শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

পাকিস্তানকে সাহায্য প্রদানে শর্ত শিথিল যুক্তরাষ্ট্রের

১৮ নভেম্বর : পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য লস্কর-ই-তাইবা (এলইটি)’র বিরুদ্ধে ইসলামাবাদকে লক্ষণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস কমিটি যে শর্ত জুড়ে দিয়েছিলো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (ডিওডি)’র চাপে তা বাদ দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন এ্যাক্ট (এনডিএএ) সংশোধনের সময় ওই শর্তটি বাদ দিয়ে তা পাশের জন্য সিনেট কমিটিতে ভোটাভুটির জন্য পাঠানো হয়।

এক কংগ্রেস সদস্য বলেন, ডিওডি’র জোড়ালো যুক্তি ছিলো হক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এলইটি’র শর্ত জুড়ে দেয়া হলে তা পাকিস্তানের জন্য হবে ‘গোলপোস্ট পরিবর্তনের শামিল।’ সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দান নিয়ে গত আগস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের যে নিন্দা জানান তার প্রতি ইঙ্গিত করে ডেমক্রেট দলীয় একজন পর্যবেক্ষক কিছুটা ব্যাঙ্গ করে বলেন, ‘আমি মনে করি এটা নতুন দক্ষিণ এশিয়া নীতির অংশ।’ পাকিস্তানের ব্যাপারে পেন্টাগনের এই অবস্থান নিঃসন্দেহে ভারতকে হতাশ করবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন যে পাকিস্তানের ব্যাপারে সার্বিক মনোভাব একই রয়েছে। পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের পরিমাণ কমছে। এবার যে সাহায্য দেয়া হচ্ছে তার সঙ্গেও অনেক শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে।

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের মন মতো কাজ করতে না পারায় গত দুই বছরে পাকিস্তানকে কোয়ালিশন সাপোর্ট ফান্ড-এর ৭৫০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়নি। সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পাকিস্তান যথেষ্ঠ ব্যবস্থা নেয়নি অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তহবিল ছাড়ের অনুমতি দেননি।

এখন ২০১৮ সালে পাকিস্তানের জন্য যে ৭০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার অনুমোদন দেয়া হলো তার সঙ্গে হক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো গ্লাস অর্ধেক ভরা, নাকি অর্ধেক খালি। একজন ভারতীয় কর্মকর্তা উল্লেখ করেন যে এলইটির মতো ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসীগ্রুপকে মার্কিন কংগ্রেস টার্গেট করবে কয়েক বছর আগে এটা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। একসময় পশ্চিমা স্বার্থের ওপর আঘাতকারী এবং অন্যস্থানে সক্রিয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে আলাদা করে দেখা হতো। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বুঝতে পারেন এরা সমন্বিত ও আন্তঃসংযুক্ত। কিন্তু এখন আবার মনে হচ্ছে যে পেন্টাগন আগের অবস্থানে ফিরে গিয়ে পাকিস্তানের প্রশ্রয় পাওয়া ও সেখান থেকে তৎপরতা চালনো সন্ত্রাসীগ্রুপগুলোকে আলাদাভাবে বিবেচনা করছে।

গত আগস্টে ট্রাম্প পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কঠোরভাষা প্রয়োগ করেন তার আলোকে এলইটি’র ব্যাপারে পেন্টাগনের সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষণ করেন ওই ভারতীয় কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে। পাকিস্তানকে অবশ্যই তার অবস্থান বদল করে শান্তি ও সভ্যতার প্রতি তার অঙ্গীকার প্রদর্শন করতে হবে।’ প্রেসিডেন্টের বাক্য চয়নের প্রতি নজর রেখেই সিনেট পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা দানের ক্ষেত্রে ওই দাবি জানিয়েছিলো। সিনেটের বিলে বলা হয়েছিলো, ‘হক্কানি নেটওয়ার্ক ও এলইটি পাকিস্তানের ভূখ-ে নিরাপদ আশ্রয় পচ্ছে না বলে ইসলামাবাদকে প্রমাণ করতে হবে।’ তাছাড়া, সীমান্ত এলাকায় এই দুটি গ্রুপের তৎপরতা বন্ধের জন্য আফগানিস্তানের সঙ্গে সমন্বয়ের কথাও বলা হয়েছে।

সিনেট বিলে বেশ কয়েকবার এলইটি’র নাম উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেন্টাগন বিলটি থেকে এলইটি’র নাম পুরোপুরি বাদ দিতে সিনেটকে চাপ দেয়। এর বদলে পেন্টাগন পাকিস্তানের ওপর ধাপে ধাপে চাপ সৃষ্টির কৌশল গ্রহণ করেছে। তারা প্রথমে হক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাটি দেখতে চায়। কংগ্রেসের একজন এইডি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ডেমক্রেট ও রিপাবলিকানরা বহুসংখ্যক বিলে বহুসংখ্যক ইস্যুতে দেয়া-নেয়ার নীতি অনুসরণ করেন। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হক্কানি নেটওয়ার্কের পাশ থেকে ‘এলইটি’ নামটি বাদ দেয়া সামান্য একটি বিষয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ