শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

অপ্রতুল বরাদ্দে স্মৃতিসৌধের পূর্ণতা দেয়াসহ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে খুলনা জেলা পরিষদ হিমশিম খাচ্ছে

খুলনা অফিস : অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে খুলনা জেলা পরিষদ হিমশিম খাচ্ছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহুল গল্লামারীতে স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের পূর্ণতা দেয়াসহ পরিকল্পনা মাফিক অনেক কাজই করা সম্ভব হচ্ছে না।
খুলনা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ২৯ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ। আর মাত্র ২৭ দিন পর এক বছর পার করবে তার প্রশাসন। এই এক বছরে তার প্রশাসন মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, মন্দির, শ্মশান, কালভার্ট, মার্কেট, সড়ক উন্নয়ন ও পানির সমস্যা নিরসনে দৃশ্যমান অনেক কাজ করেছে। বিশেষ করে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এডিপির বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় পাঁচ কোটি ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৮৬টি ও নিজস্ব তহবিল থেকে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯৩টি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর অর্থাৎ চলতি এডিপির বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গৃহীত ওই সব প্রকল্পের মধ্যে ১৮০টি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকীগুলোর অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৯০ ভাগ। এডিপি কর্মসূচির আওতায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ৮৩টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে ২৫টি সমাপ্ত হয়েছে। বাকীগুলোর অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৬৫ ভাগ। নিজস্ব তহবিলে পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২১৭টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে ১৫০টি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকীগুলোর শতকরা ৬৫ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এডিপির বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় আরও ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। যা প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দাকোপ-কয়রায় আইলাই ক্ষতিগ্রস্ত অস্বচ্ছল মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে ১২৫টি গৃহ ও রূপসা-বাগেরহাট, কেশবপুর-খুলনা, সাতক্ষীরা-খুলনা সীমান্তে তোরণ নির্মিত হয়েছে। এ সবের পাশাপাশি বছর জুড়ে বিনামূল্যে যুবকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেট প্রদান, প্রশিক্ষণ শেষে যুবতীদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণসহ দৃশ্যমান অনেক সেবামূলক কাজ করেছে সংস্থাটি। কিন্তু এসবের পরও বছর জুড়ে সমালোচনা এসেছে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ, কাউন্সিলদের বসার সু-ব্যবস্থা না করাসহ অনেক বিষয়। তবে সমালোচনার শীর্ষে ছিল খুলনায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহুল গল্লামারীতে স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের পূর্ণতা না পাওয়ার বিষয়টি।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সৌধটি নির্মাণে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১০ থেকে ১১ কোটি টাকা। প্রকল্পে রয়েছে মূল স্তম্ভ নির্মাণ, স্বাধীনতাসৌধ এ্যাপ্রোচ রাস্তা এবং পার্কিং ইয়াড, সীমানা প্রাচীরসহ ফটক ও গার্ড/ওয়েটিং রুম ও রেস্টুরেন্ট এবং ম্যুরাল দিয়ে গেট নির্মাণ, বৃক্ষ রোপন ও দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান তৈরি, চত্বরে পানির ফোয়ারা, বৈদ্যুতিকরণ ইত্যাদি। এর মধ্যে মূল স্তম্ভ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ১৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর মূলস্তম্ভ নির্মাণে দুই কোটি বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অর্থ বরাদ্দের পর স্তম্ভ নির্মাণে দুই দফা দরপত্রের আহ্বান করে জেলা পরিষদ। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৩ জুন আহ্বানকৃত দরপত্রের প্রেক্ষিতে কাজটি পায় খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আজাদ-ইলোরা জেভি। যার ওয়ার্ক অর্ডার হয় ২০০৯ সালের ১৫ নবেম্বর এবং মূলস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে।
এরপর গত ২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা প্রশাসকসহ খুলনার গণ্যমান্য বক্তিবর্গ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে মেয়র সৌধর মাস্টারপ্লান অনুযায়ী অন্যান্য কাজ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। এরপর ২০১১ সালের ১০ মার্চ স্মৃতিসৌধের স্থপতি আমিনুল ইসলাম ইমন নির্মিত ওই মূল স্তম্ভ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনিও স্মৃতিসৌধটিকে পূর্ণতা দিতে মূল নকশা বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ ও মূল নকশা অনুযায়ী স্মৃতিসৌধের পূর্ণতা দিতে ২০১১ সালের মার্চে স্থানীয় সরকার বিভাগে বাকী নয় কোটি টাকা বরাদ্দ পেতে পত্র প্রেরণ করে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ। স্থানীয় সরকার বিভাগে বাকী অর্থ প্রদান না করে ওই বছরের এপ্রিল মাসে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অর্থ প্রদানে সুপারিশ ও নির্দেশনা দেয়। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ২৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুলিপি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ অবধি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ওই অর্থ বরাদ্দ করেনি। ফলে সৌধটির পূর্ণতা না পেয়ে বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, পরিষদের অধিক্ষেত্র জেলার সকল উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে নিয়মিত পাওয়া কিছু বরাদ্দ দিয়েই উন্নয়ন কাজ ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ