শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মিশরের গন্তব্য কোন পথে?

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা : দীর্ঘদিন স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হবার পর মিশরের ভাগ্যাকাশে আরব বসন্তের সুবাতাস শুরু হয়েছিল। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে এমন পরিবর্তন কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণকেন্দ্র এই দেশটি শুধুমাত্র স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের অপশাসন ও দুঃশাসনের অধীনে ছিল তিন দশকেরও অধিক সময় ধরে। কিন্তু স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী শাসকের শেষ রক্ষা হয়নি বরং ২০১২ সালে সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে এক অনিবার্য পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল। তা উপেক্ষা করা কোন ভাবেই সম্ভব ছিলে দীর্ঘ দিনের এই স্বৈরশাসকের। বস্তুত স্বৈরশাসকরা ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত বা নির্বিঘ্ন করতে সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করতে পারলেও পতনের পথটা উন্মুক্তই রাখে একেবারে মনের অজান্তেই।
খুব সঙ্গত কারণেই মিশরের দোর্দন্ড প্রতাপশালী শাসক হোসনি মোবারককেও সেই কাক্সিক্ষত পরিণতিই বরণ করতে হয়েছিল। জনগণের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে তার ক্ষমতার মসনদ হয়েছিল একেবারে লন্ডভন্ড। ফলে ক্ষমতার পালাবদলটা হয়েছিল একেবারেই অনিবার্য। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুড ও ফ্রিডম এন্ড জাষ্টিস পার্টির প্রার্থী ড. মুহাম্মাদ মুরসী গণরায়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর এই গণরায় স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রায়ণের পথে উত্তরণের ক্ষেত্রে মাইল ফলক হতে পারতো। কিন্তু সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মিশরের গণতন্ত্রকামী ও শান্তিপ্রিয় জনগণ। যা বিশে^র গণতন্ত্রমনা শান্তিকামী মানুষের মোটেই কাম্য ছিল না।
মূলত দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট মিশরে ২০১৩ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল বলেই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তা বেশীদিন স্থায়ী হয়নি বা হতে দেয়া হয়নি। দৃশ্যপটে হোসনি মোবারকের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি না থাকলে পরোক্ষভাবে কলকাঠী নেড়েছিল পতিত এই স্বৈরশাসনের অনুগামীরা। ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পরিবর্তে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল মিশরের সার্বিক পরিস্থিতি। দেশটির ইতিহাসে সর্বপ্রথম অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসীকে ক্ষমতার দৃশ্যপথ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল সম্পূর্ণ দুঃখজনকভাবে। যা ছিল মিশরের জনগণের গণরায়ের প্রতি মারাত্মক অশ্রদ্ধা এবং গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য রীতিমত অশনি সংকেত।
নানা অজুহাতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী। যেসব অভিযোগের কথা বলে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিল সেসব অভিযোগ মোটেই যৌক্তিক বা সত্য ছিল না বরং ছিল এক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রেরই অংশ। কিন্তু সেসব কথিত অভিযোগের ধুয়া তুলে একজন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করা হয়েছিল। অথচ মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ধ্বজ্জাধারীরা এক্ষেত্রে ছিল শুধুই নিরব দর্শক। আর এই ক্ষমতার পরিবর্তন মোটেই শান্তিপূর্ণ ছিল না বরং হত্যা করা হয়েছিল হাজার হাজার নিরপরাধ বিক্ষোভকারীকে। কিন্তু বিশ্বেবিবেক এসব ভাগ্যাহত মানুষের পক্ষে কথা বলেনি বরং তারা রহস্যজনকভাবে নীরবই থেকেছে।
স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদীরা অগণতান্ত্রিক হলেও তারা নিজেদের গায়ে গণতন্ত্রের লেবেল লাগাতে মোটেই কসুর করে না। মিশরের সেনা শাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির ক্ষেত্রেও এর কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। মোহাম্মদ মুরসীকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পরও আল সিসিও গণতন্ত্রের মহড়া প্রদর্শন করেছে। আর তিনি নিজের অপকর্মকে বৈধতা দিতেই ২০১৪ সালে কথিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নামে এক প্রহসনের আয়োজন করেছিলেন। সে নির্বাচনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলেও তার পক্ষে ভোটের কোন অভাব হয়নি বরং সে দেশের নির্বাচন কমিশন তাকে বিপুলভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন সিসির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি বামপন্থী প্রার্থী হামদিন সাবাহি। অবশ্য দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে বিবিসি ও আল জাজিরা জানিয়েছিল, নির্বাচনে সকল কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, সিসি পেয়েছেন ৯৩ দশমিক তিন ভাগ ভোট। হামদিন সাবাহি পেয়েছেন মাত্র তিন ভাগ ভোট। যা কথিত নির্বাচনের নামে তামাশা বলেই মনে করেন বিশ্বের গণতন্ত্রমনা মানুষ। কারণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সিসির পক্ষে বিজয়ী হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না।
২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের নির্বাচনের পর স্বৈরশাসক আল সিসি তার মেয়াদপূর্ণ করার প্রেক্ষাপটে আগামী মার্চে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আর আসন্ন এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট সিসি নিজেকে প্রার্থী ঘোষণার প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তাদের প্রার্থীতা ঘোষণায় মিশরে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে। স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি তার বিজয় নির্বিঘœ করতেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর দলনপীড়ন শুরু করেছেন। তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও গ্রেফতারের আতঙ্কের মধ্যে রাখা হয়েছে। বিরোধী সব গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীকে গ্রেফতার বা নির্যাতনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ‍তুলে মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির বিরোধী দলীয় জোট। তারা এই নির্বাচনকে ‘হাস্যকর পাগলামি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। যা মিশরে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি মিসরের আটটি বিরোধী দল ও গণতন্ত্রপন্থী ১৫০ জন ব্যক্তিত্ব এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সরকারের বিরুদ্ধে ‘যে কোনও ন্যায্য প্রতিযোগিতা’ প্রতিহত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে মার্চে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে সাধারণ মিসরীয়দের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কায়রোতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিবৃতি প্রকাশকালে বিরোধী নেতা আবদেল গিলিল মুস্তাফা বলেন, এই সীমাহীন হাস্যকর পাগলামির কাছে আমাদের আত্মসমর্পণ করা ঠিক হবে না। আর ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিসির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হামিদ সাবাহি ‘বাড়িতে থাক’ স্লোগানে একটি প্রচারিভাযানও শুরু করেছেন।
মূলত ২০১৩ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। তাই তিনি লোক দেখানোর জন্য নির্বাচন ও গণতন্ত্রের মহড়া প্রদর্শন করলেও তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কারোরই অজানা নয়। আসলে তিনি যেকোন মূল্যে নতুন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে চান। আর এজন্য তিনি যেকোন অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করতে প্রস্তুত আছেন। সম্প্রতি বিরোধী দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর দলনপীড়ন সে কথারও ইঙ্গিত বহন করে। তাই মনে করা হচ্ছে জেনালে সিসি নিশ্চিতভাবে আগামী মার্চ মাসের নির্বাচনে জয়লাভ করতে যাচ্ছেন। কারণ তিনি বেশ কয়েকজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে গ্রেফতার করেছেন নয়তো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দিয়েছেন। ফলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।
জানা গেছে, নির্বাচনের অংশ নেওয়ার আগ্রহী সাবেক সেনা কর্মকর্তা সামি আনানকে গত ৩০ জানুয়ারি বন্দুকের মুখে আটক করে নিয়ে গেছে মিসরীয় নিরাপত্তা বাহিনী। তার আগে কায়রোয় রাস্তায় এক হামলার শিকার হয়ে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিশাম গিনেনা আহত হন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিন্তা করলেও এ মাসের শুরুতে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আসন্ন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে স্বৈরশাসক আল সিসির নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত।
মূলত ২০১৪ সালের এক প্রহসনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফিল্ড মার্শাল সিসির বিজয় আগে থেকেই নিশ্চিত ছিল। কারণ, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসীকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূলবোধ ধ্বংস করার জন্যই। কথিত সে নির্বাচনে জনগণের তেমন কোন অংশগ্রহণই ছিল না। কম ভোট পড়ায় তার বিজয় নিশ্চিত করতে দু’দিনের ভোটগ্রহণ তিনদিন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। মিশরীয় নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মতে, সাবেক সেনাপ্রধান সিসি ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিপক্ষ বামপন্থি রাজনীতিক হামদিন সাবাহি মাত্র ৩ শতাংশ ভোট পান। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে দেশটির প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত ও কারাবন্দি করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি। এরপর আদলি মনসুরকে অন্তবর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেয় মিশরের শক্তিশালী সেনা প্রশাসন। সে থেকে কারাগারেই অন্তরীণ রয়েছেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিশরের এই সাবেক প্রেসিডেন্ট।
মূলত মিশরের অতীত বেশ সমৃদ্ধ। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, প্রায় ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই একটি সংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মিশর বিদ্যমান। সেচভিত্তিক কৃষি, সাক্ষরতা, নগরজীবন, এবং বড় মাপের রাজনৈতিক সংগঠনবিশিষ্ট ইতিহাসের প্রথম সভ্যতাগুলির একটি নীল নদের উপত্যকাতে গড়ে উঠেছিল। সাংবাৎসরিক বন্যা মিশরকে একটি স্থিতিশীল কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।আফ্রিকার সংযোগস্থলে সামরিক কৌশলগত স্থানে অবস্থিত ছিল বলে এবং ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা এবং ভারত ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যপথের উপর অবস্থিত ছিল বলে এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়।
খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতক থেকে বিভিন্ন বিদেশী শক্তি দেশটি দখল করে এবং এখানে নতুন নতুন ধর্ম ও ভাষার প্রবর্তন করে। কিন্তু মিশরের সমৃদ্ধ কৃষি সম্পদ, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অবস্থান এবং দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক একতার ফলস্বরূপ এখনও পুরনো ঐতিহ্য ও রীতিনীতিগুলি হারিয়ে যায়নি। বর্তমান মিশর আরবিভাষী মুসলিম রাষ্ট্র হলেও এটি অতীতের খ্রিস্টান, গ্রীক-রোমান ও প্রাচীন আদিবাসী ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি এখনও ধরে রেখেছে।
৬৪১ সালে আরব মুসলিমরা মিশরে আসলে মিশরের মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। তখন থেকেই মিশর মুসলিম ও আরব বিশ্বের একটি অংশ। আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী। দেশটি যখন উসমানীয় সাম্রাজ্যের একটি অংশ ছিল, তখন ১৮০৫ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির বড়লাট ছিলেন। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সেনারা মিশর দখল করে। এরপর প্রায় ৪০ বছর মিশর ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯২২ সালে দেশটি একটি রাজতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করলেও ব্রিটিশ সেনারা মিশরে থেকে যায়।
১৯৫২ সালে জামাল আব্দেল নাসের-এর নেতৃত্বে একদল সামরিক অফিসার রাজতন্ত্র উৎখাত করে এবং একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে মিশর প্রতিষ্ঠা করে। নাসের ১৯৫৬ সালের মধ্যে মিশর থেকে সমস্ত ব্রিটিশ সেনাকে সরিয়ে দেন। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি আনওয়ার আল-সাদাতের নেতৃত্বে মিশর প্রথম জাতি হিসেবে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমানে মিশর সমগ্র আরব বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। তাই মুসলিম বিশে^র কাছে দেশটির গুরুত্ব খুবই বেশী।
দীর্ঘদিন পর্যন্ত মিশর ব্রিটিশদের উপনিবেশ ও স্বৈরশাসকের অপশাসন ও দুঃশাসনে থেকেছে। আর এই স্বৈরশাসনের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হলো প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের শাসনামল। তিনি তিন দশক তথা ১৯৮১ থেকে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেশটির রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি ১৯৭৫ সালের উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সাদাত নিহত হবার পর ১৯৮১ সালের ১৪ই অক্টোবর মুবারাক মিশরের রাষ্ট্রপতি হন এবং মোহাম্মদ আলীর পর প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক হচ্ছেন মিসরের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক। রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে মুবারাক মিশরীয় বিমান বাহিনীর একজন কমান্ডার হিসেবে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে এই স্বৈরশাসকের।
হোসনে মোবারকের পতনের পর মনে করা হয়েছিল যে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মিশরে নতুন করে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শুরু হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীকে আশাহতই হতে হয়েছে। মিশরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসীকে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কবর রচনা করা হয়েছে।
মনে করা হয়েছিল যে, স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ক্রমেই দেশকে গণতান্ত্রিক পন্থায় এগিয়ে নেবেন। কিন্তু নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের হয়রানী, নাজেহাল ও নিগ্রহের ঘটনার পর সে আশায় অনেকটাই গুরে বালি বড়েছে। ফলে মিশরে গণতন্ত্রের অভিযাত্রার আশা যেমন ক্রমেই তিরোহিত হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে দেশটির সার্বিক পরিস্থিতিও বিপদসংকুল। তাই মিশরকে অনিশ্চিত গন্তব্যের অভিযাত্রী বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বোদ্ধামহল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ