শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

‘একটা রায়ের কারণে প্রধান বিচারপতিকে অপদস্ত করে বিতাড়িত করা হয়েছে দেশ থেকে’

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার পদত্যাগে বিচার বিভাগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রড়বে বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। এতে করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে সরকারের এটর্নি জেনারেল বলেছেন, পদত্যাগের ঘটনায় বিচার বিভাগের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বিচার বিভাগকে জনগণের সম্পূর্ণ আস্থার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতির পত্যাগের পর বিচার বিভাগ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, স্বাধীনভাবে কাজ করবে এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাতজন বিচারপতি একটি রায় দিয়েছেন, যা সরকারের বিরুদ্ধে গেছে। যার কারণে প্রধান বিচারপতিকে অপদস্থ করে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এরপর বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অস্তিত্ব আছে এটা বলা যায় না। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিকে এভাবে বিতাড়িত করার পর পদত্যাগ করার বিষয় সাধারণ মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করবে না।
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ, একটি আলোচনা সভায় বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি পদত্যাগের ঘটনা বিচারবিভাগের ও আদালতের স্বাধীনতার জন্য কলঙ্কের দিন। ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের বিপক্ষে গেছে বলেই এ ঘটনা ঘটেছে। দেশের সর্বোচ্চ রায়ের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এসব করলো। অথচ সরকার রিভিউ আবেদন করতে পারতো। তারা সমন্বিতভাবে বিচারপতি এস কে সিনহাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করলো।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের পর সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়টি নজিরবিহীন। তিনি আদৌ পদত্যাগপত্র লিখেছেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তার পদত্যাগের দিনটি বিচার বিভাগের জন্য একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, পদত্যগের ঘটনায় বিচার বিভাগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উচ্চ আদালতের বিচারপতিকে নিয়ে গত কয়েকমাসে যা করা হলো এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার বা প্রধান বিচারপতি চিরকাল থাকবে না। দেশ থাকবে, মানুষ থাকবে। এ ঘটনায় দেশের মানুষ এবং বিচার বিভাগ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেনন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগে বিচার বিভাগে কোনো প্রভাব পড়বে না। পদত্যাগ করা ছাড়া তার কোনো পথ খোলা ছিল না। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি।
গত শনিরবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে পৌঁছায়। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে তিনি কানাডায় চলে যান।
গত ২ অক্টোবর এক মাসের ছুটির আবেদন করেন এস কে সিনহা। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি অসুস্থতার কারণে ছুটিতে যাচ্ছেন। এর পর  গত ১০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সিনহা বিদেশে অবস্থানের জন্য অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করে একটি চিঠি দেন। এতে তিনি ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নবেম্বর পর্যন্ত  দেশের বাইরে থাকার কথা উল্লেখ করেন। তার অবর্তমানে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশের পর থেকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন প্রধান বিচারপতি। জাতীয় সংসদেও তার সমালোচনা করা হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা গত ২৪ আগস্ট প্রধান এস কে সিনহাকে পদত্যাগের সময় বেঁধে দিয়েছিল।
গত ১৪ অক্টোবর রাতে দেশ ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেন,‘আমি অসুস্থ নই। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ