মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ব্যাংক লুটেরা দখল করে নিয়েছে সরকার ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে রাষ্ট্র

স্টাফ রিপোর্টার : কৃষক হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্তম্ভ বা পিলার। এ পিলার ধ্বংসকারী ভূমিদস্যুদের হাতেই চলে গেছে রাষ্ট্র। জাতীয় সংসদের বড় অংশই রয়েছে ভূমিদস্যুদের দখলে। ব্যাংক লুটেরা দখল করে নিয়েছে সরকার। আর ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে রাষ্ট্র।
 গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন-এর জরুরি গুরুত্ব ও খাদ্য যোগানের নিশ্চয়তা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা এতে সভাপতিত্ব করেন।
সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, গ্রামের দুর্বল মানুষের ওপর ভূমিদস্যুতা বেশি হয়। দুর্বলের জমি নিয়ে মামলা হয়। সেই মামলা এমনভাবে করা হয় দরিদ্র মানুষগুলো হাইকোর্ট পর্যন্ত আসতে সাহস পায় না। ফলে বাধ্য হয়ে ভূমিদস্যুদের কাছে সীমিত টাকায় জমি বিক্রি করে দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে নীতিমালা হয়, কিন্তু আইন হয় না। গরিব মানুষদের ১০ টাকা কেজি চাল দেয়া হয় প্রোগ্রামভিত্তিক। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার কোন আইন নেই। খাদ্য নিরাপত্তা আইন হলে আমরা বলতে পারব আমাদের কি পরিমাণ খাদ্য দরকার।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কোনো স্থানীয় সরকার নেই। উপজেলার মধ্যে দু-তিনটা পৌরসভা বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ওখানে কৃষি জমি অকৃষিতে পরিণত হচ্ছে। আমাদের ইলেকশন ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। চেয়ারম্যান, মেম্বার কৃষকদের মধ্য থেকে নির্বাচন করতে হবে।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, দেশ বাঁচিয়ে রেখেছে নারী, শ্রমিক, কৃষক ও কৃষকের সন্তনরা। যারা দেশ বাঁচিয়ে রেখেছে তাদেরকেই নিঃশেষ করে ফেলা হচ্ছে। রাষ্ট্র বেহাত হয়ে গেছে, মুক্তিযুদ্ধ বেহাত হয়ে গেছে। ব্যাংক লুটেরা দখল করে নিয়েছে সরকার, ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে রাষ্ট্র। কৃষক ধ্বংসকারীদের একটি বড় অংশই সংসদে। অথচ কৃষকরাই হলো রাষ্ট্রের পিলার বা স্তম্ভ, যাদের ওপর দেশটা দাঁড়িয়ে আছে। যারা রাষ্ট্রের পিলার তাদের ধ্বংসকারীদের হাতে চলে গেছে রাষ্ট্র।
তিনি বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের পরিসংখ্যান নিয়ে দেখে গেছে, মধ্যবিত্তের সংখ্যা ১০ শতাংশ না। ৯০ শতাংশই কৃষক ও কৃষকের সন্তান। এ কৃষকদের রক্ষা করতে হবে। এজন্য কৃষক ও আদিবাসীদের একটি প্লাটফর্ম দরকার। সেই সঙ্গে এরজন্য একটি রাজনৈতিক ছাতা দরকার।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ভূ-প্রকৃতির যে বৈশিষ্ট তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উন্নয়ন করতে গেলে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির সঙ্গে জাপান, সিঙ্গাপুর মিলবে না। সুতরাং বাংলাদেশের উন্নয় পরিকল্পনা করতে হবে নিজস্ব ভূ-প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে।
তিনি বলেন, আমাদের নদী কয়টা আছে, সেই পরিসংখ্যানই নির্ধারণ করা সম্ভাব হয়নি। এক এক স্থানে এক এক রকম তথ্য। উত্তরবঙ্গে ৮০টার মতো নদী আছে। এ নদীগুলোর অর্ধেক দখল হয়ে গেছে। নদী খালে পরিণত হয়েছে।
গ্রীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, কৃষি জমি উজাড় করে অপরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন করা হলে এক সময় দেখা যাবে টাকা আছে, কিন্তু খাদ্য নেই। আমার প্রচুর টাকা আছে, কিন্তু খাবার পাব না, আস্তে আস্তে আমরা সেই দিকেই যাচ্ছি।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সহ-সভাপতি তবারক হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদের দখল নিয়েছে ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুরা। আমরা জানি, কতজন সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। ভূমিদস্যুরাও সংসদে আছে। এএলআরডির পক্ষে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিক আহমেদ সিরাজী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের তথ্যের ভিত্তিতে তিনি জানান, ২০০০ থেকে ২০১১ এই ১২ বছরে দেশে প্রতি বছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। আর প্রতি বছর আবাসন খাতে ৩০ হাজার ৮০৯ হেক্টর, নগর ও শিল্পাঞ্চলে চার হাজার ১২ হেক্টর এবং মাছ চাষে তিন হাজার ২১৬ হেক্টর জমি যুক্ত হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের ২০০৩ থেকে ২০১৩ সালের এক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে তিনি জানান, এ সময়ে ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ একর কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। গড়ে প্রতিদিন ৬৬১ দশমিক ৪৫ একর কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। অকৃষি খাতের মধ্যে বসতবাড়ি তৈরি, কন্ট্রাক ফার্মিং, চিংড়ি চাষ, তামাক চাষ, দোকানপাট নির্মাণ, হাউজিং সোসাইটি নির্মাণ, ইটের ভাটা উল্লেখযোগ্য। এর মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি কমছে বলে তিনি দাবি করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ