শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বড়পুকুরিয়ায় ২ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগাভাগি\ হাউজিং এস্টেটে স্থগিত

দিনাজপুর অফিস : দিনাজপুরে টেন্ডারবাজির মহোৎসব শুরু হয়েছে। একই দিনে ৪ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে আওয়ামী ঠিকাদারদের মধ্যে হয়েছে তুলকালাম ঘটনা। দিনাজপুর হাউজিং এস্টেটের প্রায় ২ কোটি টাকার টেন্ডার আওয়ামী ঠিকাদারদের মাঝে ভাগাভাগি না হওয়ায় আওয়ামী ঠিকাদারদের চাপে কর্তৃপক্ষ লটারী স্থগিত ঘোষণা করেছে। একই সাথে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ২ কোটি টাকার অপর একটি টেন্ডার ভাগাভাগি করে নিয়েছে আওয়ামী ঠিকাদাররা। জানা গেছে, গতকাল সোমবার ছিল জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দিনাজপুর ডিভিশনের হাউজিং এস্টেটের রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজের ৭টি গ্রুপের ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার টেন্ডারের লটারীর দিন। টেন্ডারে দিনাজপুরের শতাধিক ঠিকাদার সিডিউল কিনে দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারদের দাখিল করা সবকটি সিডিউল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গতকাল লটারীতে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হলে টেন্ডার ভাগাভাগি না হওয়ায় বাধ সাধে আওয়ামী লীগের কিছু সংখ্যক ঠিকাদার। বেলা ১২টার সময় হাউজিং এস্টেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হোরায়রা আকষ্মিক টেন্ডার বাতিলের ঘোষণা দিলে দেখা দেয় তীব্র উত্তেজনা। এতে উপস্থিত ঠিকাদাররা ক্ষিপ্ত হয়ে লটারী অনুষ্ঠানের দাবি জানালে কর্তৃপক্ষ টেন্ডার লটারী না করে অফিস ছেড়ে চলে যান। এদিকে সাধারণ ঠিকাদাররা জানিয়েছে, ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দাখিলের ফলে সরকার সমর্থক কয়েকজন ঠিকাদারের সিডিউল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাতিল হওয়াসহ ভাগাভাগি না হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের চাপে কর্তৃপক্ষ টেন্ডার বাতিল করতে বাধ্য হন। এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হোরায়রা সাংবাদিকদের জানান, কিছু ঠিকাদারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে টেন্ডার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অপরদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ১৩শ থেকে ১৫শত ফিট ভূ-গর্ভে খনি কর্তৃপক্ষ কয়লা সাপোর্টিং হিসেবে গত দেড় মাস পূর্বে ঢাকায় পেট্রোবাংলা অফিসে ২ কোটি টাকার কাঠ সরবরাহের নিমিত্তে একটি টেন্ডার আহবান করেন। আওয়ামী ঠিকাদারদের কারসাজিতে ওই টেন্ডার বাতিল করে রি-টেন্ডার আহবান করা হয়। রি-টেন্ডারে প্রায় ১১৫টি দরপত্র বিক্রয় হলেও জমা পড়ে মাত্র ৬টি। কর্তৃপক্ষ আওয়ামী ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়ার সাথে আঁতাত করে মালামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে পুকুর চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। যে কারণে কোম্পানি একদিকে কোটি কোটি টাকা খরচ করার পাশাপাশি ঠিকাদারদের নিম্নমানের কাঠ সরবরাহের কারণে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখিন হচ্ছে। এতে করে অল্প সময়ের মধ্যে ভূ-গর্ভে ভূমি ধসের সৃষ্টির পাশাপাশি উপরিভাগের ব্যাপক জনবসতির, ঘরবাড়িসহ শত- শত বিঘা ফসলী জমি বিনষ্ট হচ্ছে। আবার সেখানেও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের ক্ষতিপূরন বাবদ কোম্পানিকে দিতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূ-গর্ভের এক শ্রমিক নেতা জানান, এ সব অতি নিম্নমানের কাঠ সরবরাহের কারণে ঘন ঘন ভূমি ধসের ঘটনা ঘটছে। উল্লেখ্য, গত ৯ মে খনিতে যে আরো একটি টেন্ডার ওপেন হয় সেই দরপত্রে প্রাক্কলিত ব্যয়ের বিপরিতে ৪০ লাখ টাকা দর প্রদান করেন সর্ব নিম্ন দরদাতা। প্রকৃতপক্ষে প্রাক্কলিত ব্যয়ের মূল্য ছিল ৩৬ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্পে ক্রয় বিভাগে যতগুলো টেন্ডার আহবান করা হয়েছে তার প্রায় সবকটিতে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সুধী সমাজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোরালো দাবি জানিয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ