বিনির্মাণে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (সূত্র- ইন্টারনেট)
প্রেক্ষিত : বাংলাদেশ
সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মুল্যবোধ সৃষ্টির জন্য শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা এই তিনটির সাথে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। শিক্ষকতা হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীন পেশাগুলোর একটি। তবে বর্তমান সময়ে কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের দ্বারা এই মহান পেশাটি কলুষিত হচ্ছে।বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। শিক্ষকদের মূল্যবোধ নিয়েও দেখা দিয়েছেন নানা প্রশ্ন।
কিছু শিক্ষক বেশী আলোচিত হচ্ছেন তাদের কর্মকা-ের জন্য। শিক্ষক সমাজ আজ প্রাইভেট-কোচিং ব্যবসাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীরা যৌণ হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। অযোগ্য ব্যক্তিরা রাজনৈতিক পরিচয়ে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাচ্ছেন। সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও আলোকিত ব্যক্তিরা শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছেন না। শিক্ষকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে দলাদলি, গ্রুপিং-লবিং, কোন্দল, অতিমাত্রায় দলীয় রাজনীতির চর্চা ও আনুগত্য। পদ পাওয়ার লোভে শিক্ষক সমাজ আজ ছুটছেন দলীয় নেতার পিছনে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষা ব্যবস্থাকে করছে ধ্বংস। কয়েকদিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাঁরা জাতি গঠনে ভূমিকা রাখার কথা, সেই শিক্ষকেরা যদি এই রকম নিকৃষ্ট কাজের সাথে জড়িত থাকেন তাহলে এর চেয়ে হতাশাব্যঞ্জক আর কী হতে পারে ? কয়েকজনের জন্য এই কলঙ্কটা পুরো শিক্ষক সমাজের উপর পড়েছে। আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশার সাথে নিজেদেরকে জড়াতে রাজি নন।সবার ইচ্ছা বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার। আর শিক্ষকেরা নিজেদেরকে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করছেন এবং টাকা উপার্জনের বিকল্প পন্থা বের করছেন।
সাধারণভাবেই বলা যায়, আদর্শ শিক্ষক তিনিই, যিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকবেন, নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকবেন, ছাত্রছাত্রীদের প্রতি স্নেহ ও দায়িত্বশীল হবেন, পড়ানোর পূর্বে পাঠ সম্পর্কে অবগত হবেন, পাঠ্যের বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে যার পড়াশোনা থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ শিক্ষকের কাছে না পড়ানোটাই ফ্যাশন, ক্লাসে দেরি করে উপস্থিত হওয়াটা রীতি, ছাত্রছাত্রীদের থেকে দূরে থাকাটাই সার্থকতা।
শিক্ষকদের করণীয়
সমাজের প্রত্যাশা মোতাবেক একজন শিক্ষক হবেন জ্ঞান তাপস, মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত, ব্যক্তিত্ববান, চৌকস, শ্রেণি কক্ষে আগ্রহী পাঠদানকারী ও জ্ঞান বিতরণে আন্তরিক। তিনি সুবিচারক, সুপরীক্ষক, শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রক, যুক্তিবাদী, গবেষক এবং উদ্ভাবকও। তিনি সঠিক পথের দিশারী, পথ প্রদর্শক। অবশ্যই সৎ ও ধার্মিক। শিক্ষক সহজ হবেন, সরল হবেন, নির্মল হবেন, হবেন অকুতোভয় সত্যবাদী। সপ্রতিভ ব্যক্তিত্ববান, সমাজ হিতৈষী, পরোপকারী এবং আধুনিকতামনস্ক বিচক্ষণ সমাজ সংস্কারক।
শিক্ষক হবেন চারিত্রিক দৃঢ়তাসম্পন্ন, পরিশ্রমী, নিরপেক্ষ, হাস্যোজ্জ্বল, সুপরামর্শক ও প্রাণবন্ত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে পাঠবুঝিয়ে দিলেই শিক্ষকের দায়িত্ব শেষ নয়, পাঠ্যবিষয়ের বাইরে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষার্থীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ অর্থে বিদ্যালয়কে ‘সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয়’।
একজন শিক্ষক শুধুই শিক্ষক নন তিনি একজন প্রশিক্ষকও বটে। শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কোন বিষয় বুঝিয়ে দেন বা শিখিয়ে দেন তখন তিনি শিক্ষক; যখন সৃজনশীলতা, সততা, দক্ষতা, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, শিষ্টাচার, দেশপ্রেম, নেতৃত্ব, কষ্টসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্রীমনষ্কতা ও পরমতসহিষ্ণুতা ইত্যাদি সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন তখন ঐ শিক্ষকই একজন প্রশিক্ষক। এ জন্য বোধ হয় আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট তার পুত্রের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখেছিলেন- ‘..তাকে শেখাবেন পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান। .....আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেন না, কেননা আগুনে পুড়ে ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তানের যেন অধৈর্য হওয়ার সাহস না থাকে’।
ি শিক্ষক মূল্যবোধ বিনির্মাণের আদর্শ কারিগর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যবোধ চর্চার অনন্য কারখানা। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে সমাজকে করতে পারে আলোকিত ও উদ্ভাসিত। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীকে মূল্যবোধের পরীক্ষা দিতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। পাশ্চাতের স্টাইলে গড়ে উঠছে সমাজ ব্যবস্থা। নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদক যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। মূল্যবোধের চরম সংকট মূহুর্তে দেশের শিক্ষক সমাজকে শ্রেণীকক্ষসহ সমাজ ও রাষ্ট্রে মূল্যবোধ বিকাশের জন্যে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুণেধরা মূল্যবোধকে শিক্ষক সমাজই আবার জাগিয়ে তুলতে পারেন। ছাত্র-ছাত্রী, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রধান কর্ণধারের ভূমিকা পালন করতে হবে শিক্ষক সমাজকেই। শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধে সৃষ্টি করে প্রকারান্তরে সমাজ ও দেশকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে পারেন।
সিমাজে যে সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষা ও মূল্যবোধ বিকাশে ভূমিকা রাখবেন তাদেরকেও সেমানের হতে হবে। একমাত্র আদর্শ শিক্ষকই পারেন শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতার বিকাশ ঘটাতে। শিক্ষাই আলো, শিক্ষা ছাড়া সকল পথ বা মত অন্ধকার। নৈতিক শিক্ষাই জাতির একমাত্র পাথেয়। জ্ঞানতাপস ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- ‘যার মধ্যে ইসলামের জ্ঞান নেই সে যত বড় শিক্ষিতই হউক না কেন; সেতো মূর্খ পন্ডিত’। নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষক ও শিক্ষাই পারে একজন মানুষকে সঠিক ও সুন্দর পথ দেখাতে। এজন্যই প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে প্রকৃত খোদাভীরু, আদর্শ ও নৈতিকতাধারী শিক্ষকের বিকল্প নেই।
শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক দুঃখ, ব্যথা, প্রয়োজন ও অসহায় অবস্থার কথা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করবেন এবং এই গুলোর উৎকর্ষ সাধনে ব্রতী হবেন এটাই শ্বাভাবিক। দার্শনিক প্লেটোর মতে, “শিক্ষক হবেন ভাববাদী চিন্তার প্রত্যক্ষ ফসল, শিক্ষার মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করবেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলো শিক্ষকের দায়িত্ব।”
শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের থাকবে অগাধ ভালোবাসা ও সহানুভূতি। সব শিক্ষার্থীকে তিনি ভালোবাসবেন। তাঁর ভালোবাসার স্পর্শ থেকে কোন শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবেন না। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে পাপ থেকে পরিত্রাণ করে জাগতিক কল্যাণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন।
এিকজন শিক্ষককে মনেপ্রাণে শিক্ষক হতে হবে। যিনি তাঁর পেশাকে ভালোবাসেন তিনি হবেন সৎ, নিষ্ঠাবান, ন্যায়পরায়ণ, সংবেদনশীল ও মানবিক। তাঁকে তাঁর দায়িত্ব কর্তব্যের প্রতি হতে হবে আন্তরিক।
এছাড়া দেশের সামগ্রিক স্বার্থে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারেও যথার্থ ভূমিকা পালন করবেন।
একজন শিক্ষককে এ সত্যটি উপলব্ধি করতে হবে যে, শিক্ষক-শক্ষার্থীর সমন্বয়ে গঠিত পাঠদানই প্রকৃত অর্থে একটি সুশিক্ষিত জাতি গঠন করতে পারে। সুশিক্ষার মাধ্যমেই মানব জীবনের সামগ্রিক উৎকর্ষতা অর্জন করা সম্ভব। সুশিক্ষার মাধ্যমেই জীবনকে খুঁজে পাওয়া যায়।
শিক্ষকগণ যেহেতু জ্ঞান আহরণ, লালন, অনুশীলন ও বিতরণে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন সেহেতু তিনি হবেন চিন্তা- চেতনায়, মেধামননে সম্পূর্ণ সৎ, নিরপেক্ষ, সহনশীল ও অগ্রগামী। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং শিক্ষক শিক্ষার মেরুদন্ড।
দেশের সচেতন মানুষ এমনসব শিক্ষক পেতে চায়, যাদের শিক্ষক সুলভ আচরণ ও স্পর্শে শিক্ষাঙ্গনে সৃষ্টি হবে প্রকৃত শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ। রচিত হবে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে। ফলে সুগম হবে সুশিক্ষা অর্জনের পথ।
শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পুষ্টি শারীরিক ও মানসিক গঠন এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়ে শিক্ষার্থীকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে হবে।
শিক্ষকতাকে চ্যালেঞ্জিং পেশা ও জবাবদিহিতার মানদণ্ডে আনতে হবে।
শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীর পরমবন্ধু, উপযুক্ত পথ প্রদর্শক এবং বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ দার্শনিক। কোন কঠিন বিষয়কে সহজভাবে ছাত্রদের সামনে উপস্থাপন করা শিক্ষকের একটা বড়গুণ। শিক্ষার্থীর উপর সাধ্যের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করা; শিশুকে তার ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী পাঠদান করানোসহ নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি ছাত্র/ছাত্রীদের সবার সাথে সমান আচরণ করতে হবে।
আিদর্শ মানুষ তৈরি, আদর্শ নাগরিক তৈরি; যার লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীর দেহ, মন ও আত্মার পূর্ণ বিকাশ সাধন করা। নিজেকে সত্য ও সঠিক পথে চলার যোগ্য করে তোলার পাশাপাশি নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য প্রস্তুত করতে হবে এবং ছাত্র/ছাত্রীদেরও বলতে হবে। একজন আদর্শ শিক্ষকই জাতির মেধা গড়ার কারিগর। তাই তাকে হতে হবে আর দশটি মানুষের তুলনায় সেরা।
এিকজন আদর্শ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য হবে- ছাত্র-ছাত্রীদের যেকোনো সমস্যায় ভালোভাবে বোঝানোর ক্ষমতা বা দক্ষতা। সব ধরনের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া। ছাত্র-ছাত্রীদের সত্যের পথে চালিত করা। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আত্মিক বন্ধন তৈরি করা। আনন্দের সাথে পড়ানো, যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ায় মনোযোগী হয়। শিক্ষাক্রম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা। উপস্থাপনের দক্ষতা। পরিবর্তনশীল মনোভাব। মিষ্টভাষী ও সদালাপী হওয়া। কথায় ও কাজে, পোশাক ও রুচিতে, পেশায় ও কর্তব্য পালনে শিক্ষক হবেন আদর্শবান, ধর্মপ্রাণ, সত্যপ্রিয় অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। (ইন্টারনেট অবলম্বনে) (চলবে)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ