শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মুনাজাত মুসলিম উম্মাহর ঐক্য শান্তি সমৃদ্ধি কামনা

তাবলিগ জামায়াতের ইজতেমার ২য় কিস্তিতে শেষ দিনে দেশ জাতির কল্যাণ কামনায় মুনাজাত করছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা -সংগ্রাম

গাজীপুর থেকে মোঃ রেজাউল বারী বাবুল ও গাজী খলিলুর রহমান : টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি লাভের আশায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে দুই হাত তুলে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আমিন, আল্লাহুমা আমিন, ছুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত মুনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের তাবলীগ জামায়াতের ৫৩তম বিশ্ব এজতেমা গতকাল রোববার শেষ হয়েছে। মুনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়।
রোববার বেলা ১০টা ১৯ মিনিট থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ২৭ মিনিট স্থায়ী মুনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের মুরব্বি বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। এরমধ্যে ১১ মিনিট আরবিতে এবং ১৬ মিনিট বাংলায় মুনাজাত করা হয়। মুনাজাতে জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তি, আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুণাহ মাফের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়।
রোববার মুনাজাতে শরীক হতে সূর্য উদোয়ের পূর্ব থেকে শুরু হয় এজতেমামুখী ধনী দরিদ্র যুবক বৃদ্ধ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে মুসল্লিরা ধাবিত হয় এজতেমা ময়দানে। অগণিত মুসুল্লি এজতেমা এলাকার বিভিন্ন সড়ক, মিল কারখানা ও বাড়ির ছাদে বসে মুনাজাতে অংশ নেন। অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মুনাজাতে শরিক হন।
দিল্লীর মাওলানা সাদকে নিয়ে নানা বিতর্ক ও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনার পর  এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হলেও আখেরি মুনাজাত উপলক্ষে রোববার ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আখেরি মুনাজাতের জন্য রোববার আশে-পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল অঘোষিত  ছুটি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মুনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মুনাজাতে অংশ নিতে রোববার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।
গত ১২ জানুয়ারি শুরু হয় তাবলীগের মিলনমেলা এবারের ৫৩তম বিশ্ব  ইজতেমার প্রথম পর্ব। এরপর চারদিন বিরতি দিয়ে ১৯ জানুয়ারি শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। ২১ জানুয়ারি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে দু’পর্বের এবারের  তাবলীগে এজতেমা শেষ হয়।
মুনাজাতের আগে চলে হেদায়তি বয়ান। রোববার সকাল ৮টা ২০ মিনিট থেকে আখেরি মুনাজাতের আগ পর্যন্ত তাবলিগের গুরুত্ব তুলে ধরে হেদায়েতি (দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি) বয়ান করেন তাবলিগ জামাতের বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। এর আগে বাদ ফজর মজমা জোড়ানো সংক্ষিপ্ত বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুর রহিম নকিব।
ভিআইপিদের মুনাজাতে অংশগ্রহণ : বিশ্ব ইজতেমার মূল আকর্ষণ হচ্ছে মুনাজাত। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আগত লাখো লাখো মুসল্লির সঙ্গে ইজতেমা ময়দানের স্থানীয় প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে বসে ইজতেমার ২য় পর্বের আখেরি মুনাজাতেও লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত আলী খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ ও বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের কূটনৈতিক বৃন্দ শরিক হন। এ ছাড়া পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দলমত শ্রেণী পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান মুনাজাতে অংশ নেন।
ইজতেমায় বিদেশী মুসল্লি : এবারের বিশ্ব ইজতেমার দু’পর্বে বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশের তাবলিগ জামাতের সাড়ে ৮ সহস্রাধিক বিদেশী মেহমান এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে এবারের দ্বিতীয় পর্বে ৮০টি দেশের চার সহস্্রাধিক বিদেশী মুসল্লি ইজতেমায় অংশ গ্রহণ করেন। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে নির্মিত মোট ৩টি বিদেশী নিবাসে এসব বিদেশী মেহমানগণ অবস্থান করেন। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মুনাজাত শেষে যানজট : মুনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া মানুষ একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। এতে টঙ্গীর আশে-পাশের সড়ক-মহাসড়ক গুলোতে সৃষ্টি হয় জনজট ও যানজট। ফলে আবারো পায়ে হেটে রওনা দেয় মুসুিল্লরা। আর পাঁয়ে হাঁটা মুসুিল্লদের চাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসুিল্লদের যানবাহন রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থাকে এজতেমা মাঠের আশে-পাশের এলাকায়।
নজিরবিহীন নিরাপত্তা : গাজীপুরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, এবারের বিশ্ব এজতেমায় নজীর বিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আট ভাগে ভাগ হয়ে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ৭ হাজারের অধিক পুলিশের পাশাপাশি পোশাকে ও সাদা পোশাকে র‌্যাব আনসারসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর  সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। ময়দানে মুসল্লীরা ময়দান ত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা মোতায়েন থাকবেন। এছাড়াও আকাশ ও নৌ-পথের পাশাপাশি সড়ক পথগুলোতে খালি চোখ ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাইনোকুলার দিয়ে মুসল্লিসহ সকলের চলার পথ ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে ইজতেমাস্থলে স্থাপিত পুলিশ ওর্ র‌্যাবের পৃথক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়েছে।
পকেটমার আটক : টঙ্গী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, বিশ্ব  ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা থেকে রোববার বেশ কয়েকজন হকার ও পকেটমার আটক করা হয়েছে।
মুসল্লিদের চিকিৎসা : ইজতেমা ময়দান ইলাকায় স্থাপিত টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের তত্ত¦বধানে ক্যাম্প ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পগুলোতে গত তিন দিনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ২০ সহ্রাধিক মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েক জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠান্ডা, পেটের পীড়া জনিত রোগে আক্রান্ত ছিল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ