আরাকান স্বাধীন করতে সামরিক ব্যবস্থা চাই
# মিয়ানমারের দূতাবাস ও জাতিসংঘ অফিসে স্মারকলিপি
স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর-কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর পৌছলে পুলিশ কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মিছিলের গতি রোধ করে। পরে সেখান থেকে ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃতে¦ একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। এরপর জাতিসংঘের ঢাকা অফিসেও স্মারকলিপি প্রদান করে তারা।
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, মাওলানা মুজিবুর রহমান পেশোয়ারী, মাওলানা হাকীম আব্দুল করীম, মাওলানা আজীজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা মুনীর হোসাইন কাসেমী ও মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী।
এর আগে গতকাল সোমবার সকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট সড়কে সমাবেশ করে হেফাজত। গত ১৫ই সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) জুম্মা নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ‘মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও’ করার ঘোষণা দেয় হেফাজত ইসলাম। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররমের সামনে জমায়েত হন। তারা বিভিন্ন ধরনের প্লেকার্ড বহন করে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্লোগানে মুখর ছিল পুরো এলাকা। সমাবেশ শেষে দুপুরের দিকে মিছিল নিয়ে কাইরাইলের দিকে যেতে থাকলে পুলিশ শান্তিনগরে তাদের আটকে দেয়। জনদুর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে মিয়ানমার দূতাবাসে প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ করলে হেফাজত নেতারা এতে রাজি হন। সময় কিছুক্ষণের জন্য সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী বলেন, ‘মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে নির্মম গণহত্যা চলছে তা ইতিহাসের সব বর্বরতা হার মানিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ধিক্কারের পরেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা তাদের নিষ্ঠুরতা বন্ধ করেনি। তাই রোহিঙ্গাদের রক্ষায় সরকারকে কূটনৈতিকভাবে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। কূটনৈতিক পথে সফলতা না এলে আরাকানকে স্বাধীন করার জন্য সামরিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে দেশের মানুষ সরকারের পাশে থাকবে।’
সমাবেশে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা খুব দ্রুত করতে হবে। অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দিয়ে এই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এদিকে হেফাজত ইসলামের পূর্বঘোষিত ‘মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও’ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা এ যাবত একাধিকবার বাংলাদেশের আকাশ সীমা লংঘন করেছে। সরকার এ বিষয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি প্রদর্শন করেছে।
মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্মম গণহত্যা বন্ধ না হলে আরাকান স্বাধীন করতে জিহাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।’
মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘সরকারকে এই গণহত্যার প্রতিবাদে বন্ধ করে দিতে হবে মিয়ানমার দূতাবাস। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যে বাংলাদেশি মুসলমানদের আনসারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য, ওষুধ, পানিসহ যাবতীয় বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে।’
মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘সন্ত্রাসী বাবার সন্ত্রাসী মেয়েই হচ্ছেন অং সান সু চি, তার বাবাও রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলিখেলা খেলে গেছেন। অং সান সু চির এই হোলিখেলা বন্ধ না হলে আরাকান স্বাধীন করতে এ দেশের মুসলমানেরা মিয়ানমার যেতে প্রস্তুত রয়েছে।’
মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী বলেন, ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ করতে না পারলে সরকার আমাদের অনুমতি দিক। আমরা এদেশের গণমানুষ দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে আরাকান স্বাধীন করতে জিহাদে যেতে প্রস্তুত আছি।’
মাওলানা মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি রাশিয়া, চীন ও ভারতকে ভয় করবেন না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এদেশের জনগণ আপনার সঙ্গে আছে।’