শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিদেশীর ওপর হামলার ঘটনায় তোলপাড়

ইবরাহীম খলিল : রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক বিদেশী নাগরিকের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই বিদেশী নাগরিকের নাম সন্তোষকুমাল সেইসিওয়াল। তিনি বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি মেডিকেলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে দেওয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকেন। সেইসঙ্গে হামলাকারী এস.আর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী (আমদানি রফতানি ও সরবরাহকারী) শামিমুর রহমান মিয়াজি বিদেশ থেকে জনশক্তি আমদানিকারক। এই ঘটনায় রমনা থানায় মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর-৩৫। ওই বিদেশী নাগরিকের অভিযোগ বিবাদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
মামলার বাদী সন্তোষ কুমার অভিযোগ করেছেন, হামলার ঘটনায় মামলা হওয়ার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গ্রেফতার করা হয়নি কোন আসামী। উল্টো হামলাকারীরা জীবননাশ ও বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। এই ঘটনায় সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেলে পড়ুয়া বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেক্রেটারি মো. মুহিন উদ্দিন হামলার ঘটনা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা নেই। এরপরও হামলাকারী শামীমুর তাদের মেডিকেলের এজেন্ট হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেক্রেটারি মো. মুহিন উদ্দিনের সামনে হামলার শিকার হন নেপালি নাগরিক সন্তোষ কুমার। মেডিকেলের মত নিরাপদ স্থানে এমন হামলার ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়ে মেডিকেলটিতে পড়ুয়া বিদেশী শিক্ষার্থীরা। হামলার ঘটনার সময় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা তথা সিসি টিভিতে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দৈনিক সংগ্রামের কাছে এসেছে এবং সংরক্ষিত রয়েছে। তাতে হামলার সত্যতা পাওয়া গেছে। মামলার এজাহারে ঘটনাস্থল অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে দেখানো হয়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে কয়েকজন যুবক হাসপাতালের গেইট দিয়ে প্রবেশ করছে। এর কিছুক্ষণ পরই আরেকজন যুবককে নিয়ে টানা হেঁচড়া করছে। এসময় চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা তাঁতী লীগ করেন বলে ফেইসবুক দেখে নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগী বিদেশী নাগরিক।
রমনা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে ভিকটিম সন্তোষকুমার অভিযোগ করেছেন, বিবাদী শামিমুর রহমান নিয়াজি,পিতা ওয়াহিদুর রহমান, মাতা সামসুন্নাহার, সাং- পুলিশ হাসপাতাল কোয়ার্টার, ৪র্থ তলা এর কাছে তার ১৮ হাজার ডলার পাওনা রয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে তিনটায় তিনি ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে আসেন। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে আনুমানিক বিকাল ৪টার সময় শামীমের নেতৃত্বে ৮/১০ জন পিছন দিক থেকে এসে তাকে মারধর করে গুরুতর জখম করে, পরিহিত জামা কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে এবং মানি ব্যাগ থেকে ৫ হাজার ডলার নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ০১৮১২৫০২৪৫৫ নম্বর থেকে ফোন করে তাকে মেরে ফেলার ও বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। দৈনিক সংগ্রামের কাছে আসা মামলার বিবাদি শামীমুর রহমান নিয়াজির ভিজিটিং কার্ডে তার অফিসের ঠিকানা রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে এস আর ইন্টারন্যাশনাল, ৪২ নম্বর পল্টন শপিং কমপ্লেক্স (আন্ডার গ্রাউন্ড), কমিউনিটি সেন্টার, নয়া পল্টন ঢাকা।
এবিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার উপ-পরিদর্শক রফিক জানান, মামলার তদন্ত চলছে। এরমধ্যে আদালতের জিম্মায় মামলার এক নম্বর আসামী বর্তমানে জামিনে আছেন। অন্যদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। বাকী  ব্যবস্থা নেওয়া হবে মেডিকেল সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পর। মেডিকেল সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
আলাপকালে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেক্রেটারি মো. মুহিন উদ্দিন অকপটে তার সামনে হামলার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের সঙ্গে কোন লেনদেন নাই তাই অ্যাকশন নেইনি। কিন্তু একজন বিদেশী নাগরিক আপনার সামনে হামলার শিকার হলো এমন প্রশ্নে তিনি জানান আমরা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে ভিডিওফুটেজ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। এছাড়া হামলাকারীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। তার কাছ থেকে আমরা আর স্টুডেন্ট নেবো না।
এদিকে হামলার শিকার সন্তোষ কুমার মঙ্গলবার রাতে দৈনিক সংগ্রামকে জানান, তার ওপর হামলা করা হয়েছে। কিন্তু হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কোন আলামত তারা দেখতে পাননি। হামলার পর পরই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনা যাতে কোনভাবেই জানাজানি না হয় সেজন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কৌশলে থানায় গিয়ে মামলা করেছি। মামলা তদন্তকাজেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করা তার পক্ষে ঝুঁকিপূর্র্ণ এবং তার বন্ধুরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বাংলাদেশে ছাত্র প্রদানকারী অন্য এজেন্ট ও বিদেশী শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে বলে একাধিক শিক্ষার্থী সংগ্রামকে জানিয়েছেন।
সন্তোষ কুমার আরও জানান, তার ওপর হামলার কথা বিভিন্ন দূতাবাসসহ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে তারা বাংলাদেশে ছাত্র এনে দেওয়া বন্ধ করে দেবেন বলেও জানান।
এদিকে গতকাল দৈনিক সংগ্রামের পক্ষ থেকে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে বিদেশী নাগরিকের ওপর হামলা বিষয়টি তদন্ত শুরু হওয়ার পর শামীমুর রহমান নিয়াজীর পক্ষ থেকে নেপালি নাগরিক সন্তোষ কুমারের সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ