বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শেখ রাসেল প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে শিশুদের নির্যাতন: কেন্দ্র ছাড়ছে শিশুরা

খুলনা অফিস: খুলনার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চলছে চরম অরাজকতা। এখানে শিশুদের আশ্রয় এবং নিরাপত্তার পরিবর্তে নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই নাজমুল হোসেন মিরাজ (১১) নামে একটি শিশুকে মেরে হাত ভেঙে দেয়া এবং মিতু (১১) নামে আরও একটি শিশু অগ্নিদগ্ধ হয়। রাতুল ইসলাম লালু (১৪) নামে একটি শিশু নির্যাতনের ভয়ে কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গেছে। এছাড়াও অন্যান্য শিশুদের ওপরও দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, শিশু নির্যাতনের অভিযোগে নাজমুল হোসেন মিরাজের পরিবারের পক্ষ থেকে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপ প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরের কাছে অভিযোগ করা হলে তিনি অভিযুক্ত কর্মকর্তা নূরুল ইসলামকে শোকজ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে শিশুর অভিভাবক নাজমা বেগম বাদী হয়ে সেন্টারের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বটিয়াঘাটা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার নবপল্লী গোলাম মোক্তাদির সড়ক এলাকার বাসিন্দা মো. কামাল হোসেনের শিশু পুত্র নাজমুল হোসেন মিরাজকে দু’বছর আগে খুলনার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের বটিয়াঘাস্থ মল্লিকের মোড় এলাকার ‘তপু ভিলায়’ অবস্থিত বালক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। কিন্তু গত ৩১ আগস্ট ওই কেন্দ্রের সাইকোলজিস্ট নূরুল ইসলাম তাকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে বেদম প্রহার করেন। এতে তার বাম হাত ভেঙে যায়-মর্মে শিশুর মা নাজমা বেগম উপ প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরের কাছে অভিযোগ করেন। সে মোতাবেক আবু জাফর ৪ সেপ্টেম্বর সাইকোলজিস্ট নূরুল ইসলামকে শোকজ করেন। শোকজের জবাবও দেন নূরুল ইসলাম।
জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, এর আগেও বালক সেন্টারের শিশু হাসান, সজীব, রাজন ও অন্তরসহ অন্যান্য শিশুকেও শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়েছে। এমনকি বালিকা সেন্টারের শিশু মিতুকে আগুনে পুড়িয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাও দেয়া হয়। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়। কিন্তু উপ প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফর বিগত দিনের শিশু নির্যাতনকারীদের বিচার এবং জবাবদিহিতাকে আড়ালের চেষ্টা করেছেন। বরং তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই কেন্দ্রের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও পাল্টা অভিযোগ তোলেন তিনি।
শিশু নাজমুল হোসেন মিরাজের মা নাজমা বেগম অভিযোগ করেন, তার ছেলের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় তিনি প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরের কাছে অভিযোগ দেন। কিন্তু তিনি কোন বিচার করেননি। এমনকি দু’দিন বটিয়াঘাটা থানায় ঘোরাঘুরি করলেও প্রথমে তারা মামলা নেয়নি। পরে মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দেয়ার পর মামলা নেয়া হয়।
বটিয়াঘাটা থানার ওসি মোজাম্মেল হক মামুন বলেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এসআই মো. শফিউদ্দিন মামলাটি তদন্ত করছেন। তবে কোন আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সোমবার বিকেলে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বালক সেন্টারে গেলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরের উপস্থিতিতে আসামি কেইস ম্যানেজার ফারুক হোসেনকে বাথরুমে লুকিয়ে রাখা হয়। অপর আসামি বালিকা সেন্টারে কর্মরত কেইস ম্যানেজার সারোয়ার জাহান চৌধুরীকেও তিনি রক্ষার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার সেলফোনে কল করা হলে ব্যস্ত পাওয়া যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ