বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ফাদার ওয়াল্টার অপহৃত নন স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন

নাটোর সংবাদদাতা : নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ধর্ম পল্লীর পাল পুরোহিত ও সেন্ট লুইস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও (৪২) অপহৃত নন, স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানিয়েছেন নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার। শনিবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিং-এ তিনি এ তথ্য জানান। পুলিশ সুপার জানান, ফাদার ওয়াল্টার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে নিজেই আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। সিলেটে আটক হওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে তাকে নাটোরে নিয়ে আসা হয়। পুলিশ সুপার  বলেন, ‘ফাদার ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও কে কেউ অপহরণ করেননি। এমনকি তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবীর বিষয়টিও সঠিক নয়। পুলিশ হেফাজতে তাঁর বক্তব্য ও তথ্যপ্রযুক্তি পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। রোববার তাকে নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজ্রিস্ট্রট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক খোরশেদ আলম ধর্ম পল্লীর পাল পুরোহিত ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিওকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। পুলিশ জানায়, ২৭ নবেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি স্বেচ্ছায় তার সেলফোনটি সুইচ অফ করে মোটর সাইকেল চালিয়ে একাই বনপাড়া থেকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক হয়ে ঢাকার দিকে যান। বনপাড়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তার মোটর সাইকেল চালানোর ছবি পাওয়া গেছে। পরে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরে গিয়ে হোটেলে রাত্রি যাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর সেতুর টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরায় তাঁকে টোল দিতেও দেখা গেছে। পরের দিন তিনি মোটর সাইকেলে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে যান। সেখানে তাঁর মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশে ফেলে রেখে তিনি অবকাশ নামে একটি আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করেন। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে নবীগঞ্জ থানার পুলিশ মোটরসাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ করে। পর দিন তিনি বাসে করে সিলেট শহরে যান। সেখানে হোটেলে অবস্থান করার পর তিনি শুক্রবার দুপুরের পরপরই দক্ষিণ সুরমা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে তাঁর বড় ভাইকে ফোন করেন। এ সময় নাটোর জেলা পুলিশ মোবাইল ফোন ট্র্যকিংয়ের মাধ্যমে সেখানে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পুলিশের সিলেট সাউথের উপ-কমিশনার বাসুদেব বণিককে জানান। পরে তিনি সেখান থেকে ফাদারকে উদ্ধার করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের একটি দল তাকে সিলেট থেকে ঢাকায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এছাড়া নাটোর জেলা পুলিশ তাঁকে ঢাকা থেকে নাটোরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি আদৌ অপহৃত হননি। স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন। তবে তাঁর বক্তব্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তবে কোন ঘটনায় ফাদার ওয়াল্টার মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ছিলেন এবং কেন তিনি আবার আত্মপ্রকাশ করলেন তা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তা এ পর্যায়ে বলা যাচ্ছে না।’ আত্মগোপন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বেকায়দায় ফেলানোর দায়ে তার বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। ফাদারকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, তবে সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তার এ রহস্যজনক নিখোঁজের আরও কারণ থাকতে পারে, যা আরও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে, তবে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব কিছু করা হবে বলে জানান তিনি। নিখোঁজ থাকা অবস্থায় পুরোহিতের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি তাহলে কি ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর এ ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। এটা শুধুমাত্র একটি প্রতারণা। পেস ব্রিফিং পুলিশ সুপার ছাড়াও বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আবদুল হাই ও বড়াইগ্রাম থানার ওসি শাহরিয়ার খানসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। গত সোমবার বিকেলে বড়াইগ্রামের বনপাড়া থেকে জোনাইল ধর্মপল্লীর উদ্দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হওয়ার পর ফাদার ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হন। পরদিন দুপুরে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বড়াইগ্রাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হলে পুলিশ তাঁকে উদ্ধারের জন্য অভিযান শুরু করে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ