শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দারুল উলূম দেওবন্দের সিদ্ধান্ত ছাড়া মাওলানা সা’দকে বিশ্ব ইজতিমায় শরীক হতে দেওয়া হবে না

মাওলানা সা’দ সাহেব কেন্দ্রিক তাবলীগের চলমান সংকট নিরসনে রাজধানীর উত্তরায় দ্বিতীয় বারের মতো উলামা-মাশায়েখের এক পরামর্শ সভা গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরামর্শ সভাটি উম্মুল মাদারিস খ্যাত চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নির্দেশেই অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখসহ প্রায় দশ সহস্রাধিক আলেম শরীক ছিলেন। পরামর্শ সভায় ওলামা প্রতিনিধিগণ তাবলীগ জামাতের চলমান সংকটে মাওলানা সা’দ সাহেব ইস্যুতে বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দের সিদ্ধান্তের উপর সকলে একমত পোষণ করে বলেন, মাওলানা সা’দ সাহেব যতক্ষণ পর্যন্ত তার ভ্রান্ত আক্বিদা-বিশ্বাসের উপর প্রকাশ্যে তাওবা করে ফিরে না আসবেন ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ব ইজতিমাসহ তাবলীগের কোন কার্যক্রমেই তাকে শরীক হতে দেওয়া হবে না। তিনি বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের মতামত ছাড়া বিশ্ব ইজতিমায় শরীক হওয়ার চেষ্টা করলে লক্ষ কোটি তাওহিদী জনতা ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী মাওলানা সা’দকে শক্তভাবে প্রতিহত করবেন।
সভায় উলামায়ে কেরাম আরো বলেন, একজন মাত্র ব্যক্তির কারণে তাবলীগের মতো বিশাল এক দ্বীনি খিদমতকে কোনভাবেই কলুষিত করতে দেওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে দারুল উলূম দেওবন্দের সাথে বাংলাদেশের সমগ্র আলেম সমাজ দৃঢ়ভাবে একমত পোষণ করে সজাগ ও সতর্ক আছেন এবং যে কোন ধরনের উসকানিমূলক অপতৎপরতা প্রতিহত করে দিতেও তৌহিদী জনতা পিছপা হবে না।
জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর উলামা-মাশায়েখ প্রতিনিধি দলের সাথে তাবলীগ জামাতের চলমান সংকট ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তার বাসভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, দারুল উলূম দেওবন্দ কর্তৃক মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সাপেক্ষে বিভক্ত দু’টি গ্রুপ একসাথে বিশ্ব ইজতিমায় আসতে পারবেন। দিল্লীর নিজামুদ্দীনে বিভক্ত গ্রুপের মধ্যে ঐক্য ছাড়া কোন এক পক্ষ বিশ্ব ইজতিমায় শরীক হতে বাংলাদেশে আসতে পারবেন না।
এরপর সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ থেকে ওলামায়ে কেরামের একটি প্রতিনিধি দল গত ২৪ ডিসেম্বর দারুল উলূম দেওবন্দ ও নিজামুদ্দীন সফর করেন। প্রতিনিধি দলটি ফিরে আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এই নিয়ে পুনরায় বৈঠকের আগে পরামর্শের মাধ্যমে ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য উত্তরায় আজকে উত্তরায় উলামা-মাশায়েখগণের এই সভার আয়োজন হয়।
মুফতী মাসউদুল কারীম এর সভাপতিত্বে পরামর্শ সভায় বক্তব্য রাখেন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মুফতী কিফায়াতুল্লাহ, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল কদ্দুস, মাওলানা শিব্বির আহমদ, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন মাওলানা হাফেজ নাজমুল হাসান ও মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আযহারী।
সভায় শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা আনাস মাদানী। লিখিত বক্তব্যে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, “মাওলানা সা’দ সাহেবের মতো বিতর্কিত ব্যক্তিকে যে কোন শর্তেই হোক না কেন- যদি বিশ্ব ইজতিমায় আসার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের দ্বীনি কাজের যেমন বিশাল ক্ষতি হবে, তেমনিভাবে দেশের শান্ত পরিবেশও বিনষ্ট হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা তৈরি হবে। তাই জাতির কর্ণধার উপস্থিত ওলামায়ে কেরামের প্রতি আহ্বান, আপনারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী এই মুবারক মেহনতের সুরক্ষায় শান্তিপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন”।
পরামর্শ সভায় আল্লামা ওলীপুরি উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও যানজটের কারণে তিনি সময় মতো উপিস্থিত হতে পারেননি। তবে ফোনকলের মাধ্যমে আলোচনা সভায় গৃহিত পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তের উপর পূর্ণ সম্মতি ও সংহতির কথা জানান।
পরামর্শ সভায় সম্প্রতি তাবলীগ ইস্যুতে দারুল উলূম দেওবন্দ ও নিজামুদ্দীন মার্কাজ সফরকারী প্রতিনিধিদলের সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হক মাওলানা সা’দ ইস্যুতে দারুল উলূম দেওবন্দের নীতি পূর্বের অবস্থানে বহাল আছে বলে জানান। তিনি এই মর্মে দারুল উলূমের লিখিত ভাষ্যও পড়ে শোনান। যাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, মাওলানা সা’দ অস্পষ্টভাবে রুজুনামা পেশ করলেও তিনি তার বিভ্রান্তিকর আক্বিদা-বিশ্বাসের পক্ষে বক্তব্য প্রচার এবং দেওবন্দের নীতিকে ভুল প্রমাণিত করতে রীতিমত লেখালেখি ও বয়ান চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল (শনিবার) উত্তরা ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে ২টি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। যথা-
১। দাওয়া তাবলী গুরুত্বপূর্ণ একটি দ্বীনি কাজ। সুতরাং কোন বিশেষ মুরুব্বী দারুল উলূম দেওবন্দের অনাস্থা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে এই আমলী কাজের পরিচালনায় কোন ভূমিকায় থাকতে পারেন না। অতএব, গত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ইং তারিখে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রেরিত প্রতিনিধি দলের কাছে দারুল উলূম দেওবন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে মাওলানা সা’দ সাহেবের ব্যাপারে লিখিতভাবে অনাস্থাপত্র হস্তান্তর করায় গতকাল (শনিবার) সভা থেকে শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাওলানা সা’দ সাহেবের ব্যাপারে অনাস্থা জ্ঞাপন করছেন।
২। গত বছরের ২৯ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে যে সিদ্ধান্তাবলী নেওয়া হয়েছিল, গতকালের (শনিবার) এই শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখ পরামর্শ সভা সেই সিদ্ধান্তাবলী অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবী জানায়। বিশেষতঃ আসন্ন বিশ্ব ইজতিমায় বিদেশী মেহমান হিসেবে বিভক্ত অবস্থানে থাকা ভারতের মাওলানা সা’দ সাহেব ও মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা সাহেব; উভয় গ্রুপ এক সঙ্গে আসতে হবে। “কোন এক গ্রুপ একা কোন অবস্থাতেই আসতে পারবে না”- মর্মে সরকারি যে সিদ্ধান্ত ছিল, তা দ্রুত কার্যকর করার জন্য গতকালের (শনিবার) এই ওলামা-মাশায়েখ পরামর্শ সভা থেকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
উপরোক্ত দুই বিষয়ে সমাধান না হওয়ায় সরকারের পূর্বসিদ্ধান্ত  মোতাবেক মাওলানা সা’দ সাহেব বাংলাদেশে আসতে পারবেন না বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ