বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রিমির আত্মত্যাগ

হালিমা খাতুন মুক্তা : শীতকালের সকাল। ছোট রিমি তার খাঁচায় ভরা ময়না পাখিটি নিয়ে বসে আছে। মিষ্টি মিষ্টি রোদ। ভালোই লাগছে। সে ময়না পাখিটিকে খুবই আদর করে। পাখিটির সাথে কথা বলে। ময়না পাখিটিও রিমির সাথে কী যেন কথা বলে। কিচির-মিচির করে ডাকে। মাঝে মাঝে ময়না পাখিটি খুব চুপচাপ হয়ে যায়। রিমি ডাকলে শব্দ করে না। কাছে আসে না। যেন মন খারাপ তার। কি করবে রিমি? ময়না পাখিটিকে নিয়েই তার সময় কেটে যায়। আদর করে রিমি ময়না পাখিটির নাম রেখেছে ঝোটন। ঝোটনের কি যে হলো এই দুইদিন। কিচ্ছু খাচ্ছে না। পানিটুকুও মুখে তুলছে না র্পযন্ত। রিমির বাবা শখ করে রিমিকে ময়না পাখি কিনে দিয়েছে এই এক বছর হল। রিমি তখন থ্রিতে পড়ে। এবার রিমি ফোরে উঠেছে। রিমির বাবা দেশের বাহিরে থাকেন। এবার দেশে ফিরেছেন এই এক মাস হলো। রিমি বাবাকে পেয়ে মহা খুশি। কথা প্রসঙ্গে রিমির বাবা রিমিকে বুঝালেন ময়না পাখিটিকে মুক্ত করে দাও। ও অনেক কষ্ট পায় কিন্তু তোমাকে বলতে পারে না। এ কথা শুনে রিমিতো বাবার উপর অনেক রাগ। রিমি গলা ফুলিয়ে অন্যদিকে চলে যায়। বাবার কাছে ঘেঁষতে চায় না। রিমির মা রিমির বাবাকে বলে,থাকনা। এই একবছর হলো রিমি পাখিটিকে পোষ মানিয়েছে। তুমি আর কিছু বলো না। রিমির বাবাও চুপ করে যান।

কিছুদিন পরের ঘটনা। রিমি আর তার বাবা একটা দাওয়াতে গেলেন। এ ক দুর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায়। ভদ্রলোকের বাসা ৫তলা। লিফট দিয়ে উঠতে হয়। লিফট দিয়ে নামার সময় কারেন্ট চলে যাওয়াতে কিছু সময় রিমিদের লিফটেই আটকে থাকতে হয়। এই যেমন দুই মিনিট। রিমিতো খুব ভয় পেয়েছিলো। বাবাকে পুরোটা সময় জড়িয়ে ধরে রেখেছিল। সেই থেকে বাসায় এসে একটা কথাও কারো সাথে বলেনি। এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়ে। রিমির মা ব্যস্ত হয়ে পড়লে তার বাবা বলে থাকনা ,তাকে ঘুমাতে দাও। 

সকালে উঠলে সব ঠিক হয়ে যাবে। রিমিও ঠিক ফজরের আজানের সময় উঠলো। গুটি গুটি পায়ে সে সাধের ময়না পাখির খাঁচাটিকে নিয়ে বারান্দায় চলে এলো। আস্তে আস্তে খাঁচার দরজা খুলে দিল। পাখিটি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে পরে উড়াল দিল। পাখিটি যেন রিমিকে বলতে চাইলো ভালো থেকো বন্ধু। আমাকে মুক্ত করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। রিমিও তার প্রিয় ময়না পাখির উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখলো। এখন ও স্বাধীন। স্বাধীন মানে কি রিমি আগে ততোটা অনুধাবন না করতে পারলেও গতকালকে লিফটে দুই মিনিট আটকা থাকার পর বুঝেছে। সে বাসায় এসে সিদ্ধান্ত নেয় পাখিটিকে আর আটকিয়ে রাখবে না। পেছন থেকে রিমির মা সব কান্ড দেখছিলেন। প্রথমে তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। পরে যা দেখলেন তাতে তিনি অবাক। কিছুক্ষণের জন্য মেয়েটিকে দেখলেন। তারপর ডাক দিলেন। রিমির মা রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন তুমি পাখিটাকে ছেড়ে দিলে কেন? কষ্টো পাচ্ছো বুঝি। রিমি না সূচক মাথা ঝাঁকালো। তবে? রিমি বললো ওকে এতদিন আটকিয়ে রেখেিেছ। ওর বন্ধুদের কাছে যেতে দেইনি। তাই বলে রিমি ঝর ঝর করে কেঁদে দিল। রিমির মা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো কেঁদোনা মা। 

আল্লাহ তোমার এই আত্মত্যাগ কবুল করবেন। তোমাকে মাফ করে দিবেন। তুমি যে তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো এজন্য আল্লাহ তোমার উপর অনেক খুশি। এমন সময় রিমির বাবাও এসে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। রিমির জন্য তার খুব গর্ব হলো। যা বড়রাও অনেক সময় পারে না। আজ রিমি তা করে দেখালো। খুশিতে চোখে জল চলে আসলো। মনে মনে রিমির জন্য অনেক দোয়া করলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ