শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রোহিঙ্গা নির্যাতনে সু চির নির্বিকার প্রতিক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা জাতিসংঘের

 

সংগ্রাম ডেস্ক : কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির নিস্পৃহ প্রতিক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তা ইয়াংহি লি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করছেন তিনি। সংখ্যালঘু ওই জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে সু চির প্রতিক্রিয়াকে তিনি নিস্পৃহ বা নির্বিকার বলে মন্তব্য করে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস।

ইয়াংহি লি বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) জাতিসংঘে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইয়াংহি লি খোলামেলাভাবেই সু চির প্রতি তার অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘এই ইস্যুতে অং সান সু চির কোনও অবস্থান না নেওয়াটা আমাকে এবং সবাইকেই বিমূঢ় করে দিয়েছে। রোহিঙ্গা নামে যে কিছু লোক আছে তিনি এমনকি সেটিও স্বীকার করছেন না। শুরু করার জন্য এটি একটি পয়েন্ট হতে পারে। আমি খুবই হতাশ।’

 রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে চুপ থাকায় বারবার সমালোচিত হয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি। অনেক নোবেল বিজয়ীও সরাসরি তার সমালোচনা করেছেন। ইয়াংহি লি এবার সুনির্দিষ্ট পয়েন্টেই তার সমালোচনা করলেন। ইয়াংহি লির এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘে মিয়ানমারের কূটনৈতিক মিশন থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

দক্ষিণ কোরীয় এই শিশু মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘সু চি যদি তার দেশের লোকজনের কাছে এই আহ্বান জানাতেন যে চলুন, আমরা কিছুটা মানবিক হই; আমার ধারণা লোকজন তার কথা শুনত। জনগণের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।’

মিয়ানমারের পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও শত্রুতা এত তীব্র যে কেউ এর বিরুদ্ধে কথা বলারও সাহস পায় না। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও জোরপুর্বক বাস্তুচ্যুত করার ঘটনা ঘটছে তা দেশটির মিডিয়ায় স্থানই পাচ্ছে না।

এর আগে গত বুধবারও (২৫ অক্টোবর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন ইয়াংহি লি। সেখানে তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি কোনও সহানুভূতি বা সহমর্মিতা নেই। দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারের লোকজনের মধ্যে এই মানসিকতা লালিত হয়ে আসছে যে, রোহিঙ্গারা এই দেশের নাগরিক নয়, ফলে তাদের কোনও অধিকারও নেই।’

মংডু ও বুথিডাউং থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহার করবে মিয়ানমার

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাখাইনের সহিংসতা কবলিত মংডু ও বুথিডাউং শহর থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার দেশটির সেনাপ্রধানের কার্যালয় এই তথ্য জানিয়েছে।

সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাংয়ের কার্যালয় জানায়, রাখাইনের মংডু ও বুথিডাউং শহরে ক্লিয়ারেন্স অভিযানে সেনাবাহিনীর কয়েকটি কলামকে প্রত্যাহার করা হবে।

মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চির মতো সেনাপ্রধানের কার্যালয় দাবি করে, ৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ রয়েছে। সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে এর বেশি কিছু জানানো হয়।

এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রত্যাহার করা সেনারা রাখাইনের রাজধানী সিতেতে অবস্থান করবে।

২৫ আগস্ট রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের উপর নিধনযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এখনও প্রতিদিন আসছে রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে জাতিগত নিধনের অভিযোগ তুলেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলেছে রাখাইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সূত্র: আনাদোলু।

মিয়ানমার সেনাপ্রধানকে টিলারসনের ফোন : রাহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকারকে সহায়তার আহ্বান

রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নিধনযজ্ঞে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এই সংকট সমাধানে সরকারকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সময় বৃহস্পতিবার রেক্স টিলারসন ও মিন অংয়ের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয় রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমার সেনার নির্যাতনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিগত নিধন বলে ঘোষণা করার কথা বিবেচনা করছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। তার আগে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন টিলারসন। 

গত ২৫ আগস্ট রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের উপর নিধনযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা যেন দেশে ফিরে আসতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মিন অংকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।

বলা হয়, সংকট সমাধান ও পালিয়ে যাওয়াদের ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমার সরকারকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছে টিলারসন। একইসঙ্গে রাখাইন অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সহায়তা পৌঁছানোর জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। নিউইয়র্ক টাইমস।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ