বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রপ্তানি বাড়িয়েও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারছে না ভারত

 

১৫ নভেম্বর, ইকোনোমিক টাইমস : চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে চীনে ভারতের রপ্তানি ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ আশা করছিল যে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য-ঘাটতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রশমিত হতে শুরু করছে। কিন্তু ভারতে চীন থেকে আমদানি যেভাবে ফুলেফেপে উঠেছে তাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমার উল্টো চিত্রই সামনে চলে আসছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চীন থেকে ভারতে আমদানির তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ বেশী ছিল। ভারত গত বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মেয়াদে চীনে ৩.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। যা এ বছর একই সময়ে ৩৮.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।

অন্যদিকে, গত বছরের এই সময়ে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে ৩৩.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আর, এই বছর একই সময়ে আমদানি করা হয়েছে ৪২.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য। আমদানি বৃদ্ধির হার (২৯.২১ শতাংশ) রপ্তানি বৃদ্ধির হারের তুলনায় কম হলেও ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি এতটাই বেশী যে এই সামান্য বৃদ্ধি নয়া দিল্লির উদ্বেগ কিছুতেই কমাতে পারছে না। সামগ্রিক বাণিজ্য ভারসাম্য আরো বেশী চীনের অনুকূলে গিয়েছে। গত বছর এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে ঘাটতি ছিল ২৯.৩ বিলিয়ন ডলার। এই বছর একই সময়ে ৩৭.৫ বিলিয়ন ডলার। চীন থেকে ব্যাপক হারে ইলেক্ট্রনিক্স ও ওষুধ পণ্য আমদানি মূলত এই ঘাটতির জন্য দায়ী। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন লোকসভায় জানান, চীনের সঙ্গে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি ২০১৫-২০১৬ সালের ৫২.৬৯ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২০১৬-১৭ সালে ৫১.০৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ২০১৬-১৭ সালে চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭১.৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ভারতের রপ্তানি বেড়েছে তিনটি খাতে- আকরিক লোহা, তুলাজাত সুতা এবং ফেরোএ্যালয়, যা মূলত চীন কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়া ভারত সরকার কৃষি পণ্য রপ্তানির নিয়ম সহজ করার চেষ্টা করছে। চীন থেকে আমদানি কমিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করছেন ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী সুরেশ প্রাভু। তিনি সেক্টর-ভিত্তিক এই কাজ করার পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তবে আমদানি পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে পণ্যের অবাধ প্রবাহ কমিয়ে আনা ফলপ্রসূ হতে পারে। যেমন- আগস্ট মাসে, ইলেক্ট্রনিক্স ও আইটি মন্ত্রণালয় ২১টি স্মার্টফোন নির্মাতাকে নির্দেশ দিয়েছিলো তারা যেন ভারতে বিক্রি করা মোবাইল তৈরি ও বাজারজাতকরণের সম্পূর্ণ পদ্ধতি কর্তৃপক্ষকে জানায়। এসব কোম্পানির বেশিরভাগ চীনা। মোবাইলের মাধ্যমে তথ্য চুরি ও ফাঁস হওয়ার রিপোর্ট প্রকাশের পর এমন খড়গ আসে চীনা কোম্পানিগুলোর উপর। তবে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা এতে নয়, বরং সতর্ক করে বলছেন এতে লাভের বদলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. ডি কে দত্ত রায় স্পুটনিককে বলেন, ‘ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধিকে সবসময় স্বাগত জানানো হবে। তবে পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি নয়াদিল্লির হাতে নেই, এটি বেইজিং এর হাতে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা কি চায় এবং কখন চায়। আমরা শুধু সেই অনুসারে কাজ করতে পারি। উপরন্তু, আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রগুলো এমন সব শিল্পে যা মোটেও পরিবেশবান্ধব নয়। যার মানে হল চীন ঠিকই প্রবৃদ্ধি করছে। কিন্তু দূষণের জন্য বিশ্বব্যাপী আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে। এটা চীন-ভারত সম্পর্কের বাস্তবতা। চীনের দুর্গে আঘাত হানতে নয়া দিল্লীর অক্ষমতাই এর একটি প্রমাণ।’ 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ