শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বরিশাল-১ আসন তৃণমূলের রাজনীতি

এসএম শামীম, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি চায় তাদের হারানো দূর্গ ফিরে পেতে এবং আওয়ামীলীগ চায় তাদের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি প্রায় ১৬ মাস। তারপরও ভোট সামনে রেখে সরগরম হয়ে পরেছে নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-১ আসনের (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া)। এখানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নেমে পড়েছেন গনসংযোগে। জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থীর নাম বর্তমানে শোনা না গেলেও নির্বাচনের সময় তারা প্রার্থীতা ঘোষনা করতে পারে। বর্তমানে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কৌশলে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এলাকা গুলোতে গনসংযোগ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। চলছে দলীয় গ্রুপিং ও লবিং। প্রত্যেকটি ভোটারের মধ্যেই চলছে নানা আলোচনা। কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। এখানে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে, সাবেক মন্ত্রী কৃষক কুলের নয়নমনি শহীদ আঃ রব সেরনিয়াবাতের পুত্র, সাবেক চীফ হুইপ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বরিশাল জেলা আ’লীগের সভাপতি, বরিশাল-১ আসনের বর্তমান সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এই আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। এখানে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের প্রচারনা শুরু করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে দলীয় কোন্দল ও মামলার কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় কোন্দল মেটাতে না পারলে আসনটি হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে বিএনপি’র এমনটাই ধারণা করছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। আগৈলঝাড়া উপজেলায় বড় দুই দলের কমিটি না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে দলীয় কার্যক্রম।
বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর  থেকে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরে। আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-১ আসনে চারদলীয় ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। নির্বাচনের পর তার সমর্থিত আ. লতিফ মোল্লাকে আহ্বায়ক করে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গঠনের পর পরই অপর কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান সমর্থিত নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পরে। এরপর ২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর গৈলায় আঃ লতিফ মোল্লার বাড়ি দলীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে আঃ লতিফ মোল্লা সভাপতি ও আফজাল শিকদারকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে কমিটি গঠিত হয়। এরপর থেকে বিএনপি’র স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং সৃষ্টি হয় এবং দুই ধারায় বিভক্ত বিএনপি’র রাজনীতির বলয় প্রবল আকার ধারণ করে। দলীয় বিভক্তির কারণে হামলা-সংঘর্ষের আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় বিএনপি ২০১০ সালের ৯ অক্টোবর আগৈলঝাড়া বিএনপি’র দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। বিএনপি’র অপর কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুস সমর্থিত উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন লাল্টুকে আহ্বায়ক করে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি’র পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান সমর্থিত নেতাকর্মীরা প্রত্যাখ্যান করে। পরে আফজাল শিকদারকে সভাপতি ও আবুল হোসেন লাল্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি’র আরেকটি কমিটি ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ও সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান অনুমোদন করেন। বরিশালের বিভিন্ন আঞ্চলিক পত্রিকায় ওই কমিটি প্রকাশ হলে আগৈলঝাড়ায় বিএনপি’র মধ্যে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুস  সোবহান সমর্থিত নেতা ওই কমিটির সভাপতি আফজাল শিকদার প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান কেন্দ্রে অভিযোগ দেয়ায় কেন্দ্রীয় বিএনপি বরিশাল জেলা উত্তর সভাপতি ও সম্পাদককে চিঠি দিয়ে নতুন কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়। গ্রুপিং ও পুলিশের সভা-সমাবেশের অনুমতি না থাকার কারণে উপজেলা বিএনপি উপজেলা সদরে কোন কর্মসূচী পালন করতে পারছে না বলে একাধিক নেতা-কর্মীরা জানান। বিএনপি’র তিন নেতা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসন থেকে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে মনোয়ন চাইবেন। এরা হলেন- জেলা উত্তর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান এবং সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন। সংস্কারপন্থী বিএনপি নেতা স্বপন মনোনয়ন পেলে তার বিরোধিতা করতে পারে অপর দুই নেতাসহ বরিশালের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তিনি যদি এই গ্রুপিং-এর অবসান না করেন তাহলে এ আসনে বিএনপি পরাজয় হবে বলে তৃণমূল ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা করছেন।
অন্যদিকে আ’লীগ দলীয় সূত্র জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ইউসুফ মোল্লার মৃত্যুর পর থেকেই কমিটি শূন্য হয়ে পরে দলটি।
এর আগে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করায় দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের কারণে দলের সাধারণ সম্পাদক যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রীকে ২০১৪ সালের ৮ মার্চ দল থেকে বহিস্কার করা হয়। সূত্রগুলো আরো জানায়, পদ পদবী দিতে মাঠে ঘাটে আলোচিত অনেক নেতাকে দীর্ঘদিন যাবত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন আবুল হাসানাত আব্দুলাহ স্বয়ং নিজেই। সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য এক নেতার হাতেই নেতৃত্ব তুলে দিতে চান বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০০১ সালে ইউসুফ মোল্লাকে প্রধান করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর আগৈলঝাড়া উপজেলা আ’লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কাউন্সিল শেষে ইউসুফ মোল্লাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়। তবে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হওয়ায় এবং সভাপতির মৃত্যু ও সম্পাদকের বহিষ্কারে কমিটি শূন্য হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ।
এই উপজেলায় ২টি গাড়ি পোড়া মামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা আসামী হওয়ায় দলীয় কর্মসূচী পালন করতে পারেনি। এসব মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে। এ কারণে কিছুটা আন্দোলন বিমুখ হয়ে পড়া দলটি সাংগঠনিকভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান তার এলাকায় বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের নিয়ে পঞ্চাশ হাজার নতুন সদস্যর র্টাগেট নিয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রতিটি ইউনিয়নেই নতুন সদস্যর কার্যক্রম নিয়ে নেতা-কর্মীরা এখন অনেকটা উজ্জীবিত। সর্বপরি এই আসনটি উদ্ধারে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিং অবসানের আহবান জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ