শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রোহিঙ্গাদের ২১৪ গ্রাম ধ্বংস করেছে মিয়ানমার সেনারা -এইচআরডব্লিউ

শীর্ষনিউজ ডেস্ক : নিউইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে ২১৪টি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। স্যাটেলাইটের ছবি পর্যালোচনা করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।

সংস্থাটি বলছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করছে এবং সেজন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এর নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব পাস করা দরকার। একই সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপর কিছু বিষয়ে অবরোধ আরোপের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। শীর্ষনিউজ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে আকাশ থেকে মৌসুমি মেঘ সরে যাবার কারণে স্যাটেলাইটের চিত্রগুলো বেশ পরিষ্কারভাবে এসেছে। সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে স্যাটেলাইট থেকে এ ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে আগে যা জানা গিয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যাপকতা উঠে এসেছে স্যাটেলাইটের সাম্প্রতিক ছবিগুলোতে। রাখাইনের মংদু এবং রাথেডং এলাকায় হাজার-হাজার বাড়িঘর ধ্বংসের চিহ্ন দেখা গেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেন, “রোহিঙ্গারা যাতে বাড়িঘরে ফিরতে না পারে সেজন্য বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা ছবিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ দেখা যাচ্ছে।” এর আগেও কয়েক দফা স্যাটেলাইটের ছবি পর্যালোচনা করে রাখাইনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যখন ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিচ্ছে, তখন জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন রোহিঙ্গারা রাখাইন অঞ্চল ছেড়ে কেন চলে যাচ্ছে সেটির কারণ তার জানা নেই।

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাঁর সঙ্গে বৈঠকেও মিয়ানমারের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

তিনি বলেছেন, জাতীয় স্থিতিশীলতায় মিয়ানমারের প্রচেষ্টার বিষয়টি বুঝতে পারে চীন এবং এ প্রচেষ্টায় সমর্থন রয়েছে চীনের। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

এতে বলা হয়, নিউ ইয়র্কে গুতেরাঁর সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমার ইস্যুতে চীনের অবস্থান পরিস্কার করে দিলেন ওয়াং ই।

এর আগেও চীন তার অবস্থান পরিস্কার করে দেয় রোহিঙ্গা ইস্যুতে। তারা জানিয়ে দিয়েছিল, রাখাইনে মিয়ানমার সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে যে তৎপরতা চালাচ্ছে তাতে চীনের সমর্থন রয়েছে।

এবার সরাসরি জাতিসংঘ মহাসচিবকে সেই কথাই জানিয়ে দেয়া হলো। এর আগে খবর প্রকাশ হয়েছিল যে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার প্রতিবাদে বিশ্ব সোচ্চার হয়ে উঠলে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যু উত্থাপনের দাবি জোরালে হলে মিয়ানমার দূতিয়ালি শুরু করে। তারা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে। নিরাপত্তা পরিষদের এ সদস্যদের তারা ম্যানেজ করার চেষ্টা করে, যাতে জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা হলে তাতে তারা বাধা দেয়। নিরাপত্তা পরিষদে শক্তিধর অবস্থানে রয়েছে চীন ও রাশিয়া। তারা কোনো একটি প্রস্তাবে ভেটো দিলেই তা আর আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই এ দুটি দেশকে হাতে নেয়ার চেষ্টা চালায় মিয়ানমার।

এছাড়া এ দুটি দেশ মিয়ানমারে বড় অংকের অর্থের অস্ত্র বিক্রি করে। ফলে তাদেরও এক্ষেত্রে স্বার্থ আছে। দৃশ্যত মিয়ানমারের সেই দুতিয়ালি কাজে লেগেছে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে গুতেরাঁকে চীনের অবস্থান পরিস্কারের মাধ্যমে। ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে সহিংসতার পর চার লাখ ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। তাদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে জাতিসংঘ তাকে জাতি নিধন বলে অভিহিত করেছে।

শর্ত ছাড়া মিয়ানমারকে বর্বরতা বন্ধের আহ্বান

বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো কোনো রকম শর্ত ছাড়া শিগগিরই রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা বন্ধ করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গত সোমবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব বরিস জনসন আয়োজিত এক সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। পরে হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।

সভায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, চীন, ডেনমার্কের প্রতিনিধি এবং মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপদেষ্টা উ থাং তুন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

শহিদুল হক বলেন, সভায় রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সেখানে বাংলাদেশ যে রোহিঙ্গাদের এভাবে আশ্রয় দিয়েছে এ ব্যাপারে বড় দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ভূয়সী প্রশংসা করেছে। মিয়ানমারকে তারা (বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা) বর্বরতা বন্ধ করতে বলেছে। একই সঙ্গে দ্রুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তারা।

শহিদুল হক বলেন, মিয়ানমারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা বলতে চাইছিলেন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াতে যেভাবে প্রচার হচ্ছে এটা আসলে ঠিক না। তখন সবাই বলেছেন আসলে বাস্তবতা কি এটা আমরা সবাই জানি। আপনি ওটা নিয়ে আলোচনা না করে এ সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় সেটা ফোকাস করেন।

বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং পুর্নবাসন করতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, এটা আর্ন্তজাতিক কমিউনিটির দাবি। এখনই বন্ধ করতে হবে কোনো রকম শর্ত ছাড়া।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ