বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

উন্নয়ন বঞ্চিত কপিলমুনি হাসপাতাল

খুলনা অফিস : প্রতিষ্ঠার পর ৯১ বছর পার করে ৯২-তে পা রেখেছে কপিলমুনি সরকারি হাসপাতালটি, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই রুগ্ন। জনবল সংকট আর অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়লেও কেউ খোঁজ নেয়নি চির অবহেলিত এ হাসপাতালটির।
জানা গেছে, পাইকগাছা, কয়রা ও তালা থানার লাখ লাখ মানুষ সে সময় ছিল সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। তাই বৃহৎ এই কয়’টি থানার অসংখ্য মানুষের সুচিকিৎসার কথা ভেবে কপিলমুনির প্রয়াত দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ১৯২৫ সালের ৭এপ্রিল ৩একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন ২০ শয্যা ভরত চন্দ্র হাসপাতাল। হাসপাতালটি তৈরির সময় অনেকাংশে মার্বেল পাথর স্থাপন করা হয়। ভবনটি দেখতে যেন সুরম্য অট্টালিকা।
স্থাপন করা হয় ডিসপেনসারী কক্ষ, কলেরা ওয়ার্ড, কর্মচারী কোয়ার্টার, ডাক্তারদের আবাসিক ভবন, লাশ রাখার ঘর, শৌচাগার, অপারেশন থিয়েটার, ডেলিভারী কক্ষসহ লোহার তৈরি ঘোরানো পেঁচানো সিঁড়ি, বৃহৎ একটি পুকুর, সীমানা প্রাচীরসহ কোলকাতা থেকে আনা আধুনিক যন্ত্রপাতি। যার অনেক কিছুই এখন নষ্ট হয়ে গেছে, আধুনিক সেই সব যন্ত্রপাতি হাসপাতালটিতে এখন আর চোখে পড়েনা। হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের একটা অংশ ভেঙ্গে গেছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার কতিপয় মানুষ হাসপাতাল চত্ত্বরটি যেন গোচারণ ভূমিতে পরিণত করেছে।
গরু-ছাগল ভিতরে প্রবেশ নিষেধ, এমন একটি সাইনবোর্ড প্রধান গেটের কাছে দেওয়া থাকলেও তা মানতে নারাজ তারা।
দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ২০শয্যার হাসপাতালটি ১৯৭১ সালে সরকারি করণের সময় প্রতিষ্ঠাতার দেয়া নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় কপিলমুনি ১০ শয্যা সরকারি হাসপাতাল।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েকবার সরকার ও স্থানীয় নেতৃত্বের পরিবর্তন আসলেও কপিলমুনি হাসপাতালটির উন্নয়ন হয়নি। বিভিন্ন সময় মন্ত্রী-এমপিরা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনো বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।
এখানে দীর্ঘদিন কোন ডাক্তার ছিলেন না, ফলে কোন রোগীর চিকিৎসা হয়নি। অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে গেছেন বলে জানালেন স্থানীয়রা। প্রতিষ্ঠানটিতে ২ জন ডাক্তারের পদ রয়েছে। কিন্তু মাত্র ২ সপ্তাহ আগে ১ জন যোগদান করেছেন। সদ্য যোগদানকারী মেডিকেল অফিসার মো. আব্দুর রব এখন প্রায় ২ লক্ষ মানুষের চিকিৎসায় নিয়োজিত। যিনি রাত দিন অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। যা একজন ডাক্তারের পক্ষে সম্ভব নয়।
কপিলমুনি হাসপাতালটি সরকারি হওয়ার পর থেকে সৃষ্ট পদে ২ জন ডাক্তারকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিয়োগ দেয়। দীর্ঘদিন চলতে থাকে এভাবে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এখানে ১ জন ডাক্তার দিয়ে অসংখ্য রোগীর সেবা দেয়া হচ্ছে।
তাও আবার কোন কোন সময় মাসের পর মাস নার্সের ঘাড়ে ভর দিয়ে ডাক্তার শূন্য অবস্থায় চলে হাসপাতালটি। অনেক আগে থেকেই প্রতিদিন ৩ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে এসে থাকে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ডাক্তার শূন্য থাকায় সেবা বঞ্চিতরা অনেকই এখন আর এখানে আসেন না।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমানে এখানে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ১জন, এছাড়া রয়েছন নার্স ২ জন, ফার্মাসিস্ট ১জন, এম এল এস এস ২ জন, সুইপার ২ জন, বাবুর্চী নাইটগার্ড ও ওয়ার্ডবয় নেই। জরুরী রোগী স্থানান্তর করার জন্য এ্যাম্বুলেন্স নেই।
হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রবিউল শেখ (৪৮) বলেন, এখানে সব কিছুর অভাব, উন্নত চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার ও যন্ত্রপাতি নেই। ফলে জরুরী রোগীগুলো খুলনা, যশোর, ঢাকা আবার কখনো বিদেশে নিতে হচ্ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ