শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কুয়েটে র‌্যাগিংয়ের শিকার নবীন শিক্ষার্থীরা!

খুলনা অফিস : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ২০১৭ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ র‌্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত দু/তিন ধরে একাধিক হলে ও ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে চলছে র‌্যাগিং নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষিত জিরো টলারেন্সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। একই সাথে গত বছরে র‌্যাগিং বিরোধী শপথও ভঙ্গ হলো তাদের। অবিলম্বে এসব হয়রানি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, ‘আমরা চাই কুয়েটে র‌্যাগিং বলে কিছু থাকবে না। কারো দ্বারা কুয়েটের সুনাম নষ্ট হলে তাকে ক্ষমা করা হবে না।’
ক্যাম্পাসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাত থেকে ক্যাম্পাসের একাধিক হলে র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন শুরু হয়। সোমবার দিবাগত রাতেও ‘অমর একুশে’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ হলে তুমুল মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সাথে বাড়ি ফিরে গেছেন বলেও জানা গেছে।
নির্যাতনের শিকার একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, পরিচিত হওয়ার কথা বলে কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের কয়েকজনকে হলের ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাঁদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান তারা। একপর্যায়ে নির্যাতন সইতে না পেরে ডাক-চিৎকারও করে নির্যাতিতরা। তবে তাদের ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তারা।
তারা আরও জানায়, প্রথম বর্ষের প্রায় সব ছাত্রই কম-বেশি তার বিভাগ বা হল বা মেসের বড় ভাইদের মাধ্যমে র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রথম বর্ষের যারা মেসে থাকেন তাদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের ‘অস্থায়ী নিবাস’ নামে ছাত্রাবাসের বড় ভাইদের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠছে।
সূত্র মতে, গেল বছরের ৫ মে রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাদে নিয়ে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিংয়ের নামে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে হল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করাসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভাস্কর্য ‘দুর্বার বাংলা’র পাদদেশে ২০১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে র‌্যাগিং বিরোধী শপথ নিলেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা। প্রধান অতিথি হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে র‌্যাগিং নামক একটি অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে। এতে নতুন শিক্ষার্থীরা মানসিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়। আমরা চাই কুয়েটে র‌্যাগিং বলে কিছু থাকবে না। কারও দ্বারা কুয়েটের সুনাম নষ্ট হলে তাকে ক্ষমা করা হবে না।’ এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ ঘোষণা করা হয়েছিল।
র‌্যাগিংয়ের শিকার একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘র‌্যাগিংয়ের উৎপাত নেই জেনেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিনিয়ত যেভাবে র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের শিকার হচ্ছি, তাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। জানি না কতদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবো।’
কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আবুল হাসান শোভন ও সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, গত ২৯ জানুয়ারি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ-কে কেন্দ্র করে সংগঠিত অনাকাঙ্খিত ঘটনায় কুয়েট ছাত্রলীগের কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রুদ্রনীল সিংহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজন পাল পান্থ, আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটি আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। ছাত্রলীগের কোন নেতা-কর্মী দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আবুল হাসান শোভন।
এ ব্যাপারে কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড. সোবহান মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইলে কয়েকবার কল করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ