মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি জনগণের রায় মেনে নেবে - মির্জা ফখরুল

 

স্টাফ রিপোর্টার : আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে জনগণ যে রায় দেবে তা বিএনপি মেনে নেবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, যদি আওয়ামী লীগ সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়, তাহলে জনগণই প্রমাণ করবে তারা কাকে চায়। জনগণ যে রায় দেবে, তা বিএনপি মাথা পেতে নেবে। বিএনপির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেন, এই নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করবে। তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শনিবার দুপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এর আগে বেলা দুইটার দিকে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের গণতন্ত্র আজ পুরোপুরি নির্বাসিত। মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। দেশে আজ মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। সাংবাদিকদের লেখার অধিকার নেই। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। সরকার বেআইনিভাবে দেশ শাসন করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীনতার ঘোষক ও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনপ্রবর্তক জিয়াউর রহমানকে। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি অসংখ্য অগণিত মুক্তিযোদ্ধাদের, যারা যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন এবং আমাদের এনে দিয়েছেন এই স্বাধীনতা। শ্রদ্ধা নিবেদন করছি সকল মুক্তিযোদ্ধাকে, যারা এই দেশের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন।

তিনি বলেন, ’৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার পেতে। কিন্তু আজকে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে ৪৭ বছর পরও আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি, লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র পুরোপুরি নির্বাসিত। মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষ এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে না। এবং তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও চলে গেছে। কারণ দুর্ভাগ্য জনকভাবে সরকার আমাদের শাসন করছে বেআইনি ও অনেতিকভাবে। তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে প্রায় সকল ব্যবস্থা পাকাপোক্তও করেছে।

তিনি বলেন, আজকে আমরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাথে নিয়ে জাতীয় স্মৃতি সৌধে শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি। অর্পণ করেছি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার সমাধিতেও। এখানে শপথ নিয়েছি আমরা গণতন্ত্রের জন্য যে লড়াই করছি তা অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখবো। তবে শ্রদ্ধা জানানোর পথে পুরোপুরি প্রতিবন্ধকতা ছিল। বার বার খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর আটকে দেয়া হয়েছে যাতে করে আমরা সময় মতো শ্রদ্ধা জানাতে আসতে যেতে না পারি।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, একটি গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে যতটুকু লড়াই সংগ্রাম সম্ভব আমরা তারচেয়েও বেশি করছি। আমরা বার বার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। খালেদা জিয়া আপসহীন নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই আমরা গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে ১/১১ অবৈধ ও বেআইনি সরকার ক্ষমতায় আসে। তারপরও খালেদা জিয়ার দৃঢ়তায় কিছুটা হলেও গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই ২০০৮ সাল থেকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মী গুম খুন ও হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রায় সাত লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৭৪ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা লক্ষ্যে অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো। 

তিনি বলেন, সরকার আমাদেরকে শাসন করছে তা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এবং অনৈতিকভাবে। এ সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করবার জন্য সকল ব্যবস্থা প্রায় পাকাপোক্ত করেছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলী অপর্ন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা শপথ নিয়েছি যে, গণতন্ত্রের জন্য যে সংগ্রাম শুরু করেছি সেই সংগ্রাম আমাদের অব্যাহত থাকবে, লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত। তিনি বলেন, গত ৮ বছরে সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনে হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গুম-খুনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এতো কিছুর পরেও আমরা গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করছি, গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের সংগ্রাম চলছে।

 নেতাকর্মীদের ঢল: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন উপলক্ষে রাজধানীর শেরে বাংলানগরস্থ  জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে জড়ো হন। সেখানে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। উদ্দেশ্য মহান বিজয় দিবসের আড়ালে রাজপথে রাজনৈতিক শোডাউন দেয়া। সরেজমিনে দেখা গেছে, জিয়ার মাজারে আসতে নেতাকর্মীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ফলে নেতাকর্মীদের অনেকেই ভেতরে যেতে পারেনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ