বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহুলা বাড়ির স্মৃতিচিহ্ন

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) : ষোলোশ’ শতাব্দীর প্রাচীন লোককাহিনীর কিংবদন্তি নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর জন্মস্থান বৃহত্তর চলনবিলের তাড়াশের তত্কালীন নিচানীনগর, বর্তমানে বিনসাড়া গ্রামে। এখানে বেহুলার বাড়ি এবং জীয়নকূপ এখনো ইতিহাসের স্মৃতি বহন করে চলেছে।
বগুড়ার গোকূলে যুগের পর যুগ পাড়ি দিয়ে বেহুলার টিকে থাকা বাসরঘর আমাদের স্মৃতিতে নাড়া দিলেও হারিয়ে যেতে বসেছে তার পৈতৃক ভিটার স্মৃতিচিহ্ন। দেশের বেশিরভাগ মানুষের এখনো অজানা যে, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের ঐতিহাসিক এক জমিদারের কন্যা বিশ্বনন্দিত বেহুলা। বেহুলার পিতার নাম বাছোবানিয়া ওরফে সায় সওদাগর।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স.ম. আব্দুল জলিল বেহুলার কূপ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে এক জনসভা করে ২৫ মণ গম বরাদ্দ করেন। একই সঙ্গে সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রী জ্ঞানেন্দ্র চক্রবর্তী এক টন চাল অনুদান দেন।
এসব অর্থ দ্বারা প্রথমবার ১৯৮৭ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০১৪ সালে শরীফ রায়হান কবির উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন বিনসাড়া বেহুলা বাড়ির একমাত্র জীয়নকূপটি উপজেলা প্রশাসন সংস্কারের মাধ্যমে দর্শনীয় করা হলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবারো এর সৌন্দর্য বিনষ্ট হতে বসেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কূপের প্রবেশ মুখের সঙ্গে স্থানীয় ইউনুছ প্রামাণিক নামের এক ব্যক্তি ঝুপরি ঘর তুলে চা বিক্রি করছেন। ফলে ব্যাহত হচ্ছে এর সৌন্দর্য।
আগাছা আর বাঁশঝাড়ে ঢেকে গেছে চারপাশ। সংস্কারের সময় কূপের মুখ লোহার গ্রীল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলেও ভেতরে তাকালে অল্প পানির সঙ্গে চোখে পড়ে ময়লার স্তূপ। এ সময় প্রতিবেশী বাড়িগুলোতে দেখা মেলে বেহুলা বাড়ির আশ-পাশে মাটি খননের সময় পাওয়া আশ্চর্য রকমের পুতুল, কলস, জগ, ঘটি ও  থালা-বাসন।
বিভিন্ন লেখনী থেকে জানা যায়, বেহুলার পিতা সায় সওদাগারের সময় প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর চান্দেরবাজার লাগতো তাড়াশের বস্তুল গ্রামে। এখন স্কুল-কলেজ, ভূমি অফিস, হাট-বাজার, দালান-কোটা, বসতবাড়ি গড়ে উঠছে চান্দেরবাজার বস্তুলে। তাড়াশ উপজেলার মধ্যে বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল মৌজায় খাসজমির পরিমাণ ৫১১ বিঘা। এর মধ্যে ৭২ বিঘা জমিতে আশ্রয়ণ, আবাসন এবং আদর্শ গ্রাম প্রকল্প তৈরি করা হলেও বাকি খাস জমিগুলো একশ্রেণির প্রভাবশালী দখল করে নিয়েছে।
বগুড়ার গোকূলে ঐতিহাসিক বেহুলা লক্ষীন্দরের লোহার বাসরঘর পর্যটকমনা মানুষকে আকৃষ্ট করলেও ভুলে যেতে বসেছেন কুমারী বেহুলার জন্মস্থানের ইতিহাস। বেহুলা বাড়ির এখনো বিদ্যমান জীয়নকূপ এবং কূপের কয়েক গজ দূরেই মাটির নৌকা আকৃতির একটি স্থান, বেহুলার খারী, বটবৃক্ষ আঙিনা, মহল পুস্করণিসহ আরো কিছু স্মৃতিচিহ্ন। তবে সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বগুড়ার মহাস্থানগড়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েও কালের আবর্তে আজ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে মানুষের মন থেকে সিরাজগঞ্জ তাড়াশের ঐতিহাসিক বেহুলার বাড়ি।
বারুহাস ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. মুস্তাগীর কবির বলেন, এসএ রেকর্ডে বেহুলাবাড়ি বা সায় সওদাগরের নামে কোনো জায়গা-জমি খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে সিএস রেকর্ডে এর সন্ধান করা যেতে পারে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মনসূর উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সহকারী ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে একাধিকবার এসব খাস জমির তথ্য চাওয়া হয়েছে। হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার  এস এম ফেরদৌস ইসলাম  বলেন, শীঘ্রই বেহুলা বাড়ির বিষয়টি এডিপির সভায় তুলে ধরা হবে। উপজেলা পরিষদ থেকে অনুমোদন পাওয়া মাত্রই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসবের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ