শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মিরসরাইয়ে অগ্নিকাণ্ডে প্রতি বছর কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়

এম মাঈন উদ্দিন, (মিরসরাই): একের এর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েই চলেছে। জ্বলেপুড়ে ছারখার হচ্ছে সব। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। পথে বসছে শত শত পরিবার। অগ্নিকান্ড সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বর্তমানে এত বেশি অগ্নিকান্ড ঘটছে যে, খোদ দমকল বাহিনীর কর্মীরাও চিন্তিত। আগুন লাগলে বরাবরের মতো উপজেলাবাসী শুধু দমকল বাহিনীর ওপর নির্ভর করায় আগুনে জানমালের ক্ষতির পরিমাণও কমানো যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে এক ধরনের নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। যা ভবিষ্যতের বড় দুর্ঘটনা সামাল দেওয়র জন্য হুমকি। মিরসরাইয়ে সংঘটিত অগ্নিকান্ডের পর বরাবরই আর্তমানবতার আহ্ববানে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। তাঁর মতে, আগুনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দমকল বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। লাখ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ব্যবহারে বহু মানুষের কাছে অজানা। অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে সিলিন্ডারভিত্তিক অগ্নিনির্বাপকের ব্যবহারের উপর জোর দেন নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।
বুধবার (১৭ জানুয়ারী) উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়নের দমদমা বাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ ৭ ব্যবসায়ীর হাতে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অনুদান প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, অধিকাংশ বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন লাগার পর তা কিভাবে নেভানো হবে, সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত আগুন লাগার আগেই। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পাওয়া সহজ নয়। কারণ রাস্তায় জ্যাম লেগেই থাকে। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন স্থানের সংকীর্ণ রাস্তাঘাট। ফলে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। তাই আগুন লাগলে তা কিভাবে নেভানো হবে তার একটি পরিকল্পনা আগেই করে রাখতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফায়ার হাইড্রেন্ট বা ¯িপ্রংকলার ষ্প্রে সিস্টেম থাকা প্রয়োজন, পাশাপাশি বাসাবাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সিলিন্ডারভিত্তিক অগ্নিনির্বাপকের ব্যবহার করা উচিত যেন বড় ধরনের অগ্নিকান্ডও সহজে নির্বাপণ করা যায়।
গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারী) উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়নের দমদমা বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে রাজু কর্মকারের মাতৃৃ মেডিকেল হল, সুজন বড়ুয়ার শুটকির দোকান, শালীন বড়ুয়ার ঐশি ইলেকট্রিক এন্ড মাইক সার্ভিস, মৃনাল বড়ুয়ার ষ্টেশনারী, শ্রীমান কর্মকারের মাইকের দোকান, ঝুলু বড়ুয়ার ইলেকট্রিক দোকান, সুজন দে’র ট্রেইলার্স দোকান ও একই মার্কেটের একটি খালি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন ৭ ব্যবসায়ী।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারী উপজেলার ১০ মিঠানালা ইউনিয়নের সুফিয়া বাজারে অগ্নিকা-ে মুহূর্তে পুড়ে ছাই হয়ে যায় লা রবিন ফার্নিচার, ইলিয়াছ স্টোর, মোজাম্মেল স্টোর ও সালেহ আহাম্মদ স্টোর। অগ্নিকান্ডে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে হাইতকান্দি ইউনিয়নের করুয়া গ্রামের আমির হোসেনের নতুন বাড়িতে আমির হোসেনের ছেলে তসলিম উদ্দিনের বৌভাতের দিন অগ্নিকান্ডে বিয়ের আয়োজনে ব্যবহৃত ডেকোরেশনের সকল মালামাল সহ বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় হয়। প্রতিবেশি নুরুল আলম ও আরিফুল ইসলাম জানান, সিলিন্ডার থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়ে মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে ঘরের মানুষ অক্ষত অবস্থায় বের হলেও স্বর্ণালংকার, কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র,জায়গা জমির দলির, আসবাবপত্র কিছু রক্ষা সম্ভব হয়নি।
মিরসরাই সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ষ্টেশন কর্মকর্তা (এসও) রবিউল আজম জানান, গেল বছরের অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসে ৭টি অগ্নিকান্ড এবং চলতি বছরের শুরুতে ২টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় যথা সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। দেরিতে যাওয়ার অভিযোগে আগুন নেভাতে গিয়ে সুফিয়া এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের দু’জন কর্মী হামলার শিকারও হয়েছেন। আগুন নিয়ন্ত্রনে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখতে আহ্বান জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ