বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

আ’লীগ বন্যাদুর্গতদের পাশে না দাঁড়িয়ে রায় বাতিলে গণভবন-বঙ্গভবনে দৌড়ঝাঁপ করছে -বিএনপি

গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বন্যাদুর্গতদের পাশে না দাঁড়িয়ে গণভবন-বঙ্গভবনে দৌড়ঝাঁপ করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বানের পানিতে হাজার হাজার নারী শিশু ও সাধারণ মানুষ ডুবে যাচ্ছে, লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা, আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেই, খাবার নেই, আবার কোথাও কোথাও আশ্রয় কেন্দ্রও ডুবে যাচ্ছে, অনেক মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে অথচ আওয়ামী লীগের নেতারা বন্যাদুর্গতদের পাশে না দাঁড়িয়ে গণভবন-বঙ্গভবনে দৌড়ঝাঁপ করছেন। দায়সারা একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছেন। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
রিজভী বলেন, বন্যায় ভাসছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে ডুবে যাচ্ছে একের পর এক এলাকা। যমুনার পানি বৃদ্ধি সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২৭টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দিনাজপুরে রেলপথ ও মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ এবং ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামের টগরাই হাট এলাকার বড় পুলের পাড় সংলগ্ন রেলসেতু ধসে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নওগাঁ, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে ব্যাহত হয়েছে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ। কয়েকটি জেলায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় হু হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বন্যায় তিন দিনে নারী শিশুসহ ৫৮ জনের প্রাণহানি ঘটল। গণমাধমের খবর-দু’দিনের মধ্যে ১শ’ বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে যমুনার পানি বৃদ্ধি। বানের পানি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ধেয়ে আসছে ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলের দিকে। এতে বন্যার প্রভাব পড়তে পারে রাজধানী ঢাকাতেও। শুধু তাই নয় হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট , নেত্রকোণাসহ আরও কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বানের পানিতে হাজার হাজার নারী শিশু ও সাধারণ মানুষ ডুবে যাচ্ছে, লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা, আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেই, খাবার নেই, আবার কোথাও কোথাও আশ্রয়ও ডুবে যাচ্ছে, অনেক মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে অথচ আওয়ামী লীগের নেতারা বন্যাদুর্গতদের পাশে না দাঁড়িয়ে গণভবন-বঙ্গভবনে দৌড়ঝাঁপ করছেন। দায়সারা একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছেন।
 দেশে খাদ্যের কোন অভাব নেই, ত্রাণমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে রিজভী বলেন, মন্ত্রী বলছে কাদ্যের অভাব নেই্ অথচ সরকারের খাদ্যের গোডাউন শুণ্য। বানভাসীরা না পাচ্ছে আশ্রয়, না পাচ্ছে ত্রাণ। চারিদিকে খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে বানভাসীরা হাহাকার করছে। দেশের অধিকাংশ জেলা বন্যায় ডুবছে আর আওয়ামী নেতারা সুপ্রীম কোর্টের রায় নিয়ে অশ্রাব্য ধারাবর্ষণ করছেন। পানিবন্দী লাখ লাখ অসহায় মানুষের সঙ্গে যেন আওয়ামী লীগ উপহাস করছে। মূলত: এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিক থেকে দেশবাসীর দেশবাসীর দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার জন্যই তারা মূল সমস্যার বাইরে কথা বলছেন। বানবাসী মানুষের জন্য যেন সরকারের কিছুই করণীয় নেই। কারণ তারা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। তাই জনগণের প্রতি তাদের দরদ থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। আমি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ দেশের সকল বিত্তবানদের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আবারও আহবান জানাচ্ছি। আপনারা ডুবন্ত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান, তাদেরকে বাঁচান।
রিজভী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার ন্যায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক শুধু উদ্বেগের নয় ন্যায়বিচারের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার অশুভ অপচেষ্টারই অংশ। আওয়ামী লীগ যেভাবে জোর করে রায় পাল্টিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তা বিচারবিভাগের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপের সামিল। আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ম্যানুফ্যাকচার্ড জনমত তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি দলীয় এমপি’দের দ্বারা নির্বাচিত হলেও নির্বাচিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি প্রতিষ্ঠানটি একটা স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করে এবং তিনি তখন রাষ্ট্রের অভিভাবকে পরিণত হন, আওয়ামী লীগের নন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বৈঠক হতেই পারে, কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক কিভাবে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন ? তাহলে আওয়ামী লীগ সরকার কী তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ব্যবহার করছেন ? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের দলের সিদ্ধান্ত তাকে জানাতে যাওয়া ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করা, এটি রায়ে পরিবর্তন আনতে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে জনগণের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর নির্বাহী বিভাগের নগ্ন হস্তক্ষেপ। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে বিচারপতিদের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন, আবার বৈঠক করছেন, এটাকে দেশবাসী স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেন না। তারা বিচার ভিাগকে বিতর্কিত করতে নিজেদের ঘুম হারাম করে ফেলেছেন। এটি শুভ লক্ষণ নয়। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর রায় সংশোধন করতে আওয়ামী লীগের বলপ্রয়োগের দৃশ্য জনগণ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবে না। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জন্য স্বাধীনভাবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে পার্লামেন্ট গঠন সম্ভব হয়নি। এদেশে আর একক কর্তৃত্ববাদী শাসন, গণতন্ত্র হরণ আর বিরোধী দল ও মত নিধন চলতে দেয়া হবে না। আর ভোটারবিহীন বর্তমান পার্লামেন্ট ও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের উচ্চারণ কখনোই থামবে না।
রিজভী বলেন, আগামী ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার পর সরকার কর্তৃক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়েছে। নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে একজন সরকারী কর্মকর্তাকে বদলী এটি সম্পূণরূপে আইনের বরখেলাপ এবং ভোট কারচুপির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই তা করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডার’রা প্রতিপক্ষের পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছে। পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্য এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডার’রা প্রতিদিন বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
এসময় রিজভী আহমেদ ছাত্রদল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনি, গফরগাঁও উপজেলার টেংগাবর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আমান মেম্বারকে না পেয়ে তার ছেলে ইব্রাহিম পৌর কৃষক দলের সভাপতি নাসির উদ্দিন, শ্রমিক দলের যুগ্ম আহবায়ক মো: শহীদকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এছাড়া, ফেনী পৌরসভার বিরিঞ্চি এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক বিএনপি নেতা আবুল কালাম, মাদু মিয়া, মো: দুলাল এবং সামছু চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট, ধর্মপুর ইউনিয়নের মজলিসপুর বাজারে ছাত্রদল নেতা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা জানান। রিজভী বলেন, সারাদেশেই এভাবে বিএনপির যেকোন শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে সরকারের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী ও আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তা পন্ড করে দিচ্ছে। দেশব্যাপী বিএনপি’র সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের সাফল্যে ইর্ষান্বিত হয়ে সরকার ধারাবাহিকভাবে বিএনপি’র অনুষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাচ্ছে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কারান্তরীণের মাধ্যমে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। রিজভী পটুয়াখালী জেলা বিএনপি অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর, বরিশাল জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি এ্যাডভোকেট পারভেজ আকন বিপ্লব এর বাসায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মোটর শোভাযাত্রাসহকারে গিয়ে বাসা ভাঙচুর, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে স্বেচছাসেক দলের সাবেক সদস্য তরিকুল ইসলাম পলাশ, জাফর আহম্মেদ, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য মোঃ সুজন, মোঃ শিমুল, স্বেচ্ছাসেবক দল কামরাঙ্গির চর থানা আহবায়ক কমিটির সদস্য ফিরোজ আলম, জাকির হোসেন ও মোঃ ইসলামসহ ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে, গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ