শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বনানীতে চির নিদ্রায় শায়িত মেয়র আনিসুল হক

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : এক রাজার গল্প বলে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিজের উপস্থাপনায় প্রচারিত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান অন্তরাল‘র ইতি  টেনেছিলেন আনিসুল হক, ভক্তদের চোখে সেই রাজার মতোই চির বিদায় নিলেন আনিসুল হক। শনিবার বিকালে ঢাকার বনানী কবরস্থানে সমাহিত করার পর ভক্তরা বলেন, মেয়র হিসেবে আনিসুল হককে কখনও ভুলতে পারবেন না তারা।
তার একদিন পর.....
‘প্রিয় আনিসুল হক, তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম ...। আপনি না থাকলেও আপনার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা ভুলবো না। যে সুন্দর নগর উপহার দিতে চেয়েছিলেন, সেই নগরের প্রতিটি প্রান্তেই আপনাকে খুঁজবো।’এই কথাগুলো লেখা আছে সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের বনানীর ২৩ নম্বর রোডের বাসার সামনে তার স্মরণে খোলা শোক বইয়ে। গতকাল রোববার এই শোক বই খোলা হয় ।
 মেয়র হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আগেই নানা মাধ্যমে জনপ্রিয় মুখ ছিলেন আনিসুল হক । সকল জনপ্রিয়তাকে সঙ্গী করে বনানীতে দিলেন চিরঘুম । বিদায় আনিসুল হক । ফের দেখা হবে ওই আকাশের পরে ...
শনিবার দুপুরে লন্ডন থেকে মরদেহ আসার পর বনানীর বাড়িতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আর্মি স্টেডিয়ামে জানাযা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের। তারপর কফিন নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। হাজারো মানুষ অংশ নেন আনিসুল হকের জানাজায়, স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে তা দেখানোও হয়। এর আগে তার বনানীর বাসায় নেওয়া কফিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠজনরা ওই বাসায় গিয়ে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
ক্ষমতাসীন দলটির সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতা থাকলেও আনিসুল হককে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন বিএনপি নেতারাও , নানা মতের ব্যবসায়ীরাও এক হয়েছিলেন সেখানে। যে দল থেকে আনিসুল হক মেয়র হয়েছিল, সেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, ওই দায়িত্ব পালনের জন্য দ্বিতীয় আনিসুল হক আর পাওয়া যাবে না।
জানাযার আগে পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ছেলে নাভিদুল হক বলেন, “আমার বাবা সুখী মানুষ ছিলেন। “তিনি তার বা পরিবারের স্বার্থে কখনও কাউকে কষ্ট দেননি। কারও খারাপ চাইতেন না কখনও। তারপরও কাজের খাতিরে আপনাদের কারও মনে তিনি কষ্ট দিয়ে থাকলে দয়া করে তাকে মাফ করে দেবেন।” আগামী ৬ ডিসেম্বর গুলশানের আজাদ মসজিদে আনিসুল হকের কুলখানি হবে বলে জানান ছেলে নাভিদ। আনিসুল হকের মরদেহ আসার পর বিমানবন্দর থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত পুরো সময় উপস্থিত ছিলেন ছোট ভাই সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
চার মাস আগে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ৬৫ বছর বয়সী আনিসুল হক, ধরা পড়ে ‘ সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’য়ে আক্রান্ত তিনি। এরপর অধিকাংশ সময় তিনি হাসপাতালে আইসিইউতে ছিলেন। বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এই পুরোটা সময় স্বামীর সঙ্গে থাকা রুবানা স্বামীর লাশ নিয়ে বনানীর বাড়িতে যাওয়ার পর সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন রুবানা। শেখ হাসিনা আনিসুল হকের লাশের সামনে মোনাজাত করেন। এরপর রুবানা ও তার সন্তানদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান, সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরও সেখানে যান।
 তোফায়েল সাংবাদিকদের বলেন, “একদিকে তার সততা ছিল, অন্যদিকে তার যোগ্যতা ছিল। যতদিন ঢাকা মহানগর থাকবে, মানুষের স্মৃতিতে তিনি অক্ষয় হয়ে বিরাজ করবেন।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন আনিসুল হকের কফিনে। আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, “নির্দলীয় অবস্থান থেকে স্থানীয় সরকার যে চালানো যায়, উন্নয়ন করা যায়, সেটা (নজির) তিনি রেখে গেছেন।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আনিসুল হকের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালও যান আনিসুল হকের শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে। জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি (আনিসুল হক) ঢাকা শহর নিয়ে যে স্বপ্ন দেখে গেছেন, কেউ না কেউ যেন তার স্বপ্নগুলো পূরণ করে তাকে শান্তি দেয়।”
কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও বনানীর বাড়ির সামনে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। তাদের অনেকের চোখে ছিল পানি। সেখানে ছিলেন তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী গ্রুপ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের একজন ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা কুতুবউদ্দিন মনে করেন আনিসুল হক বেঁচে থাকলে ঢাকা নগরীর কাজ আরও এগোত। তিনি বলেন, “ঢাকা হয়ত সিঙ্গাপুর হত না। কিন্তু এখন ঢাকা যেমন দেখছি, তার চেয়ে উন্নত হত নিশ্চয়ই।”
ঢাকার জন্য আনিসুল হক নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন বলে মনে করে গুলশানের বাসিন্দা বিশ্ব ব্যাংক কর্মকর্তা ঈশিতা আলম অবনী। “একশ ভাগ নয়, আমি বলব তিনি নিজেকে দুইশ ভাগ উজাড় করে দিয়েছেন। আমার মনে হয় অতিরিক্ত কাজের চাপ তার শরীরের পড়েছিল।”
আনিসুল হকের মতো নেতৃত্ব চাকরি জীবনে পাননি বলে জানান উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম। “করপোরেশনে চাকরি করি আজ আঠারো-উনিশ বছর। তার মতো নেতৃত্ব আমরা পাইনি। পাব কি না তাও জানি না।” আনিসুল হকের পথ ধরে তার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার আশা প্রকাশ করেন মাহবুব।
ব্যবসায়ী নেতাদের অনেকে উপস্থিত হন বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের বনানীর বাড়িতে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি ছিলেন আমাদের ব্যবসায়িক লিডার। তার চলে যাওয়ায় দেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে।” আনিসুল হককে এফবিসিসিআইর ‘সফলতম সভাপতি’ অভিহিত করেন তার মেয়াদের পর ওই দায়িত্ব পালনকারী এ কে আজাদ।
 সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এফবিসিসিআইর সভাপতি ছিলেন আনিসুল হক। তার আগে বিজিএমইএর সভাপতিও ছিলেন তিনি।
মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুলের তৈরি পোশাক ছাড়াও বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ডিজিযাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড এবং নাগরিক টেলিভিশনের মালিকানাও আছে তার ব্যবসায়িক গ্রুপের।
টিভি উপস্থাপনা দিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া আনিসুল হক পরে ব্যবসায়ীদের নেতা হিসেবে চেনামুখ ছিলেন, তবে রাজনীতিতে তার পা রাখা আকস্মিকভাবেই ঘটে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে তাকে প্রার্থী করে, তখন তা চমক হিসেবেই দেখা গিয়েছিল। শুক্রবার লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক জামে মসজিদে প্রথম জানাযার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কথায়ও তা ফুটে ওঠে- “আমরা অনেকে অবাক হয়েছিলাম তিনি যখন রাজনীতিতে যোগদান করেন।”
 মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এই দুই বছরে অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে অনেকের নজর কেড়েছিলেন আনিসুল হক। ঢাকার কূটনীতিকপাড়া বারিধারা ও গুলশানের বিভিন্ন দূতাবাসের দখলে থাকা ফুটপাতও দখলমুক্ত করেন মেয়র আনিসুল। পরিবহন শ্রমিকদের বিরোধিতার মুখেও তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করেছিলেন তিনি। এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরণ, ঢাকা চাকা, বিলবোর্ড উচ্ছেদ, গ্রিন ঢাকা কর্মসূচিসহ বেশকিছু উদ্যোগের জন্য আলোচিত হন তিনি। তবে অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাইরে আনিসুল হক তেমন মনোযোগ দেননি বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।
নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই রুবানা ও আনিসুল হক যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ অগাস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকে হাসপাতালেই ছিলেন তিনি; তারপর আর জীবনে ফেরা হয়নি তার।
অ্যাম্বুলেন্সে এসে ছেলের লাশ দেখে গেলেন বাবা
সেনানিবাস থেকে অ্যাম্বুলেন্সে এসে শনিবার দুপুরে আনিসুল হকের লাশ দেখে গেছেন তার বাবা নব্বই ঊর্ধ্ব শরীফুল হক। বার্ধক্যের ভারে অসুস্থ শরীফুল হককে দুদিন বড় ছেলের মৃত্যুর কথা জানানো হয়নি। আনিসুল হকের ছোট ভাই সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক ভাইয়ের কফিনের সঙ্গে ছিলেন সব সময়। তার সেনানিবাসের বাসা থেকে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বাবা শরীফুল হককে দুপুরে আনা হয়েছিল আনিসুলের বনানীর ওই বাসায়। কিছুক্ষণ ছেলের লাশের পাশে থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্সে করেই আবার সেনানিবাসে ছেলের বাসায় ফিরে যান তিনি।
বনানীর ওই বাসায় আনার পরই তাকে ছেলের মৃত্যুর কথা বলা হয় বলে আনিসুল হকের একান্ত সহকারী একেএম মিজানুর রহমান জানান। তিনি বলেন, তিনি নিজেও অসুস্থ। কথাবার্তা বলতে পারেন না। ছেলের মৃত্যুর খবর সইতে পারবেন কি না সেই ভাবনা থেকে আগে তাকে এ খবর দেওয়া হয়নি।
 ছেলের লাশ দেখে শরীফুল হক কোনো কথা বলেননি জানিয়ে তিনি বলেন, “কান্নাকাটিও করেন নাই। চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখেছেন। উনার ফিলিংস আমরা বুঝতে পারি নাই। দেখার পর উনাকে নিয়ে আবার অ্যাম্বুলেন্সে করে সেনানিবাসের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” আইসিইউ সুবিধা সম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স থেকে শরীফুল হককে হুইল চেয়ারে করে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার নাকে নল লাগানো ছিল।
 নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কবিরহাটের বাসিন্দা শরীফুল হক আনসার বাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। তার অপর দুই ছেলে ইকবাল হক ও হেলাল হক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। ইকবাল চিকিৎসক এবং হেলাল যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন। নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই আনিসুল হক সপরিবারে লন্ডন যাওয়ার পর তার এই বাসা থেকে শরীফুল হককে সেনানিবাসের ওই বাসায় নেওয়া হয়।
তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে...
‘প্রিয় আনিসুল হক, তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে...। আপনি না থাকলেও আপনার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা ভুলবো না। যে সুন্দর নগর উপহার দিতে চেয়েছিলেন, সেই নগরের প্রতিটি প্রান্তেই আপনাকে খুঁজবো।’ এই কথাগুলো লেখা আছে সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের বনানীর ২৩ নম্বর রোডের বাসার সামনে তার স্মরণে খোলা শোক বইয়ে। লিখেছেন ফয়সাল খান নামের এক নগরবাসী। প্রিয় মেয়রকে নিয়ে এমন আরো অনেক অনুভূতি ব্যক্ত করছেন সবাই, লিখছেন মনের কথা।
রুহুল আমিন নামে একজন লিখেছেন, ভালো মানুষ চিরদিন মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকে, আপনিও (আনিসুল হক) বেঁচে থাকবেন। আরেকজন লিখেছেন, বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক হারালো, আপনার উন্নয়নের কথা ঢাকাবাসী কোনোদিন ভুলবে না...
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রকে হারিয়ে তার বাসার সামনে শোকার্ত মানুষের ঢল ছিলো শনিবার। গতকাল রোববারও তার বাসার সামনে মানুষ ভিড় করেছেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছেন, আবার কেউ কেউ জটলা হয়ে মেয়রের নানা কাজের স্মৃতিচারণ করছেন। কেউবা শোক বইয়ে লিখছেন প্রিয় মেয়রকে নিয়ে আবেক, ভালোবাসা ও স্মৃতিকথা।
আলাপকালে ওই ফয়সাল খান বলেন, একজন আনিসুল হক। স্বপ্ন, ভালোবাসা, আবেগ, বিশ্বাস আর আস্থার জোরেই ‘প্রিয় আনিসুল হক’ হয়ে উঠেছিলেন। এই মানুষটিকে হারিয়ে যেমন কাঁদছে স্বজনরা তেমনি কাঁদছে তার ঢাকাবাসীও। বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যেমে তিনি এক অন্যরকম ঢাকা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামে তার সঙ্গে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। এই প্রিয় মানুষটির চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই তার স্মৃতির টানে উনার বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি।
বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আনিসুল হককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন তাকে ভালোবাসে এমন সাধারণ মানুষরা। তাদের মধ্যে একজন হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন সময় নগর ভবনে যেতাম। মেয়র হওয়া সত্ত্বেও আনিসুল ভাই ছিলেন সাধারণ মানুষের মতো মিশুক, নির্লোভ, নির্মোহ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সমস্যায় দিনে-রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নাগরবাসীর আস্থাভাজন হয়েছিলেন তিনি।
এলাকাবাসীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডিএনসিসি কার্যালয়ে অনেকবার মেয়রের কাছে গেছেন বনানীর বাসিন্দা জাকির হোসেন। তিনিও আজ স্মৃতির টানে মেয়রের বাসার সামনে দাঁড়ানো। জাকির বলেন, একজন আনিসুল হক, কিন্তু স্বপ্ন ছিল অনেক। বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপে নাগরিকমহলে বারবার বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
‘আমরা ঢাকা’ শিরোনাম দিয়ে পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আলোকিত ও মানবিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র আনিসুল হক। ‘সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধানযাত্রা’ শ্লোগান দিয়ে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর ঢাকা, সচল ঢাকা, মানবিক উন্নয়নের ঢাকা, স্মার্ট ও ডিজিটাল ঢাকা, অংশগগ্রহণমূলক ও সুশাসিত ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ছিল তার। তিনি মশামুক্ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ, স্মার্টকার্ড প্রদান, ফরমালিনমুক্ত ও নিরাপদ বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, মাদক ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ, সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনায় সাধারণ নাগরিকদের ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছেন সবসময়।
মেয়র হিসেবে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তার মোড় থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণ, গাবতলীতে ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়ে রাস্তা সংস্কার, গুলশান-বনানী এলাকা থেকে পুরনো বাস সরিয়ে ‘ঢাকা চাকা’ নামের নতুন এসি বাস সার্ভিস চালু, সবুজ ঢাকা’ নামের বিশেষ সবুজায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে নগরবাসীর কাছে বিশেষ প্রশংসিত হন মেয়র আনিসুল হক।
দক্ষিণ সিটির শ্রদ্ধা
আনিসুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে গতকাল রোববার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ‘প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতি সম্মান জানাতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় (নগর ভবন) ও পাঁচটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে গতকাল অর্ধদিবস ছুটি পালন করা হয়েছে।’
অন্যদিকে, শ্রদ্ধা জানাতে গত শুক্রবার ১ ডিসেম্বর থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত তিন দিনের শোক পালন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ জন্য শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিন ছাড়াও গতকাল ডিএনসিসির সব কার্যালয় বন্ধ রাখা হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ