শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেনতেন রায় মেনে নেয়া হবে না -মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় ‘যেনোতেনো প্রকারে রায়’ মেনে নেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব সরকারের প্রতি এই হুশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, এতো সোজা নয়, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আপনারা(সরকার) যেনতোনো প্রকারে একটা রায় দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না। সঠিক বিচার করতে হবে, ন্যায়বিচার হতে হবে। আমরা যে কথা বলতে চাই খুব পরিষ্কার করে, আমাদের নেত্রী এদেশের ১৬ কোটি মানুষের আশা-ভরসার স্থল, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের একমাত্র প্রতীক। যার উপরে সমস্ত বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে, তাকে সরকার রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। আমরা কী সেটা করতে দেবো? এ সময়ে অনুষ্ঠানস্থলে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সমস্বরে ‘না’, ‘না’ বললে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা কী তার জন্য সমস্ত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? এ সময়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা সমস্বরে ‘হ্যা’ বলে জবাব দেয়।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করবে ঢাকার পঞ্চম জজ আদালত। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ মেয়াদে সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলার প্রধান আসামী।  বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ এই মামলাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সংগঠনের কারাবন্দী সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীর মুক্তির দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়। মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এস এম জিলানি’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মহানগর দক্ষিনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, রফিক হাওলাদারসহ দক্ষিণের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
 কেনো তড়িঘড়ি করে খালেদা জিয়ার মামলার রায় দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেণ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নজিরবিহীনভাবে তাড়াহুড়া করে এই মামলাটি শেষ করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমন কী শেষ দিন যখন আইনজীবী চাচ্ছেন যে, তিনি আরো কথা বলবেন, কিউসি‘সরা আছেন তাদের কথা বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে, সিনিয়র আইনজীবীদের গিলোটিন করে তাদের বক্তব্য শেষ করা হয়েছে এবং মামলার রায় দেয়ার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
 কেনো এই তাড়াহুড়া? কেনো এই জোর করে অতিদ্রুত আইনের স্বাভাবিক যে গতি, মামলার যে গতি থাকে তাকে বন্ধ করে দিয়ে অতিদ্রুততার সঙ্গে কেনো এই রায় দেয়ার চেষ্টা? একটাই কারণ- বিএনপি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা হুঙ্কার দিচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন যে, রায়ের পরে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। আপনাদের মাথায় এটা আসলো কেনো? আমরা তো দেখছি, এই মামলায় কিছুই নেই, কোনো সত্যতা নেই, প্রসিকিউশন ব্যর্থ হয়েছে কোনো কিছু প্রমাণ করতে। সেখানে আপনারা হঠাৎ করে এটা( বিশৃঙ্খলা) ভাবছেন কেনো?
ভাবছেন এই কারণেই যে, রায় আপনারা পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। আপনাদের সরকারের মন্ত্রীরা বলেছেন ৮ দিনের মধ্যে রায় হবে, ১৫ দিনের মধ্যে রায় হবে। যখন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হোসেইন মো. এরশাদ বলেন যে ১৫ দিনের মধ্যে রায় হয়ে যাবে, রাঙ্গা সাহেব (স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা) বলেন যে, ৮ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। তখন দেখা গেলো ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ রায় ঘোষণার কথা বলা হলো। তাহলে বিচারের এই প্রহসন কেনো?
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেনতেন রায় দিলে দেশবাসী মেনে নেবে না। দেশের মানুষ সঠিক ও ন্যায় বিচার চায়। কারণ আজ 'বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে'। দেশে এখন কেউ কোথাও ন্যায় বিচার পায় না।‘স্পষ্ট করে বলছি, খালেদা জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর রাজপথে  স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, বিরোধী দলের নেত্রী হয়েছেন। তাই উনার সঙ্গে এ ধরনের আচরণের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে জাতি কোনোদিন ক্ষমা করবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কোনদিনই এ ধরনের অন্যায় বরদাশত করেনি। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা বলেছেন- তারা  তৈরি আছেন, প্রস্তুত আছেন। শুধু আপনাদেরকে প্রস্তুত থাকলে হবে না, জনগণকেও প্রস্তুত করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা সবাই জেগে উঠি, মানুষকে জাগাই। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে পরাজিত করি এটা হোক আমাদের শপথ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষকদের আমরণ অনশন, দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতিসহ নানা সংকটে সারাদেশে ‘অস্থিরতা’ বিরাজ করছে মন্তব্য করে এই থেকে উত্তরণে সকলকে ‘জেগে উঠার’ আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, গত এক মাসে সারাদেশে আমাদের ১২ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিরোধী দলকে নির্মূল করে দেয়ার জন্য যে সুপরিকল্পিত দমননীতি তারা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে এখন পর্যন্ত শুধু আমাদের দলেরই প্রায় ৫০ হাজারের মতো মামলা হয়েছে। প্রায় ১২ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। চেয়ারপার্সন থেকে শুরু করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজনও বাদ নেই যাদের বিরুদ্ধে ১০ এর অধিক মামলা রয়েছে, কারো শতাধিক মামলা রয়েছে। গুম হয়েছে অসংখ্য, মেরে ফেলেছে বা হত্যা করেছে ৬৩৩ জন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ