শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ধারাবাহিক উপন্যাস আরাকানের আকাশ

হারুন ইবনে শাহাদাত : ॥এগার॥
কক্সবাজারের নয়াপাড়ার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির। এখন মধ্যরাত। খোলা আকাশের নীচে মাদুর পেতে শুয়ে আছে নূর আল ইসলাম। ওর খুব বাবার কথা মনে পড়ছে। ভাই জায়েদ. চাচা. দাদা ওরা কেমন আছে খুব জানতে ইচ্ছে করছে। বাবার কোন খবর এত দিনেও কেউ দিতে পারেনি।
ভাই জায়েদের মতো একজনের গলাকাটা লাশ নাফ নদীতে দেখা গেছেএমন খবর ওরা শুনেছে। চাচা, চাচী, চাচাতো ভাইরা কোথায় আছে ওরা জানে না। বৃদ্ধ দাদা মসজিদের মাটি আকড়ে পড়ে আছেন। জমি-জমার অধিকাংশই ফুঙ্গিরা দখলে নিয়েছে।
বাড়ি ভিটে অনেক কষ্ট করে সিতাবের বাবা ধরে রেখেছেন, এই আশায় পরিবেশ স্বাভাবিক হলে নূররা ফিরে আসলে ফেরত দিবেন। দাদাকে অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশে আসতে, তিনি রাজি হননি। তার এক কথা নিজের জন্মভূমি ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না। মরতে হলে এই মাটিতেই মরবেন।
নূরের খুব ইচ্ছে করে দাদার হাত ধরে ওদের ছোট মসজিদটায় নামাজে যেতে। বাবার কোলে বসে গল্প করতে। ওর প্রিয় স্কুল স্কুলের বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে। সিতাবকে সে কিছুতেই ভুল পারে না।
নূর আকাশের দিকে তাকায়। এক টুকরা সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে। পাশে পূর্ণিমার চাঁদ। সে ভুলে যায় বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে একা একা শুয়ে আছে। সে মনের অজান্তেই হারিয়ে গেছে আরাকানের সুধারপাড়া গ্রামে।
তার মনে হয়, বাবার কোলে মাথা রেখে দাদার গল্প শুনছে- ‘এই আরাকান একদিন স্বাধীন ছিল। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জড়বাদী সব বিশ্বাসের মানুষ সুখে-শান্তি বসবাস করত..’
: ‘ভাইয়া।’ জায়েদার ডাকে চমকে উঠে নূর আল ইসলাম। সে বাস্তবে ফিরে আসে। তার সুখের স্বপ্ন ভেঙে যায়। বোনের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে: ‘ জায়েদা। এই চাঁদটা আমাদের সুধার পাড়ার চাঁদের মতোই তাই না?’
: ‘আকাশটাও।’ তাই না ভাইয়া।
: হ্্যা। মাটিটাও যদি এমন হতো। তাহলে বাবা,দাদা, চাচা, ভাইয়াদের, দেখতে পেতাম। সিতাব, শ্যাম, আলওলদের সাথে খেলাধুলা করার সুযোগ পেতাম। আকাশে চাঁদ তারাগুলো কেমন এক সাথে মিলে-মিশে আলো ছড়াচ্ছে। ছোট বড় কোন ভেদ-ভেদ নেই। মাটির মানুষরা এমন হলে, কতই না ভাল হতো, তাই না জায়েদা।’
: ঐ যে দেখ একটা তারা কেমন জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। মনে হয় আমাদেরকে দেখছে।
বোনের কথায় শত কষ্টের মাঝেও নূর আল ইসলাম হাসতে হাসতে হাসতে বোনের হাত ধরে তাবুর দিকে পা বাড়ায়।
জায়েদা বলে: ‘ভাইয়া মানুষ মরলে লাগি তাদের রাজ্যে চলে যায়? আমরা কি তারাদের রাজ্যে যাওয়ার আগে কোন দিন আরাকানে ফিরে যেতে পারবো না। বাবা, দাদা, ভাইয়া , চাচা-চাচীদের দেখতে পাব না।’  জায়েদার কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে যায় নূর আল ইসলাম। সে অপলক চোখে বোনের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। [সমাপ্ত]
     # লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ