শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ডিজিটাল আইন বাতিল না হলে বৃহত্তর আন্দোলন

 

স্টাফ রিপোর্টার: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্তত ৫টি ধারা কোন সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, আইনটি সংসদে পাসের আগে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী এসব ধারা বাতিল করা না হলে সাংবাদিক সমাজ ওই আইন অমান্যে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। অনির্বাচিত ও অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জঘন্য ও ভয়ঙ্কর আইন করছে বলেও মন্তব্য করেন সাংবাদিক নেতারা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে কদম ফোয়ারা ঘুরে তোপখানা রোড প্রদক্ষিণ করে। 

বিএফইউজে’র মহাসচিব এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজে’র সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজে’র সাবেক সহসভাপতি নুরুল আমিন রোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জাতীয প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজে’র সহসভাপতি খুরশিদ আলম, যুগ্ম সম্পাদক শাহীন হাসনাত, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে এম  মোহসিন, সাংবাদিক নেতা কায়কোবাদ মিলন প্রমুখ। ডিইউজে’র দফতর সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ সমাবেশ পরিচালনা করেন।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, অবৈধ সরকার তাদের নানা অপকর্ম ঢাকতেই নতুন নতুন নিবর্তনমূলক আইন করছে। তারা জানে জনগণ সত্য জানতে পারলে তাদের মসনদ ভেসে যাবে। এক দিকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় প্রটোকল নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণমানুষের নন্দিত নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। 

 তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করে না। তারা সাগর-রুণী হত্যার বিচার করছে না। বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিচ্ছে না। তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারি দেন রুহুল আমিন গাজী। 

তিনি আরও বলেন, দেশে নাকি উন্নয়নের রাজনীতি চলছে। উন্নয়ন হচ্ছে চাল পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি। উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট। কিন্তু এসব লুটপাটের সংবাদ যেন না প্রকাশ পায় এ কারণেই এই কালো আইন করা হচ্ছে।

 তিনি বলেন, কোন কালো আইনই এই সরকারকে বাঁচাতে পারবে না। ৫৭ ধারা বাতিলের আন্দোলনে সাংবাদিক সমাজ সফল হয়েছে। এই ডিজিটাল আইনও আন্দোলনের মুখে বাতিল করতে বাধ্য হবে। সরকার যদি এই কালো আইন আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে সারা দেশে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। 

এম আবদুল্লাহ বলেন, কুখ্যাত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করে যে কথিত ডিজিটাল আইন করা হচ্ছে এটি আধুনিক ও সভ্য সমাজের উপযোগী নয়। এটি একটি জংলি আইন। কোন গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের আইনের কথা কল্পনাও করা যায় না। তিনি বলেন, ৫৭ ধারা ভেঙ্গে ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় নতুনরূপে বহাল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ৩২ ধারা সংযোজন করে মুক্ত গণমাধ্যমের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। কেবল অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাই নয়, এ আইন কার্যকর হলে কোন সাংবাদিকতাই আর করা যাবে না।

 তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পে ও কুইক রেন্টালের নামে যে হাজার হাজার  কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে তার তথ্য যাতে প্রচার ও প্রকাশ না করা যায় এবং ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য নতুন কালো আইন করছে সরকার।

এম এ আজিজ বলেন, ৫৭ ধারার বিষয়গুলো নতুনরূপে বহাল রাখা এবং ভয়ানক নিবর্তনমূলক ৩২ ধারা সংযোজনের মাধ্যমে এ সরকার আবারও প্রমাণ করেছে তারা মুক্ত গণমাধ্যমকে কতটা ভয় পায়। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণে নতুন নতুন কালাকানুন করা বর্তমান সরকারের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার হরণকারী সরকার এমনটা করবে তা স্বাভাবিক। 

আবদুল হাই শিকদার বলেন, এ সরকার হচ্ছে একটি অসভ্য বর্বর সরকার। তারা গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতায় কখনো বিশ্বাস করেনি। গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকাই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু গণবিস্ফোরণে তাদের সেই স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যাবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে। 

শহিদুল ইসলাম বলেন, এই সরকার অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতেই একের পর এক কালো আইন তৈরি করছে। ৫৭ ধারার সেই কালো আইনই নতুন করে ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিক সমাজ এই কালো আইনও কোন দিন মেনে নিবে না। প্রয়োজনে রাজপথে অবস্থান নিয়ে এই কালো আইন বাতিল করেই ঘরে ফিরবো।

জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, ডিজিটাল কালো আইনের ফলে দুর্নীতি, লুটপাট ও অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পথই শুধু রুদ্ধ হবে না অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাই আর চলবে না। সে কারণেই গোটা সাংবাদিক সমাজ আজ উদ্বিগ ও বিচলিত। এ বিধান দেশে দুর্নীতিকে অবারিত ও অপ্রতিরোধ্য করে তুলবে। তিনি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ