বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খৃস্টান সম্প্রদায়ের শুভ বড়দিন আজ

স্টাফ রিপোর্টার : আজ ২৫ ডিসেম্বর সোমবার। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের খৃস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। এবার পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরের কারণে বড়দিন আয়োজনে রয়েছে বাড়তি আড়ম্বর। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে গির্জাগুলোকে। ধর্মীয় উৎসব হওয়ায় আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির দিকটিও এসে গিয়েছে।
এ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো.; আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে দেশের খৃস্টান ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ খৃস্টান এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেশবাসীসহ খৃস্ট সম্প্রদায়ের সকলকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
এদিকে বড়দিন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাব রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা গ্রহণের সাথে সাথে বড়দিন উদযাপনকালে আতশবাজি, পটকাবাজি ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন নিষিদ্ধ করেছে। এ উৎসব উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি রেডিও এবং টিভি চ্যানেলসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকসমূহ বড়দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
খৃস্টান পল্লীর ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে বড়দিনের আনন্দের ছোঁয়া। গতকাল রোববার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা, গান। আজ সকাল থেকে বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে বলে গির্জা সূত্রে জানা গেছে। উৎসবের প্রস্তুতিও শেষ। গির্জা-বাড়িঘর বিশেষ সাজে সাজানো হয়েছে। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সকলেই উদ্বেলিত। দিনটি উপলক্ষে অনেক খৃস্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসবে। খৃস্টধর্মে বিশ্বাসীদের অনেকের ঘরেই বসানো হয়েছে প্রতীকী গোশালা। বেথেলহেমের গরীব কাঠুরের গোয়াল ঘরেই যীশু খৃস্টের জন্ম। সে কথা স্মরণ করে বাড়িতে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করতেই এটি করেন যীশুর অনুসারীরা।
এই ঐতিহাসিক দিনে আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবী ও রাসূল হযরত ঈসা (আঃ) ফিলিস্তিনের বিখ্যাত জেরুসালেম নগরীর কাছে বেথেলহেম পল্লীতে হযরত মরিয়ম (আঃ)-এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারা খৃস্ট জগতে যথাক্রমে ‘যীশুখৃস্ট’ ও ‘মাদাম মেরি’ হিসেবে পরিচিত। বিশ্বজাহানের একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহ শানে যাল্লাযালালুহু ঈসা (আঃ)কে এই ধরায় পাঠিয়েছিলেন মানবজাতিকে নাস্তিক্য তথা কুফর ও শিরক এবং সর্বপ্রকার জুলুম, অনাচার, পাপ ও মিথ্যাচার থেকে ফিরিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনার উদ্দেশ্যে। কিন্তু হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতায় অন্যান্য নবীর মতো হযরত ঈসা (আঃ)কেও ইহুদীসহ বেদ্বীনী শক্তির বাধা ও চক্রান্তের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
খৃস্টানদের বিশ্বাস, ঈশ্বর (আল্লাহ) তার পরিকল্পনা অনুসারে একমাত্র পুত্রকে এই দিনে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, যিনি পাপী মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য মানবশিশু হিসেবে প্রেরিত হন। এই শিশু ‘যীশুর’ জন্ম ও কর্ম পাপী মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করেছে। যারা যীশুকে বিশ্বের ত্রাণকর্তারূপে স্বীকার করেন তারাই খৃস্টান নামে অভিহিত।
রাজধানীর গির্জা ও হোটেলেগুলো বড়দিনের ঐতিহ্যবাহী জাঁকজমকপূর্ণ সাজসজ্জায় সাজানো হয়েছে। গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে। গির্জা ও অভিজাত হোটেলগুলোতে টুকটুকে লাল পোশাক পরা সফেদ দাঁড়ি-গোঁফের বুড়ো সান্তা ক্লজ উপহারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছোট্ট সোনামণিদের হাতে তুলে দেবেন মজার মজার উপহার।
রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় (পবিত্র জপমালার গির্জা) বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। গির্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজধানীর গির্জাগুলোর পাশাপাশি পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁও, লা মেরিডিয়ান, রেডিসন ও ওয়েস্টিনসহ বিভিন্ন হোটেল ও বাসাবাড়িতে সুসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি ও বড়দিনের কেক স্থাপন করা হয়েছে আরো কয়েকদিন আগে থেকেই। পশ্চিমাদেশগুলোর অনুকরণে হোটেলগুলোতে বড়দিনের আয়োজন উপলক্ষে সকাল ও বিকালে শিশুদের জন্য রয়েছে সান্তাক্লজের উপহার অনুষ্ঠান এবং সবার জন্য বুফে ডিনারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
দিনটি উপলক্ষে অনেক খৃষ্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসবে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেবেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেককে গ্রামের বাড়ির দিকেও ছুটতে দেখা গেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ