বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ভারতে পাচার হয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ চামড়া

স্টাফ রিপোর্টার : ঈদুল আযহার দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে কুরবানি দেয়া গরু ও ছাগলের বিপুল পরিমাণ চামড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে চামড়ার দাম কম হওয়ায় নানা উপায়ে অবৈধভাবে এসব চামড়া পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা।

এবার ঈদের আগে সরকার কুরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় ও ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০-২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। অথচ ভারতে গরুর চামড়ার মান নিম্নমানের হলেও সেদেশে বর্তমানে প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার দাম প্রায় ৯০ টাকা, যা বাংলাদেশের নির্ধারিত দরের প্রায় দ্বিগুণ।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্ক্রিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান জানিয়েছেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্তসংখ্যক কুরবানির পশু জবাই হয়েছে। কিন্তু সে হিসেবে চামড়া প্রান্তিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের কাছে নেই।

তিনি জানান, তারা আগে থেকেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন। তাদের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। আর্থিক অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণে প্রান্তিক, পাইকারি ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

টিপু সুলতান বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সময়মতো টাকা না পাওয়ায়, সীমান্তবর্তী জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা ভারতে চামড়া বিক্রি ও পাচার করছেন। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে চামড়ার দাম কম হওয়ায় তারা নানা অবৈধ উপায়ে চামড়া কিনে নিচ্ছেন।

চামড়া ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, তারা ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা হলেও ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরসহ নানা অজুহাতে ট্যানারি মালিকরা টাকা পরিশোধ করছেন না। এ কারণে তারাও খুচরা ব্যবসায়ীদের টাকা দিতে পারছেন না। ফলে এবার লালবাগের পোস্তায় কাঁচা চামড়া বাজারে একশ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম চামড়া এসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে চামড়া ব্যবসায় অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ট্যানারি ব্যবসায়ীদের হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এসব চামড়ার অর্ধেকেরও বেশি আসে কুরবানির ঈদের সময়।

এদিকে ঈদুল আযহায় কুরবানির পশুর চামড়া বিদেশে পাচার রোধে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংক ঋণ প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) নেতারা।

গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক সাংবাদিক সম্মেলতে সংগঠনটির সভাপতি শাহীন আহমেদ এ আহ্বান জানান। প্রতি বছর ২০ শতাংশের মতো চামড়া পাচার হয় এমন তথ্য উপস্থাপন করে শাহীন বলেন, এ বছর চামড়া সংগ্রহ অভিযানে আমাদের একটু ধীরগতি হবে। কারণ সাভারে আমাদের স্থাপনাগুলো এখনও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। প্রতিবছর ২০ শতাংশের মতো চামড়া পাচার হয়ে থাকলেও এবার একটু বেশি আশঙ্কা করছি। এর কারণ আমরা চামড়ার মূল্য হিসেবে এ বছর আড়তদারদের তেমন অগ্রিম দিতে পারিনি। এ সুযোগটা পাচারকারীরা গ্রহণ করে নগদ অর্থ দিয়ে চামড়া ক্রয় করে সীমান্ত দিয়ে পাচার করতে পারে।

ব্যাংক ঋণের জন্য অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে সাধারণত ৪০০-৫০০ কোটি টাকা কুরবানির জন্য অগ্রিম দিয়ে থাকে। বিশেষ করে রাষ্ট্রয়াত্ত জনতা ব্যাংক থেকে গত বছর ২০০ কোটি টাকা অগ্রিম হিসেবে পেয়েছিলাম। কিন্তু এবছর খুব একটা অগ্রিম পাইনি। এর ফলে অনেক ট্যানারি মালিক চামড়া কিনতে পারবে না। সুতরাং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদানের অনুরোধ করবো। যা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছি। তাছাড়া গত ২০ বছরে কোনও ট্যানারি মালিকের ঋণখেলাপি হয়নি।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরও বলেন, হাজারিবাগ, পোস্তা ও সাভারে আস্তে আস্তে চামড়া জমতে শুরু করেছে। সেখানে লবন দেয়া হচ্ছে। আমরা সেখান থেকে লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ করবো। সরকারের বেঁধে দেয়া দাম অনুসরণ করেই চামড়া সংগ্রহ করবো। সে হিসেবে চামড়ার মূল্য ১১০০-১২০০ টাকা হবে। তাই দাম বৃদ্ধি বা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা কখনই সরাসরি চামড়া সংগ্রহ করি না। তবে এবছর আড়তদারদের অগ্রিম কোনও টাকা দিতে পারিনি।

তিনি বলেন, কুরবানিতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫০-৫৫ লাখ গরুর চামড়া ও ছাগল ও মহিষ মিলিয়ে ২০-১৫ লাখ পিস। যা আমরা সংগ্রহ করতে পারবো বলে মনে করি।

তিনি বলেন, এ বছর এপ্রিলে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর হওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। চলতি বছরে ৪০০ মিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল, হঠাৎ করে চামড়া শিল্প স্থানান্তরসহ বিভিন্ন কারণে মাত্র ২৩২ মিলিয়ন চামড়া রফতানি হয়েছে।

নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে কাঁচা চামড়া কেনার ঘোষণা দিয়ে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে চামড়া কেনা শুরু করবেন তারা। এজন্য আগামী একমাস যাতে চামড়া পাচার না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন টানারি ব্যবসায়ীরা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ