শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

কোচিং বাণিজ্যের এপিঠ ওপিঠ

আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন : গত ২৫ জুলাই ১৭ দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকা দেখলাম শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় ঘোষণা দিলেন -" আইন করে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করে দিবেন।" উদ্যোগটি গুরত্বপূর্ণ ও প্রসংশনীয় বটে। কিন্তু আসলে কি বন্ধ করা সম্ভব? এ নিয়ে কিছু কথা। কোচিংকে সবাই বাণিজ্য বলছি আসলে কি বাণিজ্য? না কি কোচিংটা আমাদের প্রয়োজনেই শুরু হয়েছে। যখন শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব স্কুলে নিজ নিজ পাঠ আয়ত্ব করতে অক্ষম হতো তখনি আমাদের কাছে কাছে অথবা আমাদের চেয়ে বেশি শিক্ষিত লোকের দারস্ত হতো তাদের সন্তানকে পড়াটা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। অভিভাবকগণ টিচারের কাছে বসেও  থাকতো, বুঝিয়ে দেয়া শেষ হলে সন্তাকে নিয়ে আসতো। এভাবে কাচারীতে পড়ানো হতো অন্যদের বাচ্চার সাথে। এখন কাচারী নেই বিধায় ছোট ছোট রুম ভাড়া করে শিক্ষিত ছাত্র শিক্ষকরা তা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমানে এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? হ্যাঁ, এর প্রয়োজনীয়তা অনেক। কারণ আগেকার টিচারগণ আন্তরিকতা দিয়ে মানুষ তৈরীর জন্য পড়াতেন। আর টিচারের সম্মান ছিলো সবার উর্ধে। টিচারের সামনে চেয়ারম্যান মেম্বারগণ চেয়ারে বসতে ইতস্তত হতেন। আর এখন টিচারদেরকে হাতে মারেন, আইনে মারেন, হেনস্তা করেন, এমনকি চাকুরিচ্যুতও করেন। এই টিচারগণই আপনার সন্তানকে নিজ সন্তানের মতো পাঠদান করবেন? কেমন বেমানান মনে হয় না? পাঠকদের মধ্যে যাদের সন্তান স্কুল কলেজে পড়াশোনা করে তাদেরকে আপনি জিজ্ঞাসা করেছেন কি না জানিনা, করলে জানতে পারবেন ওরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো পড়া দিতে হয়না। তাদেরকে নিয়মিত পড়া দেয়া হয়না এবং পরের দিন তাদের থেকে পড়া নেয়া হয়না। অবশ্য সব প্রতিষ্ঠান না। এমনকি বছর শেষে দেখা যায় স্কুলে ও কলেজে তাদের সিলেবাসও শেষ হয় না। বরং যে মাস্টারকে বাসায় এনে টাকা দিয়ে কিংবা কোচিংয়ে পড়াচ্ছেন ঐ মাস্টারের পড়া রেডি করতে করতে বাচ্চারা হিমশিম খাচ্ছে। তাদের কাছে জবাবদিহি আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিলবাসও শেষ হয়। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা হলো -শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ পড়া হয়না বিধায় অন্য মাস্টারের প্রয়োজন হয়। যারা শিক্ষিত বেকার তারা এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে বাচ্চাদের ঘরের পাশে রুম ভাড়া করে লিখে দিলো "কোচিং সেন্টার"। গার্ডিয়ানরা ভাবলো বাসায় একজন মাস্টার রেখে ২০০০/ ৩০০০ টাকা না দিয়ে ১০০০ টাকায় অনেক বাচ্চার সাথে পড়ুক টাকা কম দিয়ে সারা যাবে ব্যস। ঐ শিক্ষিত বেকারদের চাকুরীও হচ্ছেনা, তারা কোচিং ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেও না। বরং নতুন করে যারা বেকারের তালিকায় যোগ হচ্ছে তারা এগুলোতে ফুলের চারার মতো পানি ঢালছে নিজেদের অস্তিত্ব টিকানোর জন্যে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং। এখানে যারা পড়ায় তারা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত বেকার। অনেক ছাত্র জানেইনা অতি সহজ প্রশ্নও হয় ভর্তি পরীক্ষায় হয়। তারা উদ্বেগ, উৎকন্ঠায় ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ জন্য সেখানে ভর্তিচ্ছুরা ভিড় করে।

 যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি সহায়তা কেন্দ্র খুলতেন হয়ত এটাও সৃষ্টি হতো না। আর তাই রেজাল্টের অপেক্ষার এ সময়টা কোচিংয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাসায় পড়বে না বিধায় অভিভাবকগণও পাঠিয়ে দেন বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের সাথে মিশলে জ্ঞান বাড়বে কমবেনা, এই ভেবে। অনেক কোচিং সেন্টার দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগের রাত্রি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ও করে থাকেন। তাহলে দেখলেন কোথাকার পানি কোথায় গড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া দেয়া নেয়ার কড়াকড়ি না থাকা, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি হওয়া এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াতে না পারাই কোচিং টিকে থাকার মূল। আইন করে বন্ধ করলে সবার বাসায় বাসায় গিয়ে হলেও প্রাইভেট পড়ানোর পক্ষে বেকার এবং অভিভাবক দু'পক্ষই গোপনে একমত থাকবেন। তাই যে কাজ করলে এমনিই বন্ধ হয়ে যাবে তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। না হয় যে পাখি গান করে তাকে এক ডাল থেকে তাড়িয়ে দিলে অন্য ডালে গিয়েও সে গান ধরবে, এটাই নিয়ম। আর কিছু অসাধু শিক্ষক আছেন অতি লোভে তাঁরাও কোচিংয়ের সাথে জড়িত। তাঁদের চিন্হিত করা জরুরী। এটাও অনেকটা ডাক্তারদের মতো হয়ে গেছে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলো কি বন্ধ করা যাবে?

লেখক : সাবেক অধ্যাপক

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ