কারাবাসীদের গার্মেন্টস কারখানা
কারাবাসীদের জন্য কারাভ্যন্তরেই মিনি গার্মেন্টস কারখানা চালু করতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেল কর্তৃপক্ষ। আনা হচ্ছে বিদেশ থেকে উন্নত মেশিন। কারখানাটি চালু হলে এখানে ৪০০ কারাবাসী কাজ করতে পারবেন। যেসব কারাবাসী এখানে কাজ করবেন তাদের প্রত্যেকের নামে একাউন্ট খোলা হবে। এঁরা ইচ্ছে করলে বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারবেন। আবার সব টাকা জমা রেখে সাজাশেষে তা একসঙ্গেও নিয়ে যেতে পারবেন। এমনই একটি ভালো খবর ছাপা হয়েছে গত ৬ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকে। সাধারণত কোনও ব্যক্তি অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গৃহীত হয়। বৈচারিক কার্যক্রম শেষে আসামিকে অপরাধ অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করতে হয়। অবশ্য বিচারের রায় হবার আগেও আসামি গ্রেফতার হলে জেলখানায় আটক রাখা হয়।
ফৌজদারি অপরাধ করলেই কেবল মানুষকে জেলে রাখা হয় এমন নয়। রাজনৈতিক কারণেও অনেককে জেলেপুরে রাখবার ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলখানায় বন্দী হয়ে আছেন। সাজা ভোগ করছেন। এদের অনেকের সময় কাটতে চায় না জেলের ভেতর বসে বসে। আবার কারাভোগীদের পরিবারের লোকদেরও অনেক সময় দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। কারাভোগীদের কাজের মধ্যে রাখা গেলে তাদের সময় যেমন কাটবে; তেমন জেলের ভেতর গার্মেন্টস কারখানার মতো কর্মকা- চালু করা গেলে তাদের উপার্জনের ব্যবস্থা হবে। শুধু তাই নয়, এ অর্থ বাড়িতে পাঠিয়ে পরিবারকে সাহায্য করতেও পারবেন কয়েদিরা। এমনকি সাজাভোগ শেষে জেলখানায় উপার্জিত অর্থ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন তারা। এটা তাদের অনেকের জন্য জেলখানার উপহার বলেও বিবেচিত হতে পারে। কাজেই নারায়ণগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ কয়েদিদের জন্য যে গার্মেন্টস কারখানা স্থাপনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে তা অভাবনীয় উদ্যোগ বৈকি। অবশ্য আগে থেকেই কোনও কোনও কারাগারে কয়েদিদের দ্বারা মোড়া, ঠোঙা, চেয়ার-টেবিল ইত্যাদি বানানোর ব্যবস্থা রয়েছে বলে আমরা জানি। এমন উদ্যোগও কিন্তু কম নয়।
বলতে দ্বিধা নেই, অনেক কয়েদি জেল থেকে মুক্ত হয়ে আবার অপরাধ করেন। কেউ চুরির অপরাধে জেল খাটার পর বের হয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাত হন এবং আবারও জেলখানায় ফেরেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে তা সব কারাগারে বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের অনেক কারাবাসীই জেল থেকে মুক্ত হয়ে সম্পদে রূপান্তরিত হতে পারেন। আমরা নারায়ণগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষকে কারাবাসীদের জন্য গার্মেন্টস কারখানা প্রতিষ্ঠার উদোগ নেবার জন্য আরেকবার সাধুবাদ জানাই।