শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কোনো শক্তিই খালেদা জিয়াকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না

স্টাফ রিপোর্টার: গত ৫ দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে ৫ শতাধিক বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। গতকাল রোববার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, শ্রাবণের ধারার মতো গ্রেফতারের ধারা বয়ে যাচ্ছে, তৈরি করা হচ্ছে ভীতিকর পরিবেশ। গত ৫ দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার হয়েছে। সরকারের অংঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করছে পুলিশ। তিনি বলেন, শনিবার লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা চলাকালে ও সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পর রাস্তা থেকে প্রায় ৩৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন-গণগ্রেফতার নয় সন্ত্রাসী ধরা হচ্ছে, পুলিশের প্রতি ভালবাসা বাড়ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদেশ্য করে রিজভী বলেন, দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, ছাত্র, যুবক ও মহিলাসহ বিএনপি ও বিরোধী দলের অসংখ্য  নেতাকর্মীদেরকে ধরার জন্য চিরুনী অভিযান, আটক ও বাসায় বাসায় হামলার পরও ভালবাসা বাড়ছে? গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা না হয় বাদই দিলাম। হায় সেলুকাস! সরকারের অঙ্গ সংগঠনের ভূমিকা পালন করেছে বলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের প্রতি মানুষের ভালবাসার কথা বলছেন।

তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের ওপর নির্যাতন তো দৈনন্দিন ঘটনা, একটি অরাজনৈতিক ও দেশের স্বার্থের পক্ষে সংগঠন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির মিছিলে পুলিশের উন্মত্ত হামলায় অধ্যাপক আনু মোহাম্মদের পা ভেঙ্গে দেয়াসহ তাদের অসংখ্য বরেণ্য ব্যক্তিকে মারাত্মক আহত করা হয়। সেটিও কেউ ভুলে যায়নি। 

আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলতে চাই-স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনাদের অবদান নি:সন্দেহে অবিস্মরণীয়। ২৫ মার্চের কালোরাত্রে পাক হানাদার বাহিনী প্রথমেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করে। দেশমাতৃকা রক্ষায় আপনাদের আত্মদান মানুষ এখনও মনে রেখেছে। কিন্তু এই স্বাধীন দেশে বিরোধী দলের ওপর পুলিশের উন্মত্ত হামলা তো মানুষকে সেই পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

রিজভী বলেন, সম্পূর্ণ নির্দোষ বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জাল নথির ওপর ভিত্তি করে অসত্য মামলায় ধারাবাহিক হয়রানী ও হেনস্তার পর ৮ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধানের জন্য অপেক্ষা করছে জনগণ। এখানে সরকারের প্রতিশোধ স্পৃহার প্রতিফলন ঘটে নাকি ন্যায় বিচার হয় সেটিই এখন অবলোকন করার বিষয়। ন্যায় বিচার হলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এদেশের স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তার সহধর্মীনি। ৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সাথে মিশে থাকা বেগম জিয়া দেশবাসীর নিকট আশা আকাঙ্খা, স্বপ্ন ও সাফল্যের প্রতীক। আপোষহীন ও সংগ্রামী বেগম জিয়াই বারবার হারানো গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে প্রতিশ্রুতি পালনে সবরকমের অস্পষ্টতা ও দ্ব্যর্থবোধকতা থেকে মুক্ত আপোষহীন একজন জাতীয় নেতা। জালিয়াতি ও ভীরুতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক অকম্প, অবিচল ব্যক্তিত্ব। ষড়যন্ত্র করে নিপীড়ণ-নির্যাতনের বাতাবরণে তাকে আটকিয়ে রাখা হলেও জনগণের মুক্তির প্রশ্নে তিনি ছিলেন সমান নির্ভিক। নিজস্ব সিদ্ধান্ত ও আদর্শে তিনি ছিলেন দ্বিধা ও সঙ্কোচহীন। অশুভ রাজনৈতিক শক্তি তাকে কখনোই প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়নি। ভয়ঙ্কর সরকারি রোষে পড়া সত্ত্বেও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে তিনি পিছপা হননি। একদিকে বড় ছেলে বর্তমান শাসকদের দোসরদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে বিদেশে আর অন্যদিকে ছোট সন্তানের লাশ কোলে নিয়েও দেশ ও গণতন্ত্রের প্রতি ছিলেন নিষ্ঠাবান। সত্যনিষ্ঠ, দৃঢ়চেতা দেশ ও দলের প্রতি সহমর্মী বেগম খালেদা জিয়াকে তার দেশ ও জনগণ থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। সব অশুভ অভিপ্রায় ব্যর্থ হয়ে যাবে।

রিজভী বলেন, দেশ এখন ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে। গণতন্ত্রহীনতাকে বলা হচ্ছে গণতন্ত্র, কন্ঠরুদ্ধ করাকে বলতে হবে বাকস্বাধীনতা, হয়রানী আর অবিচারকে বলতে হবে বিচার। চাঁদাবাজী ও আধিপত্যের লড়াই, প্রতিদিন অসংখ্য নারী ও শিশু নির্যাতন, সরকারী ব্যাংকগুলো লোপাটসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, একের পর এক কালাকানুন প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের পরও বলতে হবে দেশে সুশাসন চলছে। চালের দাম ৭০ টাকা হলেও বলতে হবে চাল সস্তা। ধমক ও হুংকারসর্বস্ব রাজনীতির বিরোধীতা করলেই আওয়ামী বিচারের কাঠগড়ায় সেই হবে আসামী। কিন্তু এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে জনগণ শাসকের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে বন্ধন ছিন্ন করাকেই অনেক মহৎ কাজ বলে মনে করে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ