প্রধান বিচারপতি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন : খায়রুল
সংগ্রাম ডেস্ক : সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ‘ভ্রমাত্মক’ রায় আদালতের বিরাগ থেকেও হতে পারে। সংসদ ও সরকারের প্রতি বিরাগ থেকে যদি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এই রায় দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
কখনও কোনও বিচারপতি অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কিছু লিখতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তিনি বলেন, ‘যদি লেখেন, তাহলে তার শপথ ভেঙে যায়। আর শপথ ভঙ্গ হলে কী হতে পারে, তা আপনারা ভালোই জানেন। শপথে বলা হয়, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে আমি কিছু করব না। কিন্তু রায়ের পর্যবেক্ষণে যা বলা হয়েছে, তাতে অনুরাগ না হোক, বিরাগ তো বহন করছে।’
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় শোক দিবস, ষোড়শ সংশোধনী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নে রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
খায়রুল হক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি সবচেয়ে আপত্তিকর কথা বলেছেন সংসদকে অকার্যকর বলে। সংসদকে অকার্যকর বলা একজন জজের ভাষা হতে পারে না। জুডিশিয়াল ভাষা হতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের ভাষা হতে পারে না।’
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক বলেন, "আমরা জজ সাহেবেরা কোনোদিনই অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কিছু করবে না। রায়ে যদি কোনো অনুরাগ বা বিরাগ রিফ্লেক্ট করে, তাহলে হোয়াট ইজ দ্য কনসিকোয়েন্স অব দ্যট জাজমেন্ট। থিঙ্ক অ্যাবাউট ইট। আমার বলার কিছু নেই।"
তিনি বলেন, "যে জজসাহেব অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে... যদি আপনারা অনুরাগ বা বিরাগ বলে মনে করেন আপনারা... যেগুলো আমি বললাম, ‘পার্লামেন্ট ইজ ইমম্যাচিওর’, ‘ডেমোক্রেসি ইজ ইমম্যাচিওর’, ‘পার্লামেন্ট আমাদের ডাইরেকশন শোনেনি’, এই কথাগুলো যদি অনুরাগ বিরাগের মধ্যে চলে আসে তাহলে সেই জজ সাহেবের পজিশনটাই বা কী হবে? তিনি ওথ বাউন্ড থাকছেন কি না, সেটাও আপনারা বিচার-বিবেচনা করে দেখুন। আমি পয়েন্ট আউট করে দিলাম। ওথ ভঙ্গ হলে কি হতে পারে? আপনারা জানেন কী হতে পারে।”
আইন কমিশনের প্রধান হিসেবে খায়রুল হক নিজে এসব বিষয়ে কথা বলতে পারেন কিনা, এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ল’ কমিশনে চাকরি করি। ল’ কমিশন কিন্তু এমন এক প্রতিষ্ঠান, যেখানে আইন নিয়েই আমাদের গবেষণা। আইনকে মনিটর করাও আমাদের আরেকটা কাজ। সে কারণে এটা তো আমাদের মনিটরিং করতে হবে সেটা কারও পছন্দ হোক বা না হোক। ল’ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।’
এ রায়ে আট-নয়জন অ্যামিকাস কিউরির সাপোর্ট দেয়া প্রসঙ্গে খায়রুল হক বলেন, ‘‘এখন থেকে প্রায় ৪৮ বছর আগে আমি শিক্ষানবিস আইনজীবী ছিলাম। আমার সিনিয়র আমাকে বলেছিলেন, ‘যে দেবতা যে মন্ত্রে তুষ্ট, সেই দেবতাকে সেই মন্ত্রেই শুধাবা।’ আমি কী বলেছি? আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।’’ তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে ইস্যুর বাইরেও কিছু কথাবার্তা হয়েছে। সাধারণত প্রতিটি জিনিসের গ্রামার থাকে। আমাদের রায় লেখার মধ্যেও একটা গ্রামার আছে। যা আমরা ফলো করি।’
খায়রুল হক বলেন, ‘উনি (প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ১৫২ জন ঠিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। তাহলে উনারা (বিচারপতিরা) কি ঠিকভাবে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন নাকি। এক জায়গায় উনি বলেছেন, আমরা সংসদকে যে নির্দেশনা দিয়েছিলাম, সে নির্দেশনা সংসদ মানেনি। সংসদকে নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের নেই। সেই নির্দেশ যদি দিয়েও থাকে তাহলে তা মানতে সংসদ বাধ্য নয়। সংসদ হলো সার্বভৌম।’
সাবেক সচিব ওয়ালিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।