শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

লোড শেডিং ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার জন্য শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার : লোড শেডিং ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার জন্য শিল্প উৎপাদন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকা- মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে লোড শেডিং এর ফলে শিল্প খাতে বছরে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হচ্ছে এবং এ কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ০.৫% কম হচ্ছে। এটা অনুমান করা হয় যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার বাৎসরিক মূল্য ২৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতূল্য। সুতরাং, উপযুক্ত অবকাঠামো এবং কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ-আইসিসিবি ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, টেকসই এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জরুরি। বাংলাদেশে পার ক্যাপিটা বিদ্যুতের ব্যবহার ৪৩৩ কিলোওয়াট, এই হার বিশ্বে সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭২ সালে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ স্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন  ক্ষমতা ১৬,০৪৬ মেগাওয়াট, এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ৬০০ মেগাওয়াট।
এতে বলা হয়, ২০১৫-এ প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যান (PSMP) ২০১৫ অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ৫৭,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আছে। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ কয়লা ভিত্তিক, ৩৫ শতাংশ গ্যাস এবং এলএনজি ভিত্তিক ও অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার (৫ শতাংশ), আমদানিকৃত তেল (৫ শতাংশ) এবং রিনিউএবেল এনার্জি (২০ শতাংশ)-র মাধ্যমে উৎপাদিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 
এতে আরো বলা হয়, সরকার ১৫,০০০ মেগাওয়াট এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাৎসরিক ৭ মিলিয়ন টন (1000 MCFD)এলএনজি আমদানির জন্য বেসরকারি খাতের মালিকদের সাথে ইতোমধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।  
২০৪১ সালের মধ্যে ২২,০০০ মেগাওয়াট আমদানিকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ এগিয়ে চলছে, এ জন্য বছরে ৬৬ মিলিয়ন টন কয়লার প্রয়োজন হবে। সরকার মটরবাড়ীতে বাৎসরিক ৪০ মিলিয়ন টন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা ট্রান্সফার টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া, রূপপুরে ১,২০০ মেগাওয়াট নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ৩০ নবেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। 
এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তরের জিলাগুলোর পাঁচটি কয়লাক্ষেত্রে ৩ বিলিয়ন টন উন্নত মানের কয়লা মজুত থাকা সত্ত্বেও সরকার কয়লা আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এবং এনার্জি বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা “open-pit” মাইনিং এর জন্য সমর্থন দিয়েছে, যেহেতু এ প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি কম এবং খরচ কম। কিন্তুএ পদ্ধতির বিরোধিতাকারীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অগ্রসর হচ্ছে না।
এতে আরো বলা হয়, কয়লা উত্তলনের ক্ষেত্রে ফান্ড সীমিতকরণের প্রতিশ্রুতি থাকলেও চায়না, ইন্ডিয়া, জাপান, ফিলিপিনস এবং ভিয়েতনামসহ অন্যান্য এশিয়ান দেশসমূহ তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য ক্রমশ কয়লার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্ব কয়লা এসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে বর্তমানে চায়না, ইন্ডিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া ৭১ শতাংশ বিশ্বের নতুন আবিষ্কৃত কয়লা পোড়াচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়, প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে এবং স্থানীয় কয়লা উত্তলনে বড় ধরনের কোন উদ্যোগ না নেয়ার কারণে টেকসই স্থানীয় প্রাথমিক এনার্জির উৎসে পৌঁছানো ক্রমেই দুরূহ হয়ে যাচ্ছে। একটি প্রাক্কলন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে আমদানিকৃত জ্বালানির উপর ৯২ শতাংশ নির্ভরশীল হয়ে পড়বে যদি স্থানীয় কয়লা অনুসন্ধান করা না যায় এবং কাজে লাগানো না যায়।
এতে আরো বলা হয়, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যকর এবং সাশ্রয়ী হবে যদি আমদানিকৃত কয়লার পরিবর্তে স্থানীয় উচ্চমান সম্পন্ন কয়লা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং বিদ্যুৎ খাতকে অর্থনীতির মেরুদন্ড, টেকসই এবং উজ্জীবিত করতে হলে আগামী পাঁচ (৫) বছরের মধ্যে সর্বোতভাবে কয়লার বাণিজ্যিক অনুসন্ধানে বাংলাদেশকে যেতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ