শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনা ঘটছেই

নারীর সতীত্বহরণ বা সম্ভ্রমহানির মতো ঘৃণ্য কর্মটি যেন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশময়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীসহ স্কুল-কলেজের মেয়ে বাইরে বেরুতে বিব্রত বোধ করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। নিরাপদে মেয়েটি ঘরে ফিরতে পারবেতো! এমনই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় স্কুল-কলেজগামী মেয়ের অভিভাবককে। শুধু ছাত্রছাত্রীরাই এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন এমন নয়। শিক্ষিকা, অফিসগামী মহিলা, এমনকি বাস, লঞ্চ বা ট্রেনযাত্রী নারীও সম্ভ্রমহানির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকেন। টাঙ্গাইলে রূপা নামের তরুণী শিক্ষিকার বাসচালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরের দ্বারা সম্ভ্রমহানির শিকার হয়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হবার কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। এইতো অল্প কিছুদিন আগের ঘটনা এটি। এমন দুর্বৃত্তপনা আজকাল প্রতিদিন ঘটছে। এর ছিটেফোঁটা মাত্র মিডিয়ায় আসে। এসবের বাইরে আরও বহু ঘটনা ঘটে যায় যা মিডিয়ার চোখে পড়ে না। কোনও কোনও ঘটনা লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে বাইরে প্রকাশ করেন না। থানা পুলিশকে অবহিত করতেও অনেকে অনীহ। কারণ সবসময় এসব করে সুফলতো পাওয়া যায়ই না। কখনও কখনও তা হিতে বিপরীত হয়। উল্টো ভুক্তভোগীদেরই ঝামেলায় পড়তে দেখা যায়।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে ৬ নারীকে ফাঁদে ফেলে তাদের সম্ভ্রমহানি ঘটিয়ে সেসব দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে ছড়িয়ে দেবার অভিযোগে সংগঠন থেকে সদ্য বহিষ্কৃত এক ছাত্রনেতা আরিফ হোসেন হাওলাদারকে পুলিশ পাকড়াও করে গত ২৬ ডিসেম্বর। খবর আমাদের সময় ডট কমের। ভুক্তভোগী নারীদের ১ জন গত ১১ নবেম্বর আরিফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে ভেদরগঞ্জ থানায় মামলা করলে সংগঠন থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। আরিফ গোসলখানায় গোপনে ক্যামেরা বসিয়ে মেয়েটির ভিডিও ধারণ করেন প্রথমে। এরপর সেই ভিডিও দেখিয়ে মেয়েটিকে ফাঁদে ফেলে তার সম্ভ্রমহানি করেন। গত ১৫ অক্টোবর থেকে সম্ভ্রমহানির দৃশ্যগুলো মোবাইলে ছড়িয়ে দেয়া হয়। অভিযুক্ত আরিফ পটিয়ে আরও অনেক মেয়ের সম্ভ্রমহানি ঘটায়। উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটির এক সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষক কাজ সেরে সহিসালামতে বিদেশ চলে গিয়েছিলেন। এ ঘটনার কথা নিশ্চয়ই দেশের মানুষ ভোলেননি। ভেদরগঞ্জের আরিফও একই ছাত্রসংগঠনের বলে জানা গেছে। আশার কথা হচ্ছে, আরিফকে পুলিশ পাকড়াও করে আদালতে সোপর্দ করলে তিনি অপরাধ স্বীকার করেছেন।
পুলিশ দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে না পারলে জাবি’র সেঞ্চুরিয়ান রেপিস্টের যেমন কিছু হয়নি বরং বাইরে চলে গেছেন; তেমনই হয়তো ৬ নারীর সম্ভ্রমলুটেরা আরিফও আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে ছাড়া পাবার চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া এক আরিফ ধরা পড়লেও সারাদেশে আরিফদের কি অভাব আছে? তাই দেশবাসী খুব স্বস্তিতে নেই। স্কুলকলেজগামী মেয়েদের ইজ্জত-আবরু নিয়ে অভিভাবকরা বড্ড উদ্বেগে আছেন। তাঁরা বউঝিদের নিরাপত্তা চান। ছেলেমেয়েদের স্কুলকলেজের যাতায়াত নির্বিঘœ ও নিরাপদ থাকুক এমনই প্রত্যাশা করেন। কারণ এতো উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে দিনযাপন করবেন কেন নাগরিকরা? তাদের জীবনজীবিকা অনিশ্চিত হবে কেন? তাদের মেয়েদের স্কুলকলেজ যেতে সম্ভ্রমহানি ও লাঞ্ছনারইবা ভয় কেন থাকবে? জনগণ এমন অনাকাক্সিক্ষত, শ্বাসরুদ্ধকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান চান। রেপিস্ট, হাইজ্যাকার, সন্ত্রাসী ও হন্তারকদের চান উপযুক্ত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তবে এজন্য সবার আগে প্রয়োজন গণতন্ত্রের চর্চা ও এর শুভ অবমুক্তির।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ