বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

যান্ত্রিক সভ্যতার ভিড়ে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে  আবহমান গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকিশিল্প। দু’দশক আগেও জেলার সব গ্রামের প্রায় প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতেই ছিল এই ঢেঁকি। কালের বিবর্তনে যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশের ফলে নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার সেই সাথে মানুষ সৌখিন ও আরাম প্রিয় হওয়ায় পরিশ্রম বিমুখ হয়েছে পড়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে এক সময়ের গ্রামীন গৃহস্থলী জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ঢেঁকি নামক যন্ত্রটির ব্যাবহার ভুলেই গেছে। তাই ব্যবহার না থাকায় এই ঢেঁকির সংখ্যা কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। তবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থ বাড়িতে এখনও দু’একটা ঢেঁকি চোখে পড়ে। তাছাড়া আগের মত এখন আর চোখে পড়ে না সেই ছন্দময় সুর জাগানিয়া ধানভানার ঢেঁকি। আগেকার দিনে যখন রাইচমিল বা ফ্লাওয়ার মিল ছিল না তখন ঢেঁকিই ছিল গৃহস্থবাড়ির মহিলাদের চাল, চিড়া, চালের আটা তৈরি, হলুদ, মরিচ ও নানারকম মশলা গুড়ো করা, কুমড়ো বড়ি তৈরির উপকরণ তৈরিসহ নানা রকম কাজের একমাত্র ভরসা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে আজ বিলীন হতে চলেছে আবহমান গ্রামবাংলার চিরচেনা সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকিশিল্প। আগেকার দিনে গৃহস্থ বাড়িতে মেহমান আসলে পিঠা বানানোর জন্য ঢেঁকিতে চাল গুড়ো করে আটা তৈরি করা হতো। সেই আটা দিয়ে নারকেল, কলাই ডাল, তিল ও গুড়সহযোগে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠা বানিয়ে নিজেরা খাওয়া ও অতিথিদের আপ্যায়ন করার মজাই ছিল আলাদা। এখন আর পিঠা তৈরির মূল উপকরণ চাল গুড়া তৈরির জন্য চার পাঁচটা গ্রাম খুঁজলেও একটা ঢেঁকি পাওয়া যায় না। তাই অগত্যা কলে পেষা আটা দিয়েই তৈরি করতে হয় সেই পিঠা। কলে তৈরি আটা দিয়ে পিঠা খুব একটা ভাল হয় না এবং স্বাদও থাকে না। আগে নুতন ধান উঠলে ঢেঁকিতে ধান ভেনে চাল এবং সেই চাল থেকে আটা তৈরি করা হতো। গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠ তৈরির ধুম পড়ে যেত। মোটা জাতের আমন ধান দিয়ে ঢেঁকিতে চিড়া তৈরি হতো। সে চিড়ার স্বাদই ছিল আলাদা। গৃহস্থদের ঘরে ঘরে চিড়া, খেজুরের গুড় ও ঘরে পাতা দৈই দিয়ে হতো সকালের নাস্তা। এখন চিড়া তৈরিরও মেশিন  বসেছে তাতে চিড়া তৈরি হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ