বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার: সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে বলে আবারো হুশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র চক্রান্ত আর বড় বড় বুলির মায়াজাল সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের ঘাতক প্রতিহিংসাপরায়ণ শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। কারণ জনগণের ললাটে একটি বিষাক্ত কাঁটার নাম আওয়ামী লীগ। সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ কোন নীলনকশার ফাঁদে পা দিবে না। গতকাল সোমবার নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, উনাকে (মরহুম আনিসুল হক) কেবল সমাহিত করা হয়েছে। এটা আমি মনে করি যে, এই মুহূর্তে তার লাশ দাফনের সাথে সাথে নির্বাচন কে কি করবেন-এটা আমি খুব একটা শোভন মনে করছি না। নির্বাচনের বিষয়টা আসুক। আমরা দেখেছি যে, তার লাশ দাফনের সাথে সাথে অনেকে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। এটা আমাদের সমাজে এ্ বিষয়গুলোকে ভালো ভাবে নেয় না। কয়েকদিন পর দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানানো হবে বলে জানান রিজভী।
প্রায় দুই বছর ধরে ওই দায়িত্ব পালনের মধ্যেই চলতি বছর জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিসে আক্রান্ত মেয়র আনিসুল হক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ নবেম্বর তার মৃত্যু হয়। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপণ জারির পর ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইসির সহকারী সচিব রাজীব আহসান বলেন, ৩০ নবেম্বর থেকে ৯০ দিন, অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়র পদে উপ নির্বাচন শেষ করতে হবে। কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে অন্তত ৪৫ দিন হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করতে পারে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। আওয়ামী লীগের সমর্থনে ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর কম্বোডিয়া সফর প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সড়কের নামফলক উদ্বোধন করতেই প্রধানমন্ত্রী কম্বোডিয়া গেছেন। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের লুটপাট-দুর্নীতি আর স্বেচ্ছারিতায় দেশ এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ বিষাদ ঘনঘোর নৈরাজ্য বিরাজ করছে। এই যে দুঃসময় চলছে, এমন দুঃষময়েও প্রধানমন্ত্রী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে পিতার নামে সড়ক নামকরণ ও তা উদ্বোধন করতে চলে গেলেন সুদুর কম্বোডিয়ায়। বাংলাদেশে যেন হবুচন্দ্র রাজার উদ্ভট রাজত্ব চলছে। রাজকোষ শূন্য করে শুধু পরিবারের নামকে প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া প্রতিযোগিতায় নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শাসকদলের সবাই।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট ঘরের কাছেই এই সংকট প্রধানমন্ত্রী দেখেন না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি ঘর থেকে এক পা ফেললেন না। সংকট সমাধানে বিএনপিসহ বিশিষ্টজন ও বুদ্ধিজীবীরা চীন-ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে বাংলাদেশের পক্ষে রাজনী করতে উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানালেও রহস্যজনক কারণে তিনি উদ্যোগী হলেন না।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ফের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে দলের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশি বাঁধা ও অসংখ্য নেতা-কর্মীর গ্রেপ্তার এবং চট্টগ্রাম সদরঘাট থানার যুব দলের যুগ্ম আহবায়ক হারুন চৌধুরীকে ছাত্রলীগ কর্তৃক হত্যার ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী। একই সঙ্গে গত ১ ডিসেম্বর দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের ধানমন্ডির বাসভবনে মরহুমের স্ত্রী নিলুফার মান্নানের কুলখানির অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর এবং রোববার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের নাটোরের বাসায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদও জানান জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। অবিলম্বে ওইসব ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পদ্মা সেতুতে দুনীতি হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কম্বোডিয়া সফরে গিয়ে বলেছেন-নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর উদ্যোগ নেয়ায় সবাই সমীহ করে। পদ্মা সেতুকে নিয়ে দুর্নীতির মাল্টিডাইমেনশন এর কথা নিশ্চয়ই মানুষ ভুলে যায়নি-যা দেশের মানুষকে লজ্জিত ও হতবাক করে দিয়েছিল, পাশাপাশি সেকথাও কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বলা উচিৎ ছিল। পদ্মা সেতু শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই আওয়ামী সরকারের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র জনমানষে ভেসে ওঠে। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের মন্ত্রীরা বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার ধমক দিয়ে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের গতিকে থামিয়ে দিয়েছেন। পদ্মা সেতুকে নিয়ে দুর্নীতির আন্তর্জাতিক অভিযোগগুলো কথার ফুলঝুরি দিয়ে ঢাকা যাবে না। তিনি বলেন, ভুল নীতির কারণে আওয়ামী সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে নিতে পারছে না। বিদেশী অনুদান প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন তছনছ হয়ে গেছে। সরাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর বেহাল দশায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। লন্ডভন্ড সড়কে মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় থমকে গেছে।
ব্যাংকগুলোর মূলধন খেয়ে ফেলা হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সতেরো হাজার কোটি টাকা। পিঁয়াজের কেজি বিশ টাকা থেকে এখন একশো বিশ টাকা, দশ টাকার চাল এখন সত্তর টাকা, বিদ্যুতের দাম বর্তমান সরকারের আমলে আট বার বাড়ানো হয়েছে, নানা ট্যাক্সের চাপে মানুষের জীবন বিপন্ন, অশান্তির আগুণে ভিতরে ভিতরে মানুষ দগ্ধ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যদি দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হতেন তাহলে দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে নামকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন না।
প্রধানমন্ত্রী চাইলে আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আওয়ামী লীগ, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যে রিজভী বলেন, সিইসি সমস্বরে বলেছেন-সরকার চাইলে আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ইসি। আমরা বারবার বলেছি-বর্তমান সিইসি আওয়ামী সরকারের কৃপাধন্য। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সাথে সাথে সিইসি’র একই সুর প্রমান করে-সিইসি সরকারের নির্মিত সেই পুরনো পথেই হাঁটবেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব দেশে অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে চাকরি রক্ষার্থে বর্তমান সিইসি অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টি আমলে নিবেন না। বিএনপি’র পক্ষ থেকে আবারো দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই-প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয় আপনি আওয়ামী সরকারের অশুভ ইচ্ছা পূরণের ‘খাঁচায় বন্দী তোতা পাখী হবেন না। সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ কোন নীলনকশার ফাঁদে পা দিবে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ