শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ফটিকছড়িতে বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা জনসাধারণ অতিষ্ঠ

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি: চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তিনটি উপকেন্দ্র থেকে ১২টি সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ফটিকছড়ি উপকেন্দ্র ছয়, দাঁতমারায় দুই এবং আজাদী বাজার উপকেন্দ্র চারটি সঞ্চালন লাইন নিয়ন্ত্রণ করেন। ফটিকছড়ি উপকেন্দ্রের পাঁচ নম্বর সঞ্চালন লাইনের আওতাধীন নাজিরহাট, সুয়াবিল, বৈদ্যারহাট, চুরখাঁহাট, উদালিয়া চা-বাগান, বারমাসিয়া চা-বাগান, পূর্ব-ফরহাদাবাদ, পূর্ব-মন্দাকিনী ও দৌলতপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। এ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম বৈষম্য করা হয় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করে বলেন এ লাইনে কম বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও ভূতুড়ে বিল দেওয়া হয়।
এলাকাবাসী জানান, এই পাঁচ নম্বর সঞ্চালন লাইনের আওতায় উপজেলার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপজেলা খাদ্যগুদাম, বিজাগার, দুইটি রেল ষ্টেশন, একটি কলেজ, একটি স্কুল এন্ড কলেজ, সাতটি মাদ্রাসা, ১১টি উচ্ছ বিদ্যালয়, ছয়টি কিন্ডার গার্ডেন, দুইটি চা-বাগান এবং অন্তত দশটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকলেও এখানকার চেয়ে ফটিকছড়ি  সদরসহ অন্যান্য সঞ্চালন লাইনে বেশি বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ বিতরণে এমন বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। অথচ এ সঞ্চালন লাইনের ১৭ হাজার গ্রাহকদের বেশীরভাগ কলকারখানা হওয়ায় বিদ্যুৎ বিলের বিপরীতে সরকার রাজস্ব আদায় করে সবচেয়ে বেশী।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ফটিকছড়ির উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নিয়াজ উদ্দিন নাজিরহাট সঞ্চালন লাইনে  কম বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নাজিরহাট সঞ্চালন লাইনটি চালু করতে বিদ্যুতের বেশি লোডের প্রয়োজন হয়, তাই ঐ এলাকার গ্রাহকেরা কিছুটা কম বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। আর ফটিকছড়ি উপজেলা সদর হওয়ায় এবং রাষ্ট্রিয় কাজে ব্যবহারের জন্য সেখানে বেশি বিদ্যুৎ দিতে হচ্ছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, বিদ্যুতের অভাবে রোগীদের সেবা দেওয়া অনেক সময় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। গাইনী বিভাগে মোমবাতি কিংবা হারিকেন জালিয়ে প্রসূতি সেবা চালিয়ে যেতে হয়। তিনি দাবী করেন, দৈনিক দুই ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া এখানে সোনার হরিণ।
নাজিরহাট আদর্শ ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক চিকিৎসক মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, এ সঞ্চালন লাইনের আওতায় প্রায় অর্ধ-শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি কলকারখানা, খাদ্যগুদাম, পোলট্রি ফিড শেড, হ্যাচারি, ৩১ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। বেশি বিদ্যুৎ লাগে এমন অজুহাতে এ লাইনটি অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখা হয়। ফলে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ে।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক নাজিরহাট শাখার কর্মকর্তা মুছাম্মৎ শামীমা খানম বলেন, বিদ্যুতের অভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পাদন করা সম্ভব হয়না। তাছাড়া কম্পিউটার চালিত কোন কাজ-কর্মই নিয়মিত সম্পাদন করা যায়না।
বারমাসিয়া চা-বাগানের আবাসিক পরিচালক বাবুল বিশ্বাস বলেন, উপজেলার ১৭ চা-বাগানের মধ্যে এ সঞ্চালন লাইনের আওতায় দুইটি চা-বাগান রয়েছে। কিš‘ দিন-রাত ‘লোড বেশি লাগে’ এমন অজুহাতে এ লাইনটি অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখা হয়। ফলে চা উৎপাদন নেমেছে অতীতের তুলনায় অর্ধেকে।
নাজিরহাট উপ-কেন্দ্রের প্রকৌশলী আবদুল খালেক বলেন, নাজিরহাট সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ বিতরণে স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়  উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেও কাছে বলা হয়েছে। তার পরও এ বিষয়ে গ্রাহক কোন সুফল পায় না।
সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফটিকছড়ি, দাঁতমারা ও আজাদী বাজার উপকেন্দ্র তিনটি থেকে ১২টি সঞ্চালন লাইনে সুষমভাবে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে ইচ্ছে মাফিক।
সুয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মুহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে এই (পাঁচ নম্বর) সঞ্চালন লাইনটিতে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। অথচ পাশ্ববর্তী হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় সাধারণত লোডশেডিং করা হয় খুবই কম।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নিয়াজ উদ্দিন বলেন, এ উপজেলার তিনটি উপকেন্দ্রের ১২টি সঞ্চালন লাইনে ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪ থেকে ১৫ মেগাওয়াট। অথচ নাজিরহাট সঞ্চালন লাইনটিতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ এবং কলকারখানা থাকায় তা চালু করতেই প্রয়োজন হয় কমপক্ষে পাঁচ মেগাওয়াট। বরাদ্দের অভাবে ওই লাইনটিতে অনেক সময় বিদ্যুৎ দেয়া যায় না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ