শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার চালু

 

মোঃ জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা : অর্ধ শতাব্দী আগে প্রতিষ্ঠিত সৈয়দপুর ৫০ শয্যা হাসপাতাল ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে অন্যান্য সুবিধা তবে জনবল বাড়েনি। এতে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে অপারেশন থিয়েটার চালু হওয়ায় সরকারের এ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি সকলের জন্য আর্শিবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হওয়ায় স্বস্তি আর আনন্দ বইছে জনপদবাসীর মধ্যে।

জানা যায়, ১৯৬৫ সালে শহরের কুন্দল পূর্বপাড়া এলাকায় প্রায় ৭ একর জমির ওপর সৈয়দপুর হাসপাতালটি ৫০ শয্যার সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শুরু করে চিকিৎসাসেবা। ডাক্তার, নার্স, অফিস স্টাফ ও অন্যন্য মিলে নিয়োগ দেয়া ৭৫ জন জনকে। মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, নাক-কান, বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, গাইনি, ডেন্টাল, ডাক্তার মিলে ১৩ জন ডাক্তার নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন। করা হত ছোট-বড় অপারেশন ও জটিল প্রসূতি মায়েদের সিজার। এতে হাসপাতালটি স্থানীয়সহ পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলাবাসির কাছে চিকিৎসায় নির্ভরতার প্রতিক হয়ে ওঠে। আন্তঃ ও বহিঃবিভাগে প্রতিদিন হাজার- হাজার রোগীর সমাগম ঘটে। তবে শ্রমিক শহর খ্যাত এ এলাকায় এ সকল চিকিৎসকরা চেম্বারে সুবিধা করতে না পারায় কেহই দীর্ঘ সময় এ হাসপাতালে থাকত না। এছাড়া অবসর ও অন্যান্য কারণে অভিজ্ঞরা চলে যাওয়ায় এ হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। নাক-কান-গলাসহ অন্যন্য বিশেষজ্ঞদের অভাবে থমকে যায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা। এভাবে দীর্ঘদিন কাটার পর সরকারের নেক নজরে পড়ে ২০১২ সালে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ডাক্তারসহ সকল স্টাফদের জন্য বহুতল ভবন, ডরমেটরি বিশিষ্ট নতুন চার তলা হাসপাতাল ভবন। পুরাতন সব কিছু সংস্কার ও দৃষ্টিনন্দন প্রবেশপথ নির্মাণ করা হয়। দেয়া হয় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ। তবে ঘাটতি রয়ে যায় দামি সব যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকের অভাবে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকে। আর যথাযথ পদে চিকিৎসক না থাকায় অনেক সেবা এ হাসপাতালে আর মেলে না।

তবে কর্তৃপক্ষের জোড় তৎপরতায় আবারো সরগরব হয়ে উঠেছে এ হাসপাতাল চত্বর। গত মঙ্গলবার অপারেশন থিয়েটার চালু হওয়ায় চিকিৎসায় আবারো প্রাণ সঞ্চার করেছে। এ দিন পারভীন (২৫) নামে এক দরিদ্র ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতি মায়ের সিজারের মাধ্যমে নতুন চিকিৎসা সেবার যাত্রা শুরু হয়। পুত্র সন্তান পেয়ে দরিদ্র দিনমজুরের পরিবারে সকলেই আনন্দিত। আর পারভীনের মত সকল প্রসূতি মায়েরাই আশায় বুক বাধছেন এ হাসপাতালের সিজার ব্যবস্থাপনায় নতুন সেবা নিয়ে। ওই দিন হাসপাতালটির অপারেশন কার্যক্রমের উদ্বোধনে রংপুর বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক, নীলফামারী সিভিল সার্জন রঞ্জিক কুমার বর্মন, সৈয়দপুর হেলথ কমপ্লেক্সের পরিচালক ডাঃ সিরাজুল ইসলাম, হাসপাতালটির আর এম ও ডাঃ মোঃ আরিফুল হক সোহেল, এথেনসিয়া চিকিৎসক ডাঃ তাইফুর রহমান ও গাইনি বিশেষজ্ঞ সার্জারী ডাঃ আ শ শামছুন্নাহার উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, নিজস্ব ৭ জন আর ডেপুটিশনের ৪ চিকিৎসক দিয়ে এ হাসপাতাল চলছে। আর অন্যান্য পদ মিলে ৫০ শয্যর জনবলের ১৯ জন নেই। এতে ১০০ শয্যার জন্য দ্বিগুণ জনবলের প্রয়োজন। এছাড়া ইসিজি, এক্সরে, রক্ত, মল, মূত্র পরীক্ষা সরকারের দেয়া ফি নিয়েই দেয়া হচ্ছে।

সৈয়দপুর ১০০ শয্য হাসপাতালের আর এম ও ডাঃ আরিফুল হক বলেন, আমরা ৫০ শয্যর ঘাটতি জনবল দিয়ে ১০০ শয্যর রোগীর সেবা চলছে। অন্যন্য ঘাটতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। আশা করি পর্যায়ক্রমে সেগুলো পাবো। আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ অপারেশন থিয়েটারটি আবারো চালু হলো। এটি সেবার মাধ্যমে ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে।

নীলফামারী সিভিল সার্জন ডাঃ রঞ্জিত কুমার বর্মন বলেন, এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদানে কোন বাণিজ্য না হয় আর আগতরা যাতে সরকারের দেয়া সেবাটুকু শতভাগ পায় সে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর ঘাটতি জনবল বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিলেই সব পূরণ হবে।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিচালক ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, স্থানীয় সকল নেতৃবর্গ ও কর্তৃপক্ষ সমন্বয় করে কাজ করলে সেবা প্রদান কাজ গুলো সহজ হয়। ঘাটতির কারণে এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দোষ না ধরে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। এতে সকলের কাছে এটি একটি সেবার বাড়ি মনে হবে। আর জনবল ঘাটতি পূরণে একটি প্রক্রিয়ার বিষয়। যা মন্ত্রানালয়ের মাধ্যমে শিঘ্রই বিজ্ঞপ্তি দ্বারা পূরণ হবে। তবে জনবল পূরণ হোক বা না হোক অত্যন্ত এ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার যেন হটাৎ বন্ধ হয়ে এ জনপদবাসিরা সেবা বঞ্চিত না হয় এমন দাবি এ ঊর্ধ্বতনের কাছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ