শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যৌন নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে যৌন নির্যাতন ও অপরাধ দমন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাসস

নিউইয়র্ক থেকে বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের মাঝে যৌন অপরাধ নির্মূলে জাতিসংঘের মহাসচিবের যথাযথ পদক্ষেপের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ভিকটিম সাপোর্ট ফান্ডে ১ লাখ ডলার প্রতীকী চাঁদার ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সর্বোচ্চসংখ্যক সেনা সদস্য ও পুলিশ সদস্য নিয়োগকারী হিসেবে আমরা যৌন নির্যাতন ও অপরাধ বন্ধের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করি। এ অভিযোগে আমাদের অবস্থান হচ্ছে জিরো টলারেন্স।
প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার জাতিসংঘ সদর দফতরে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে যৌন নির্যাতন ও অপরাধ দমন শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
তিনি যৌন অপরাধ প্রতিরোধে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ সবসময় এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযোগের সঙ্গে জড়িতদের তাদের নিজ খরচে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের ভাতা বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগপূর্ব প্রশিক্ষণে যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে সুরক্ষাকে একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যৌন অপরাধের অভিযোগে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা কন্টিনজেন্ট কমান্ডারদের দেয়া হয়েছে। তারা মিশন এলাকায় যেকোন অভিযোগের তদন্ত ও বিচার করতে পারবে। বাংলাদেশী কোনো শান্তিরক্ষীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা মিশন এলাকার সর্বোচ্চ সিনিয়র কর্মকর্তার রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব এবং জনগণের ধর্ম, সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় শান্তিরক্ষা সহায়ক কার্যক্রমে অনুসরণীয় (টেন্ডসেটার) হয়ে উঠেছে। ১৩২ জন বীর সন্তানের আত্মত্যাগের মাধ্যমে শান্তিরক্ষার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সভাপতি মিরসলভ লাজকাক বক্তৃতা করেন।
এ ছাড়া ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নানিস্টো, উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট তাবরে ভাজকুয়েজ, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী হাইলেমারিয়াম ডেসালেগন বক্তৃতা করেন।
শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ
আরেক খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার অর্থনীতি ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার এবং শ্রমিকের অধিকারের সুরক্ষায় আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকারের কারণে আমরা অর্থনীতি ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে শ্রম অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি।’
গত সোমবার সন্ধ্যায় কনভেইন কনফারেন্স সেন্টারে গ্লোবাল ডিল ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক এ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের ফলোআপ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সুইডেনের সহায়তায় গ্লোবাল ডিল ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক উন্নয়নের কার্যক্রমের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হলে যথাযোগ্য চাকরির সংস্থান এবং শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সোশ্যাল ডায়ালগ এবং হারমোনিয়াস ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন্স প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় ‘বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম’ বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরএমজি খাতের শ্রম ইস্যুসমূহ সমাধানে কার্যকর ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। সম্প্রীতিপূর্ণ শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের শ্রম খাতে সামাজিক সংলাপে সহায়তার লক্ষ্যে সরকার, শ্রমিক নেতা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও মালিকদের সমন্বয়ে এই পরামর্শক পরিষদ গঠিত হয়েছে।
গত বছরের গ্লোবাল ডিল ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শ্রমিক পরিস্থিতির অগ্রগতি এবং এ ক্ষেত্রে সামাজিক সংলাপ জোরদারে ভবিষ্যত প্রচেষ্টার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফেন, আইএলও মহাপরিচালক গাই রেডার ও অর্গাানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) মহাসচিব অ্যাঞ্জেল গুররিও অনুষ্ঠান বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি গত পাঁচ বছরে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শ্রমিকদের উন্নত জীবন-জীবিকা এবং কর্মপরিবেশ ও তাদের উপার্জনের স্থিতি নিশ্চিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা শিল্প সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে কার্যকর সংলাপ, শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নয়ন এবং শ্রমবাজারের অংশীদারদের মধ্যে সমান সুযোগ সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
হাসিনা-মাহমুদ আব্বাস বৈঠক
অপর আরেক খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার এখানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আসা ফিলিস্তীনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বৈঠক করেন।
বৈঠকে দুই নেতা মিয়ানমারের সমস্যা এবং রোহিঙ্গা মুসলিম শরনার্থীদের বিষয়ে আলোচনা করেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে গ্রান্ড হায়াত হোটেলের নিজস্ব কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফিলিস্তীনের নেতার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তীনের সংকটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তীনের জনগণের পাশে থাকায় তাঁর অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করেন।
প্রেস সচিব বলেন, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি একটি দুর্যোগ।
শেখ হাসিনা বলেন, অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে বাংলাদেশে ৭ লাখ মিয়ানমারের শরনার্থী বসবাস করছে। যদিও মিয়ানমারকে তাদের এসব নাগরিকদের ফেরত নিয়ে যেতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
আগত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য তাঁর সরকার শরনার্থীদের রেজিন্ট্রেশন করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ