আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জে যুবলীগ কর্মীকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা ॥ আটক ১
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক যুবলীগ কর্মীকে ডেকে নিয়ে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সকাল সোয়া ৭টায় উপজেলার ভুলতা তাঁতবাজার এলাকায় ঘটে এ হত্যাকা-ের ঘটনা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক শাহিন মিয়া স্বীকার করেছেন। তিনি উপজেলার বলাইখা এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে। এছাড়া নিহত জাকির হোসেন (৩০) উপজেলার ভুলতার ইউনিয়নের মর্তুজাবাদ এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। বর্তমানে জাকির হোসেন স্ত্রী ফারজানা বেগম, ছেলে এখলাছ ও মেয়ে ইলমাকে নিয়ে শিংলাবো এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শহিদুল আলম জানান, জাকির হোসেন একজন যুবলীগ কর্মী এবং কাঁচামাল ব্যবসায়ী। বুধবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে এক দল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত জাকির হোসেনকে ভুলতা তাঁতবাজারের হাজী বিরিয়ানীর দোকানের সামনে এলোপাথাড়ীভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এসময় জাকির হোসেন নিজেকে বাঁচানোর জন্য ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে জাকির হোসেন জীবন বাঁচাতে দৌড়ে ফুটপাতের সামনে এসে মাটিতে লুটে পরে। এক পর্যায়ে জাকির হোসেনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাব্বিতসহ স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জাকির হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিত্বে শাহিন নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ের ঘটনা স্বীকার করেছে আটক শাহিন। এ ঘটনার সঙ্গে আরো কয়েক জন জড়িত রয়েছে। এরা সবাই মাদকাসক্ত।
এ ব্যপারে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাব্বিত জানান, জাকির হোসেনের গলায়, পিঠে, কাঁধ, হাতের কব্জিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে নয়টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। প্রচ- রক্তক্ষরণ হওয়ায় দ্রুত তার মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি মর্তুজাবাদে পাঠানো হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাঁতবাজারের সামনের ফুটপাতে জাকির হোসেনের কয়েকটি দোকান রয়েছে। ওই দোকানের মধ্যে একটি দোকানে নিজে সবজির ব্যবসা করেন। বাকি দোকান অন্যদের ভাড়া দিতেন তিনি। এদিকে, বলাইখা এলাকার শাহীন নামের ওই যুবকসহ তার সহযোগীরা দোকান বাবদ জাকির হোসেনের কাছে চাঁদা দাবি করতো। এ নিয়ে বেশ কয়েক বার শাহিনের সঙ্গে জাকিরের বাকবিত-া হয়েছে। গত সোমবার সকালেও তাদের দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এসময় জাকির হোসেনকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় শাহিন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, শাহিনসহ তার সহযোগীরা এলাকায় মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাদের অত্যাচারে বলাইখা, আউখাব, গোলাকান্দাইলসহ আশপাশের এলাকার শিল্প-কারখানার শ্রমিক অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মাস শেষে বেতন-ভাতা নিয়ে ফিরতে পারে না শ্রমিকরা। প্রতিবাদ করতে গেলেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হতে হয় প্রতিবাদীদের।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান তুহিন বলেন, জাকির হোসেন যুবলীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। যারা এ ধরনের হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করে অবিলম্বে ফাঁসি দিতে হবে।
জাকির হোসেনের স্ত্রী যুব মহিলালীগ কর্মী ফারজানা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এ ব্যপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আটক শাহিনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে এবং গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। হত্যাকারীদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।